পায়ের হাটুতে ব্যাথা কারণ
বাংলাদেশের মানুষের একটি বড় রোগ হল হাঁটুর ব্যথা। বিভিন্ন আঘাত জনিত কারণে, ওজন বৃদ্ধি এবং বয়স বৃদ্ধি কারণে হাঁটুর ব্যথা হয়ে থাকে। তাছাড়া যারা প্রচুর শারীরিক ক্রিয়াকলাপ করেন তাদেরও হাটু ব্যাথা হতে পারে। তাই আমাদের এই পোস্টের আলোচ্য বিষয় হলো হাঁটুতে ব্যাথা হওয়ার কারণ, হাঁটু ব্যথার চিকিৎসা পদ্ধতি, হাটুর ব্যাথা সারানোর ঘরোয়া উপায়, হাটুর ব্যাথা সারানোর খাবার, হাটুর ব্যাথা সারানোর ব্যায়াম, হাটু ফোলার কারণ, হাটু ফোলা কমানোর উপায়, হাটু ব্যাথার ডাক্তার।
আমরা আজকে এই পোস্টে আলোচনা করব পায়ের হাটুতে ব্যাথা কারণ
হাঁটুতে ব্যাথা হওয়ার কারণ
হাটুতে ব্যাথা হওয়ার কারণ হলো অস্থিসন্ধির ক্ষয়,আঘাত জনিত কারন এবং অস্টিওআর্থারাইসিস। হাঁটু মানবদেহের ওজন বহন করে থাকে তাই অনেক সময় হাঁটুতে ব্যথা হয়ে থাকে। হাটুতে ব্যথা শুধু বয়স্কদেরই হয় না অল্প বয়স্ক লোকদেরও হাঁটুতে ব্যাথা হয়ে থাকে। হাঁটুর ব্যথার জন্য সাধারণত অস্টিওআর্থারাইটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, গাউট, সিউডোগআউট এবং সেপটিক আর্থ্রাইটিস এই আর্থ্রাইটিসগুলো হাটুর ব্যথার জন্যও দায়ী। হাঁটুর ব্যথা হলে অবহেলা করা যাবে না ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ডাক্তারের চিকিৎসা নিতে হবে। অনেক কারণে হাঁটু ব্যাথা হতে পারে নিম্নে তা আলোচনা করা হলো:-
- বয়সজনিত অস্থি সন্ধির ক্ষয় ও আর সি ও অস্টিওআর্থাইসিস।
- হাঁটুর লিগামেন্টে আঘাত পেলে হাটু ব্যথা হতে পারে
- অস্থিসন্ধির মধ্যে দূরত্ব কমে যাওয়া
- অতিরিক্ত শারীরীক ওজন বাড়লে
- বাতসহ নানা রোগের কারণে হাঁটু ব্যথা হতে পারে
- রোগীর হাটু ফুলে যাওয়া এবং রোগীর হাঁটুতে ব্যথা হওয়া
- হাঁটুর অস্থিসন্ধি শক্ত হয়ে যাওয়া এবং হাঁটু লাল বর্ণ ধারণ করা
- হাঁটু ব্যাথার আর একটা উপসর্গ হলো হাঁটুতে গরম অনুভব হওয়া
হাঁটু ব্যথার চিকিৎসা পদ্ধতি
- হাঁটু ব্যাথার একটা চিকিৎসা হলো গরম বা ঠান্ডা সেঁক দেওয়া। হাঁটু ব্যথা হলে গরম বা ঠান্ডা সেঁক দিলে আরাম অনুভূত হতে পারে। তবে কখন ও কোন প্রক্রিয়ায় গরম বা ঠান্ডা সেঁক দিতে হবে তা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী দিতে হবে।
- দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা বা আর্থাইটিশ জনিত ব্যথা হলে সবচেয়ে কার্যকর চিকিৎসা হলো গরম পানির সেট দেওয়া। হাঁটু ব্যাথা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ব্যাথানাশক ওষুধ খেতে হবে পাশাপাশি ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে তাহলে হাঁটুর ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
- হাঁটুর হারের ক্ষয় হলে হাঁটুতে ব্যাথা হতে পারে এর জন্য হাঁটুতে অস্ত্রপ্রচারেরও প্রয়োজন হতে পারে। হাঁটুর ব্যথা কমানোর জন্য অনেক সময় হাঁটুতে ইনজেকশন দেওয়া হয় অথবা অনেক সময় হাঁটুর প্রতিস্থাপন করতে হয় শেষ চিকিৎসা হিসেবে।হাঁটুর ব্যথার অন্য আরেকটি কারণ হলো শরীরের অতিরিক্ত ওজন এই অতিরিক্ত ওজন না কমালে বা দৈনন্দিন জীবনধারার পরিবর্তন না হলে হাঁটুর ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন।
হাটুর ব্যাথা সারানোর ঘরোয়া উপায়
হাঁটুর ব্যথা কমানোর জন্য বেশ কয়েকটি ঘরোয়া পদ্ধতি রয়েছে যার নিম্নে আলোচনা করা হলো।
- হাঁটু ব্যথা হওয়ার জন্য প্রধান একটি কারণ শরীরের অতিরিক্ত ওজন। তাই অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে হাঁটু ব্যথা কমানো সম্ভব।
- নিয়মিত ব্যায়াম করলে হাঁটুর ব্যথা দূর হয়। হাঁটুর পেশিকে প্রভাবিত করে এরকম ব্যায়াম করা উচিত যেমন সাইকেলিং, সাঁতার কাটা, মৃদু স্ট্রেচিং ব্যাম করা ইত্যাদি ।
- হাটুর ব্যথা কমানোর একটি ঘরোয়া উপায় হল আক্রান্ত স্থানে বরফের ব্যবহার। পাতলা একটি তোয়ালে ভিতর এক টুকরো বরফ নিয়ে আক্রান্ত স্থানে ৩০ মিনিট ঘোষুণ। এইভাবে দিনে দুই থেকে তিনবার ব্যথা স্থানে ঘষলে অনেকটাই ব্যথা কমে যাবে।
- অ্যাপেল সিডার ভিনেগার দিয়ে হাঁটুর ব্যথা কমানো সম্ভব। অ্যাপেল সিডার ভিনেগার হাঁটুর ব্যথা নিরাময়ের জন্য বেশ কাজ করে থাকে। এক গ্লাস পানিতে দুই টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে দিনে কয়েকবার পান করলে অথবা অলিভ অয়েলের সঙ্গে এটা মিশিয়ে আক্রান্ত স্থানে মেসেজ করলে হাঁটুর ব্যথা দূর হয় আবার পানির মধ্যে আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে তিরিশ মিনিট পর হাঁটুর ব্যথা স্থানে লাগালে হাঁটুর ব্যথা দূর হয়।
- হাঁটুর ব্যথা দূর করার আরেকটি ঘরোয়া উপায় হল মরিচের গুড়া। এক কাপ হালকা গরম অলিভ অয়েলের সঙ্গে দুই টেবিল চামচ মরিচের গুঁড়া মিশিয়ে হাঁটুতে মেসেজ করলে হাঁটু ব্যথা ভালো হয়। আর্থাইটিসের ব্যথায় যারা ভুগছেন তারাও অনেকটা আরাম পায়। সপ্তাহে দুদিন এটা ব্যবহার করলে হাঁটুর ব্যথা অনেকটাই ভালো হয়ে যায়।
- হাঁটুর ব্যথা কমানোর আরেকটা উপায় হল আদার ব্যবহার। কিছু আদা থেতলে নিয়ে পানির মধ্যে দশ মিনিট ধরে সিদ্ধ করতে হবে তারপর তার সাথে সামান্য মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে নিতে হবে এবং দিনে দুই থেকে তিনবার এই মিশ্রণটি পান করলে হাঁটুর ব্যথা অনেকটা সেরে যাবে।
- হলুদ কে বলা হয় প্রাকৃতিক এন্টিবায়োটিক।এই হলুদ দিয়ে হাঁটুর ব্যথা কমানো সম্ভব। অর্গানিক হলুদ নিয়ে পানির মধ্যে ১০ মিনিট ভালোভাবে ফুটিয়ে নেই তারপর এর সাথে মধু মিশিয়ে পান করলে হাঁটুর ব্যথা দূর হয়ে যাবে আবার এক কাপ দুধের সঙ্গে হলুদ ও আদা মিশিয়ে খেলে হাঁটুর ব্যথা দূর হয়ে যায়। তবে হাটু ব্যথার জন্য নিয়মিত ওষুধ খেলে হলুদ খাওয়া যাবে না।
- গরম সেক দেওয়ার মাধ্যমে হাঁটুর ব্যথা কমানো যেতে পারে।
হাটুর ব্যাথা সারানোর খাবার
শরীরের ব্যথা যন্ত্রণা দূরে রাখতে রসুনের ঝুড়ি নেই। রসুন খাবারের স্বাদের পরিবর্তন আনে ফলের খাবারটা সুস্বাদু হয়। রসুনে রয়েছে অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি উপাদান যা শরীরের পেশি সবল রাখতে সাহায্য করে।রসুন গাঁটের ব্যথা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। গরম অথবা কাঁচা দুই ভাবেই রসুন খাওয়া যায়। দুইভাবেই রসুন খেলে উপকার পাওয়া যায়।
কথায় বলে ‘আদা সকল রোগ নিরাময়ে দাদা’। যার অর্থ আমাদের শরীরে সব রোগ নিরাময়ের জন্য আদা যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে সক্ষম। আদায় রয়েছে পটাশিয়াম, আয়রণ, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালশিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়াম, জিংক, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন এ, বি৬, ই ও সি এবং অ্যান্টি–ব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট ও অ্যান্টি–ইনফ্লামেটরি এজেন্ট বিদ্যমান। হাঁটুর ব্যাথা কমাতে আদা দারুন উপকারী একটি মসলা। আদর বহু স্বাস্থ্য গুণ রয়েছে । সর্দি কাশি কমানোর থেকে শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা কমাতে আদা খুবই কার্যকরী। রান্নায় ব্যবহার করা ছাড়াও চায়ে আদা দিয়ে খাওয়া যায়।
বাদাম একটি মুখরোচক খাদ্য। এটি খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি এর রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। চিনাবাদাম, কাজুবাদাম, কাঠবাদাম, পেস্তাবাদামসহ সব ধরনের বাদামে অনেক উপাদান আছে, যা শরীরের জন্য উপকারী। চিনাবাদাম, কাজুবাদাম, কাঠবাদাম, পেস্তাবাদামে রয়েছে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং ওমেগা ৩ বেশি পরিমানে যা শরীরের জন্য অনেক উপকারী।রোজ সকালে কাঠবাদাম ভিজে খাওয়া ভালো কিন্তু একটু কাজ বাদাম খেলে হবে না এর সাথে আখরোট এবং অন্যান্য বাদামও খেতে হবে । তাছাড়া চিয়াসিন, ফ্ল্যাক্স সিডসের এর মত কিছু বীজ খেলে হাঁটুর ব্যথা থাকবে নিয়ন্ত্রণে।