জরায়ুর মুখ খোলার ঘরোয়া উপায়
গর্ভধারণ হলো এমন একটি পর্যায় বা সময়সীমা যখন এক বা একাধিক ভ্রূণ মাতৃগর্ভ বা জরায়ুতে বিকাশ লাভ করে। বহু গর্ভধারণ বলতে একাধিক বাচ্চার জন্মলাভ বুঝায় যেমন যমজ। গর্ভধারণের পরে কিছু নিয়মকানুন মেনে চললে ডেলিভারির সময় সহজেই জরায়ু মুখ খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে এটা অনেকেরই অজানা। তাই আমাদের আজকের এই পোষ্টের আলোচ্য বিষয় হলো জরায়ুর মুখ খোলার ঘরোয়া উপায়,জরায়ু মুখ খোলার লক্ষণ,জরায়ু মুখ না খোলার কারণ,জরায়ুর মুখ খুলতে কত সময় লাগে,জরায়ুর মুখ ছোট হলে করনীয়,গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশনের লক্ষণ এবং গর্ভাবস্থায় প্রস্রাবে ইনফেকশন কেন হয়।
আমরা আজকে এই পোস্টে আলোচনা করব জরায়ুর মুখ খোলার ঘরোয়া উপায়
জরায়ুর মুখ খোলার ঘরোয়া উপায়
গর্ভধারণের পরে অধিকাংশ নারীরাই চাই যেন বাচ্চা নরমাল ডেলিভারিতে জন্মগ্রহণ করে। আর এই নরমাল ডেলিভারি হওয়ার জন্য অবশ্যই জরায়ুর মুখ খোলাটা প্রয়োজন। যদি গর্ভাবস্থায় প্রথম দিক থেকে কিছু নিয়মকানুন মেনে চলা যায়। তাহলে নরমাল ডেলিভারির সময় জরায়ুর মুখ খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
নরমাল ডেলিভারি হওয়ার জন্য গর্ভাবস্থায় ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই জরুরী। কারণ গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে অনেক সময় জরায়ুর মুখ খুলতে সমস্যা হয় যার ফলে পরবর্তীতে সিজার করার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
১.ফুল টাইম প্রেগনেন্সির সময় নরমাল ডেলিভারির জন্য পেন উঠলে জরায়ুর মুখ খোলার জন্য হালকা ব্যায়াম করা যেতে পারে। এতে করে জরায়ুর মুখ দ্রুত খুলে যেতে পারে।
২.নরমাল ডেলিভারির জন্য পেইন উঠলে জরায়ুর মুখ দ্রুত খোলার জন্য ঝাল জাতীয় খাবার খাওয়া যেতে পারে। কারণ জাল জাতীয় খাবার জরায়ুকে প্রসারিত করতে সাহায্য করে। যার ফলে জরায়ুর মুখ দ্রুত খুলে যেতে পারে।
৩.নরমাল ডেলিভারির পেইন উঠলে জরায়ুর মুখ খোলার জন্য ব্রেস্টে আলতোভাবে চাপ দেওয়া যেতে পারে। ব্রেস্টে চাপ দেওয়ার কারণে জরায়ু প্রসারিত হয়। যার ফলে জরায়ু মুখ খুলে যেতে পারে।
৪.নরমাল ডেলিভারির পেইন উঠলে অতিরিক্ত ভয় বা মানসিক টেনশন করলে অনেক সময় জরায়ুর মুখ খোলে না। তাই জরায়ুর মুখ খোলার জন্য মানসিক টেনশন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৫.নরমাল ডেলিভারির জন্য জরায়ুর মুখ খোলার জন্য হাটাহাটি করা যেতে পারে বা আলতো করে পেটে চাপ দেওয়া যেতে পারে। এতে করে ধরার মুখ দ্রুত খুলে যেতে পারে।
৬.অনেক সময় নরমাল ডেলিভারির সময় যদি জরায়ুর মুখ না খোলে তাহলে সহবাস করা যেতে পারে। কারণ স্বামী স্ত্রীর সহবাসের মাধ্যমে জরার মুখ প্রসারিত হয়ে যার ফলে দ্রুত জরায়ুর মুখ খুলে যেতে পারে।
৭.নরমাল ডেলিভারির সময় দ্রুত জরায়ুর মুখ খোলার জন্য খেজুর খাওয়া যেতে পারে। এছাড়াও গর্ভাবস্থার শুরু থেকে খেজুর নিয়মিত খাওয়া হয়। তাহলে ডেলিভারির সময় সহজে জড়ার মুখ ফুলে যেতে পারে।
এছাড়াও ডেলিভারি পেইন উঠলে যদি জরায়ুর মুখ না খুলে তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। অনেক সময় কিছু ব্যথার ইনজেকশন বা জরায়ুর মুখ খোলার ইনজেকশন দিলে দ্রুত জরায়ুর খুলে যেতে পারে।
জরায়ু মুখ খোলার লক্ষণ
ফুল টাইম প্রেগন্যান্সি হয়ে গেলে অনেক সময় নরমাল ডেলিভারির জন্য ডেলিভারি পেইন ওঠে। আর এ সময় শরীরে কিছু লক্ষণ দেখা দেয় যে লক্ষণ গুলো দেখা দিলে বোঝা যায় যে নরমাল ডেলিভারি হবে। নিচে লক্ষণগুলো দেওয়া হলঃ
১.জরায়ু ঘন ঘন সংকুচিত বা প্রসারিত হয় ।
২.সাধারণত জরায়ুর মুখ খুলে গেলে পেটের বাচ্চা নিচের দিকে চাপ দেয়। যার কারণে বাচ্চা নিচের দিকে নেমে যায়।
৩.অতিরিক্ত সাদা স্রাব হওয়া।
৪.সাদা স্রাবের সাথে রক্ত বা ময়লা যাওয়া।
৫.পানি ভেঙ্গে যাওয়া।
৬.পেটে পিঠে বা কোমরে থেকে থেকে তীব্র ব্যথা হওয়া।
৭.ব্রেস্ট বা স্তন ফুলে যাওয়া বা শরীরে অস্বস্তি লাগা।
উপরোক্ত লক্ষণ গুলি দেখা দিলে নরমাল ডেলিভারি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই উপরোক্তর লক্ষণ গুলো দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকে শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
জরায়ু মুখ না খোলার কারণ
নরমাল ডেলিভারির জন্য জরায়ুর মুখ খোলাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । কারণ জরায়ুর মুখ না খুললে নরমাল ডেলিভারি সম্ভব নয়। কিন্তু অনেক সময় ডেলিভারি পেইন উঠলেও জরায়ুর মুখ খোলে না। মূলত কিছু কিছু কারণে নরমাল ডেলিভারির মুখ খোলে না। নিচে কারণগুলো দেওয়া হলোঃ
১.জরায়ুতে যদি ক্ষত থাকে। তাহলে নরমাল ডেলিভারির সময় জরায়ুর মুখ খোলার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে।
২.জরায়ুতে যদি টিউমার থাকে। তাহলে জরায়ুর মুখ খোলে না।
৩.জরায়ু মুখ যদি ছোট থাকে। তাহলে নরমাল ডেলিভারির সময় জরায়ুর মুখ খোলে না।
৪.পূর্বে যদি জরায়ুর কোন ধরনের অপারেশন করা থাকে। তাহলে নরমাল ডেলিভারির সময় জরায়ুর মুখ খোলে না।
৫.জরায়ু বা জরায়ুর মুখ যদি দুর্বল থাকে। তাহলে অনেক সময় নরমাল ডেলিভারির জন্য জরায়ুর মুখ খোলে না।
উপরোক্ত কারণ গুলি গর্ভাবস্থায় দেখা দিলে ডেলিভারির সময় জরায়ুর মুখ খোলার সম্ভাবনা খুব কম থাকে।
আরো পড়ুন গর্ভাবস্থায় জরায়ুর মুখ খোলার দোয়া
জরায়ুর মুখ খুলতে কত সময় লাগে
নরমাল ডেলিভারি এর জন্য পেইন উঠলে জরায়ুর মুখ খুলতে ঠিক কত সময় লাগে সেটা সঠিকভাবে বলা যায় না। তবে নরমাল ডেলিভারির পেইন উঠলে জরায়ুর মুখ খুলতে ৬ থেকে ১২ ঘন্টা সময় লাগতে পারে। অনেক সময় শারীরিক সুস্থতার উপরে নির্ভর করে জরায়ুর মুখ খোলা। যার শারীরিক কন্ডিশন যত ভালো তার জরায়ুর মুখ খুলতে তত কম সময় নেয়।
জরায়ুর মুখ ছোট হলে করনীয়
বর্তমানে অনেক নারীদেরই জরায়ুর মুখ ছোট হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে। জরায়ুর মুখ ছোট হলে একমাত্র করণীয় হলো চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া। কারণ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করলে পরবর্তীতে এই জরায়ু স্বাভাবিক হতে পারে।এছাড়াও প্রতিদিন শারীরিক চর্চা বা ব্যায়াম করা যেতে পারে। এতে করে জরায়ু স্বাভাবিক হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় প্রস্রাবে ইনফেকশন কেন হয়
গর্ভাবস্থায় শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। যার কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় । এ সময় অনেক নারীরা প্রসাবে ইনফেকশনে সমস্যায় ভুগে থাকেন। কারণ গর্ভাবস্থায় জরায়ু প্রসারিত হওয়ার কারণে মূত্রথলির উপরে চাপ পরে। যার কারণে সেখানে ব্যাকটেরিয়া জমে যায়। ফলে প্রসাবে ইনফেকশনের সমস্যা দেখা দেয়।এছাড়াও গর্ভাবস্থায় পানি কম খেলে প্রস্রাবে ইনফেকশনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
গর্ভাবস্থায় নারীদের শরীরে প্রজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। যার ফলে মূত্রথলি শিথিল হয়ে যেতে পারে। অনেক সময় শিথিল হয়ে যাওয়ার কারণে সঠিক পরিমাণে প্রসাব হয় না । যার কারণে প্রসাবে ইনফেকশনের সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় যদি ডায়াবেটিসের সমস্যা দেখা দেয়। তাহলেও প্রসাবে ইনফেকশনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশনের লক্ষণ
প্রায় প্রত্যেক নারীর গর্ভাবস্থায় ইউরিন এ ইনফেকশনের সমস্যা দেখা দেয়। এর একমাত্র প্রধান কারণ হলো অসচেতনতা। গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশন দেখা দিলে শরীরে কিছু লক্ষণ দেখা দেয় যে লক্ষণ গুলো দেখলে বুঝতে হবে ইউরিন ইনফেকশন হয়েছে। তাই নিচে লক্ষণগুলো দেওয়া হলঃ
১.ঘন ঘন প্রসাব হাওয়া।
২.প্রসাবের সময় জ্বালাপোড়া হাওয়া।
৩.প্রসাবের রং পরিবর্তিত হওয়া।
৪.তলপেটে ব্যথা হওয়া।
৫.অতিরিক্ত সাদা স্রাব যাওয়া।
৬.প্রসাবের সময় দুর্গন্ধ হওয়া।
৭.প্রচন্ড জ্বর হওয়া।
৮.প্রসাব ক্লিয়ার না হওয়া।
৯.বারবার প্রস্রাবের বেগ আসা।
১০.সহবাসের সময় অতিরিক্ত ব্যথা অনুভূত হওয়া।
১১.প্রসাবের সময় ব্যাথা হওয়া।
১২.প্রস্রাব ঘোলাটে হয়ে যাওয়া।
১৩.প্রস্রাবের সাথে রক্তপাত হওয়া।
উপরোক্ত লক্ষণ গুলি দেখা দিলে বুঝতে হবে প্রসাবে ইনফেকশন হয়েছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্নও হতে হবে। কারণ গর্ভাবস্থায় প্রস্রাবে ইনফেকশন দেখা দিলে গর্ভের বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশন হলে করণীয়
গর্ভাবস্থায় প্রায় অধিকাংশ নারীর ইউরিন ইনফেকশনের সমস্যা দেখা দেয়। ঘরোয়া কিছু উপায় অবলম্বন করলে ইউরিন ইনফেকশন দূর করা সম্ভব।
১.গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশন হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো পানি কম খাওয়া ।তাই ইউরিন ইনফেকশন দূর করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
২.গর্ভাবস্থায় প্রসাবের বেগ আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রসাব করতে হবে এবং প্রসাব করার সময় পুরোপুরি মূত্রথলী খালি করে প্রসাব করতে হবে।
৩.গর্ভাবস্থায় প্রসাবে ইনফেকশনের সমস্যা দেখা দিলে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খাওয়া যেতে পারে। কারণ ভিটামিন সি যুক্ত খাবার প্রসাবে ইনফেকশন কমাতে সাহায্য করে।
৪.যেহেতু গর্ভাবস্থায় জরায়ু প্রসারিত হওয়ার কারণে মূত্রথলিতে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ বেড়ে যায় । তাই এ সময় অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ তিনি যুক্ত খাবার ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটাতে সাহায্য করে।
৫.গর্ভাবস্থায় সহবাস করার আগে এবং পরে অবশ্যই মূত্রথলি পুরোপুরি খালি করতে হবে।
৬.গর্ভাবস্থায় প্রসাবের জায়গা সবসময় শুষ্ক রাখতে হবে। কারণ অনেক সময় প্রসবের জায়গা ভেজা থাকার কারণে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটে। যার ফলে ইউরিন ইনফেকশনের সমস্যা দেখা দেয়।
৭.গর্ভাবস্থায় যত সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করতে হবে। কারণ ময়লা বা টাইট ফিটিং পোশাক পড়ার ফলে প্রসাবের জায়গায় ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ করতে পারে।
সর্বোপরি গর্ভাবস্থায় শুরু থেকে ডেলিভারি হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চললে শরীর এবং পেটের বাচ্চা দুজনেই সুস্থ স্বাভাবিকভাবে দুনিয়াতে আসতে পারবে। তাই গর্ভাবস্থায় আমাদের সবসময় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।