ব্লাড ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ

ব্লাড ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ


ক্যান্সার একটি মরণব্যাধি রোগ। বর্তমানে ক্যান্সার সারাবিশ্বে এটি কমন রোগে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের প্রায় অধিকাংশ মানুষের শরীরে ক্যান্সারের জীবাণু পাওয়া যাচ্ছে। তাই আমাদের আজকের এই পোস্টের আলোচ্য বিষয় হলো ক্যান্সার হওয়ার কারণ, ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ভাইরাসের নাম কি,ব্লাড ক্যান্সার এর লক্ষণ, ব্লাড ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ,লিভার ক্যান্সারের লক্ষণ, জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ, ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ,প্রোস্টেট ক্যান্সারের লক্ষণ, ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণ,পেটের ক্যান্সারের লক্ষণ, ক্যান্সার কি ভাল হয়, ক্যান্সার রোগীর খাবার তালিকা এবং ক্যান্সার হলে কতদিন বাঁচে। 




আমরা আজ এই পোস্টে আলোচনা করব ব্লাড ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ


ক্যান্সার হওয়ার কারণ


  • ক্যান্সার হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো জিনগত পরিবর্তন বা কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি।
  • ক্যান্সার হওয়ার অন্যতম কারণ হলো ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ।কারণ ১০০ ভাগের প্রায় ৯০ ভাগ মানুষের ক্যান্সার হয় ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশগত কারণে।
  • অনেকের ক্ষেত্রে বংশ পরম্পরার মাধ্যমে ক্যান্সার দেখা দেয়।
  • অতিরিক্ত রাসায়নিক দ্রব্য যেমন তামাক বা টোটকা জাতীয় খাবার খাওয়ার মাধ্যমে ক্যান্সারের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • অতিরিক্ত আর্সেনিক আর্সেনিক এলকোহল বা কিছু ভৌত পদার্থের রেডিয়েশনের মাধ্যমে শরীরে ক্যান্সারের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

  • প্রতিদিন নিয়মিত শারীরিক চর্চা বা ব্যায়াম বা হাঁটাচলা না করলে শরীরে অলসতা দেখা দেয় যার ফলে ক্যান্সারের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • মহিলাদের ক্ষেত্রে অনেক সময় ওজন অতিরিক্ত বৃদ্ধির কারণে ব্রেস্টে ক্যান্সারের সমস্যা দেখা দিতে পারে। 
  • অতিরিক্ত ধূমপানের কারণে ক্যান্সারের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  •  অতিরিক্ত অ্যালকোহল বা মাদকদ্রব্য সেবন করলে ক্যান্সারের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের সমস্যা থাকলে। তাদের ক্ষেত্রে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। কারণ শরীরে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। যার ফলে সহজেই ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে।
  • অতিরিক্ত লাল মাংস বা চর্বিযুক্ত খাবার বেশি খেলে শরীরে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
  • বাহিরের অতিরিক্ত ভাজাপোড়া বা ফাস্টফুড জাতীয় খাবার খাওয়ার মাধ্যমে শরীরে ক্যান্সারের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • অতিরিক্ত ভেজাল বা কেমিক্যাল যুক্ত খাবার খাওয়ার মাধ্যমে শরীরে ক্যান্সারের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ভাইরাসের নাম কি


ভাইরাজনিত কারণে বিশ্বের ১০০ ভাগের প্রায় ১৫ ভাগ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। নিচে কিছু ভাইরাসের নাম দেওয়া হলো যা শরীরে ক্যান্সার সৃষ্টি করে। 

  • ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ভাইরাসের নাম অংকোজেনিক ভাইরাস।
  • ডিএনএ এবং আরএনএ এর মধ্যে থাকা কিছু ভাইরাস ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে।

ডিএনএ ভাইরাস যা ক্যান্সার সৃষ্টি করে:
  • এপস্টাইন বার ভাইরাস
  • হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস
  • হেপাটাইটিস বি ভাইরাস
  • হিউম্যান হাপিস ভাইরাস-৪
আরএনএ ভাইরাস যা ক্যান্সার সৃষ্টি করে:
  • হিউম্যান লিম্ফােটপিক ভাইরাস টাইপ-১
  • হেপাটাইটিস সি ভাইরাস

ব্লাড ক্যান্সার এর লক্ষণ




  • শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যাওয়া।
  • শরীর ফ্যাকাসে দেখানো ।
  • হাড়ে ব্যথা বা কোমলতা।
  • ঘন ঘন জ্বর হওয়া।
  • ক্ষুধামন্দা দেখা দেওয়া।
  • রাতে অতিরিক্ত ঘাম হওয়া।
  • হার্টবিট বেড়ে যাওয়া বা বুক ধরফর করা।
  • গুরুতর এবং ঘন ঘন সংক্রমণ।
  • সহজেই রক্তপাত বা ঘা হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যাওয়া। 
  • অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বল ভাব লাগা।
  • হাতে পায়ে পানি জমে যাওয়া।
  • ত্বকে ছোট ছোট লাল দাগ হওয়া।
  • লিম্ফ নোডের বৃদ্ধি (যা ত্বকের নিচে বাম্পস বলে মনে হয়)।
  • অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়া। যেমন- ব্লাড ক্যান্সারের সমস্যা দেখা দিলে নাকে, মুখে বা নারীদের ক্ষেত্রে মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত হওয়া।

ব্লাড ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ


ক্যান্সার একটি মরণব্যাধি রোগ। এই রোগে আক্রান্ত হলে বাঁচার সম্ভাবনা খুব কম থাকে। এক গবেষণায় দেখা গেছে ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর শরীরে ৫২ টি পরিবর্তন দেখা যায়। যে পরিবর্তনগুলো দেখলে বোঝা যায় রোগী মৃত্যু পথযাত্রী কি  না। নিতে কিছু ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণ দেওয়া হলো যে লক্ষণ গুলো দেখলে বোঝা যায় রোগীর মৃত্যু হতে পারে।


১.মুখ ও জিহ্বার সংবেদনশীলতা কমে যায়। যার ফলে কথা বলার সময় সমস্যা দেখা দেয়।

২.চোখে ঝাপসা দেখা বা দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া।

৩.আলো কম বা বেশি হওয়ার কারণে ও চোখের পলক না পড়া।

৪.চোখের পাতা সহজে বন্ধ না হওয়া।

৫.কথা বলার বা হাসার সময় ঠোঁট ও নাকের কোণে ভাঁজ বা রেখা দেখা দেওয়া।

৬. বারবার মাথা সামনের দিকে ঝুঁকে যাওয়া।

৭.শরীরের ভিতরে রক্তক্ষরণ শুরু হওয়া।

৮.কথা বলার সময় বা সাধারণ সময়ে গলা থেকে গরগর আওয়াজ হওয়া।


উপরোক্ত লক্ষণ গুলো ক্যান্সার রোগীর শরীরে দেখা দিলে। পরবর্তী কিছু মাসের মধ্যেই রোগী মারা যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।



জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ


নারীদের ক্ষেত্রে জরায়ু ক্যান্সার এটি সাধারণ ক্যান্সার হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় অধিকাংশ নারীরা শরীরে জরায়ু ক্যান্সারের সমস্যা দেখা দেয়। নিচে জরায়ু ক্যান্সারের কিছু লক্ষণ দেওয়া হলঃ





১.জরায়ুর মুখে দীর্ঘদিন যাবৎ ক্ষত বা ঘা দেখা দেওয়া।

২.অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা দেখা দেয়।

৩.মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত হওয়া।

৪.সহবাসের সময় অতিরিক্ত ব্যথা বা রক্তপাত হওয়া।

৫.সহবাসের পরেও অস্বস্তি বা রক্তপাত হওয়া।

৬.অতিরিক্ত সাদা স্রাব দেওয়া বা সাদা স্রাবে দুর্গন্ধ হওয়া। 

৭.মেনোপজের সময় রক্তপাত হওয়া।

৮.প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া করা বা প্রস্রাবের সময় ব্যথা হওয়া।

৯.তলপেটে বা কোমরে ব্যথা হওয়া।

১০.হঠাৎ করে ওজন কমে যাওয়া বা বৃদ্ধি পাওয়া।

১১.শারীরিক দুর্বলতা ও ক্লান্তি ভাব দেখা দেওয়া।



ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ


নারীদের ক্ষেত্রে ব্রেস্টে ক্যান্সারের সমস্যা দেখা দিলে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। নিচে লক্ষণগুলো দেওয়া হলঃ 





১.ব্রেস্টে শক্ত পিণ্ড বা চাকার মাংসপিণ্ড দেখা দেওয়া।

২.দ্রুত ব্রেস্ট থেকে অন্য ব্রেস্টে সংক্রমিত হওয়া।

৩.ব্রেস্টের আকার বা আকৃতি পরিবর্তন হওয়া।

৪.ব্রেস্টে ব্যথা হওয়া।

৫.ব্রেস্টের রং পরিবর্তন হওয়া।

৬.অস্বাভাবিকভাবে ব্রেস্টের বোঁটা থেকে রস বের হওয়া।

৭.ব্রেস্টের বোটা ভিতর দিকে প্রবেশ করা।

৮.ব্রেস্ট এর সাথে সাথে বগলে শক্ত পিণ্ড বা চাকার মতো দেখা দেওয়া।



প্রোস্টেট ক্যান্সারের লক্ষণ


প্রায় অধিকাংশ পুরুষ বর্তমানে প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। এই প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ফলে পুরুষের শরীরে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। নিচে লক্ষণগুলো দেওয়া হলঃ





১.প্রোস্টেট অস্বাভাবিকভাবে বড় হয়ে যাওয়া।

২.ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ আসা।

৩.প্রস্রাব করার সময় জ্বালাপোড়া বা ব্যথা হওয়া।

৪.প্রসাবের সময় প্রসাবের বেগ কমে যাওয়া বা ক্লিয়ার না হওয়া।

৫.প্রস্রাবের রং পরিবর্তন হওয়া।

৬.প্রসাবের সাথে রক্ত যাওয়া।

৭.বীর্যপাত কম হওয়া বা বীর্যের সাথে রক্তপাত হওয়া।

৯.শারীরিক চাহিদা কমে যাওয়া।

১০.তলপেটে বা কোমরে ব্যথা হওয়া।



ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণ


বাংলাদেশে প্রায় কমবেশি অনেকেই ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো ধূমপান করা। আর এই ফুসফুস ক্যান্সার সমস্যা দেখা দিলে শরীরে কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। নিচে লক্ষণ গুলো দেওয়া হলঃ 





১.বুকে ব্যথা হওয়া।

২.কণ্ঠস্বর পরিবর্তিত হওয়া।

৩.অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বল ভাব অনুভূত হওয়া।

৪.ঘন ঘন জ্বর বা কাশি হওয়া।

৫.কাশির সময় কফের সাথে রক্ত যাওয়া।

৬.শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দেওয়া।

৭.শ্বাস নেওয়ার সময় বা কাশি যাওয়ার সময় ব্যথা হওয়া।

৮.শরীরের বিভিন্ন হাড় ও মাংসপেশিতে ব্যথা হওয়া।

৯.হঠাৎ করে ওজন কমে যাওয়া।



পেটের ক্যান্সারের লক্ষণ


বাংলাদেশের প্রায় অধিকাংশ মানুষেরই এখন ক্যান্সারের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এর মধ্যে একটি ক্যান্সার হল পেটে ক্যান্সার। অনেকেই এই পেটে ক্যান্সারের আক্রান্ত হচ্ছে। নিচে পেটে ক্যান্সারের কিছু লক্ষণ দেওয়া হলোঃ





১.অতিরিক্ত পেটে ব্যথা হওয়া বা অস্বস্তি বোধ হওয়া।

২.হঠাৎ করেই ওজন কমে যাওয়া।

৩.বমি হাওয়া বা বমি বমি ভাব হওয়া।

৪.ক্ষুধা মন্দা দেখা দেওয়া।

৫.হজম প্রক্রিয়ায় সমস্যা দেখা দেওয়া।

৬.খাবার খেতে বা গিলতে অসুবিধা হওয়া।

৭.পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া।

৮.অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বল অনুভূত হওয়া।



ক্যান্সার কি ভাল হয়


ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের ভালো হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। কারণ প্রায় ক্যান্সারে শরীরে লাস্ট পর্যায়ে যে ধরা পড়ে। যার কারণে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেই চলে এবং এতে মৃত্যুর হার অনেক বেশি বেড়ে যায়। এছাড়াও এখনো পর্যন্ত বিশ্বে ক্যান্সারের কোন চিকিৎসা বা ওষুধ আবিষ্কার হয় নাই।



ক্যান্সার রোগীর খাবার তালিকা 


ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে নিয়ম অনুযায়ী খাবার গ্রহণ করতে হবে। নিচে ক্যান্সার রোগীর খাবার তালিকা বা যেসব খাবার খেতে পারবেন তার তালিকা দেওয়া হলঃ


১.প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন - চর্বিহীন গরুর মাংস, মুরগি বা হাঁসের মাংস, দুগ্ধ জাতীয় খাবার, ডিম, বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছ, সয়াবিন ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।

২.ফাইবার যুক্ত খাবার যেমন -সবুজ শাকসবজি, ফলমূল, মটরশুটি বা বিন জাতীয় খাবার, বাদাম খাওয়া যেতে পারে।

৩.অতিরিক্ত ফাস্টফুড জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে।

৪.আগুনে ঝলসানো খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

৫.প্রক্রিয়াজাত যে কোন খাবার পরিহার করতে হবে ।

৬.ধূমপান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।



ক্যান্সার হলে কতদিন বাঁচে


ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে সঠিক কতদিন বেঁচে থাকা সম্ভব তার সঠিক কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে চিকিৎসকরা ক্যান্সারের স্টেজ অনুসারে ট্রিটমেন্ট করে থাকেন।  এতে ক্যান্সারের স্টেজ  অনুযায়ী কেউ ১ থেকে ৪ বছর বা ৫ থেকে ১০ বছর বা তারও বেশি বেঁচে থাকতে পারে।যদি ক্যান্সার লাস্ট স্টেজে যে ধরা পড়ে। তাহলে রোগীর ক্ষেত্রে বেশিদিন বেঁচে থাকা অসম্ভব হয়ে যেতে পারে।



সর্বোপরি ক্যান্সার একটি মরণব্যাধি রোগ। তাই আমাদের ক্যান্সার হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ। তাই আমাদের ক্যান্সার প্রতিরোধ করার জন্য ভালো পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

*

إرسال تعليق (0)
أحدث أقدم