বিড়ালের নখের আঁচড়ে কি রোগ হয়

বিড়ালের নখের আঁচড়ে কি রোগ হয় 


বর্তমানে প্রায় সবার বাসায়ই কমবেশি বিড়াল পোষা হয়।  তবে অনেক সময় এই বিড়ালের আঁচড় বা কামড় দিলে আমরা সেটা গুরুত্বসহকারে নেই না।  তবে বর্তমানে বিড়ালের কামড়ের ফলে র‌্যাবিস ভাইরাসের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের রোগ শরীরের ভিতরে ছড়াচ্ছে।


তাই আমাদের আজকের এই পোস্টের আলোচ্য বিষয় হলো বাচ্চা বিড়াল কামড়ালে কি হয়, বিড়ালের নখের আঁচড়ে কি রোগ হয়, বিড়াল আঁচড় দিলে কি করতে হবে, বিড়ালের নখের আঁচড় কি বিপজ্জনক, বিড়ালের কামড়ে কি জলাতঙ্ক হয়, বিড়ালের কামড়ের ভ্যাকসিনের নাম কি, বিড়াল কামড়ালে কত দিনের মধ্যে টিকা দিতে হয়, রেবিস ভ্যাকসিন দেওয়ার নিয়ম, রেবিস ভ্যাকসিন এর কার্যকারিতা কতদিন থাকে, বিড়ালে আঁচড় দিলে কি দোয়া পড়তে হয় এবং রেবিস ভ্যাকসিন এর দাম বাংলাদেশে।


বিড়ালের নখের আঁচড়ে কি রোগ হয়


আমরা আজকে এই পোস্টে আলোচনা করব বিড়ালের নখের আঁচড়ে কি রোগ হয় 



বাচ্চা বিড়াল কামড়ালে কি হয়


যদি র‌্যাবিস ভাইরাস আক্রান্ত বিড়ালের বাচ্চা কামোড় বা আঁচড় দেয়। তাহলে আপনার যত দ্রুত সম্ভব টিকা দিতে হবে। কারণ টিকা না দিলে শরীরে র‌্যাবিস  ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে আপনার মৃত্যু অবধারিত।শরীরে র‌্যাবিস ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কারণে জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ দেখা দেয়।



বিড়ালের নখের আঁচড়ে কি রোগ হয়


বিড়ালের নখের আঁচড় বা বিড়ালের কামড়ে শরীরে ক্যাট স্ক্রাচ ডিজিজ নামে একটি সংক্রামক রোগের লক্ষণ দেখা দেয়। এছাড়াও বিড়ালে আঁচড় বা কামড় দিলে আক্রান্ত জায়গায় ইনফেকশন বা ফোসকা পড়ে যেতে পারে। এতে অনেক সময় অতিরিক্ত জ্বালাপোড়া বা ব্যথার সৃষ্টি হয় । এছাড়াও যদি র‌্যাবিস ভাইরাস আক্রান্ত বিড়াল কামোড় বা আঁচড় দেয়। তাহলে শরীরে র‌্যাবিস ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে যার কারণে জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ দেখা দেয়। তাই বিড়ালে কামড় বা আঁচড় দিলে যত দ্রুত সম্ভব টিকা দিতে হবে।



বিড়াল আঁচড় দিলে কি করতে হবে


বিড়ালে আঁচড় বা কামড় দিলে যদি রক্ত বের না হয় তাহলে ভয় পাওয়ার কোন কারণ নাই। তবে আক্রান্ত জায়গা ভালোভাবে অ্যান্টিসেপটিক দিয়ে ওয়াশ করে নিতে হবে এবং ভালো কোন অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম লাগাতে হবে। এছাড়াও যদি বিড়ালের আঁচড়ে বা কামড়ে রক্ত বের হয়। তাহলে সাথে সাথে রক্তপাত বন্ধ করতে হবে এবং কোন অ্যান্টিসেপটিক  দিয়ে বারবার ওয়াশ করতে হবে এবং যত দ্রুত সম্ভব টিকা দিতে হবে।



বিড়ালের নখের আঁচড় কি বিপজ্জনক


বিড়ালের নখের আঁচড় কি বিপজ্জনক


বিড়ালের আঁচড় বা কামড় যদি গভীর না হয় বা রক্তপাত না হয়। তাহলে বিপদজনক নাও হতে পারে। তবে যদি বিড়ালের আঁচড় বা কামড় গভীর হয় বা অতিরিক্ত রক্তপাত হয় , তাহলে জীবাণুর সংক্রমনের আশঙ্কা বেশি থাকে। এছাড়াও যদি রেবিস ভাইরাস আক্রান্ত বিড়ালের আঁচড় বা কামড় শরীরের জন্য খুবই বিপদজনক। কারণ এই ভাইরাসের কারণে শরীরে জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ দেখা দেয়। আর একবার জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ দেখা দিলে মৃত্যু অবধারিত।



বিড়ালের কামড়ে কি জলাতঙ্ক হয়


যদি রাবিস ভাইরাস আক্রান্ত বিড়াল কামড় বা আঁচড় দেয়। তাহলেই জলাতঙ্ক রোগ হতে পারে । এছাড়াও যদি পোষা বিড়ারে রাবিস ভাইরাসের টিকা দেওয়া থাকে। আর যদি সেই বিড়াল কামড় বা আঁচড় দেয়। তাহলে জলাতঙ্ক রোগ হওয়ার সম্ভাবনা নেই।এছাড়াও যদি রাবিস ভাইরাস আক্রান্ত বিড়াল কামড় বা আঁচড় দেয়। তারপর যদি সাথে সাথে টিকা দেওয়া হয়। তাহলে জলাতঙ্ক রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।



বিড়ালের কামড়ের ভ্যাকসিনের নাম কি


বিড়ালের কামড়ের ভ্যাকসিনের নাম হল টিটেনাস ভ্যাকসিন বা এন্টি রাবিস ভ্যাকসিন। এছাড়াও জলাতঙ্ক রোগের সম্ভাবনা থাকলে এন্টি রাবিস ভ্যাকসিনের সাথে ইমিউনোগ্লোবিলিন টিকা বা ভ্যাকসিন দেওয়া হয়।



বিড়াল কামড়ালে কত দিনের মধ্যে টিকা দিতে হয়



বিড়ালের কামড় বা আচঁড় দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে টিকা দেওয়া উচিত।কারণ বিড়াল কামড় আচঁড় দেওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে ভাইরাস শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে না। তাই এর মধ্যে টিকা দিলে এর প্রতিরোধ করা সম্ভব।



রেবিস ভ্যাকসিন দেওয়ার নিয়ম


রাবিস ভ্যাকসিন ২ ভাবে দেওয়া যায়। একটি চামড়ার নিচে এবং অন্যটি মাংসপেশীতে। তবে মাংসপেশীতে ইনজেকশন দেওয়া হয় সব থেকে বেশি।বিড়ালে কামড় দিলে ৩ দিনের ডোজ বা ৫ দিনের ডোজ যে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। তবে ৩ দিনের ডোজে ভ্যাকসিন বেশি দেওয়া হয়।






১.৩ দিনের ডোজের নিয়মঃ বিড়ালে কামড় বা আঁচড়ের শূন্য(০) তম দিনে দুই বাহুতে দুইটা এবং তৃতীয় দিনে একটা এবং সপ্তম দিনে একটা ভ্যাকসিন দেওয়া হয়।


২.৫ দিনের ডোজের নিয়মঃ বিড়ালের কামর বা আঁচড়ের শূন্য (০)তম দিনে দুই বাহুতে দুইটা ৩য় দিনে একটা ৭ম দিনে একটা ১৪তম দিনে একটা এবং ২৮তম দিনে একটা ভ্যাকসিন দেওয়া হয়।


৩.টিকা নেওয়ার ৫বছরের মধ্যে যদি পুনরায় আবার বিড়ালে আচঁড় বা কামড় দেয় ।তাহলে বিড়ালে আচঁড় বা কামড় দেওয়ার শূন্য (০)তম দিনে ও ৩য় দিনে বুস্টার ডোজ বা ভ্যাকসিন নিলেই হয়।


৪.যদি যে বিড়ালে কামড় বা আচঁড় দেয় সেই বিড়াল ১০ দিন পর্যন্ত সম্পূর্ণ সুস্থ থাকে। তাহলে ১৪তম ও ২৮ তম দিনের টিকা না দিলেও হয়।



রেবিস ভ্যাকসিন এর কার্যকারিতা কতদিন থাকে



রাবিশ ভ্যাকসিন মূলত ছয় মাস এক বছর ও তিন বছর মেয়াদি দেয়া হয়। তবে প্রতি এক বছর পর পর রাবিস ভ্যাকসিন দেওয়া উচিত। বিড়ালে কামড়ালে টিকা নেওয়ার ৬ মাস পরে আবার বিড়াল কামড়ালে পুনরায় টিকা নিতে হবে।তাই যে কয় মাস বা বছর মেয়াদি ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। সেই পর্যন্ত ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা থাকে ।



বিড়ালে আঁচড় দিলে কি দোয়া পড়তে হয়


আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিষাক্ত কোন প্রাণীর ক্ষতির হাত থেকে বাঁচার জন্য কিছু দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন। যে দোয়া পড়ার মাধ্যমে বিষাক্ত প্রাণীর কামড় বা আঁচড় থেকে নিজেকে রক্ষা করা যায়।তাই বিড়ালে আঁচড় বা কামড় দিলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শেখানো দোয়া পাঠ করা যেতে পারে । নিচে দোয়াটি দেওয়া হলঃ


এ সম্পর্কে তিরমিজি হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন, ”যে ব্যক্তি সকাল সন্ধ্যা এই দোয়া তিনবার পড়বে, আল্লাহ তা'আলা তাকে সমস্ত প্রাণী, বিশেষ করে সাপ, বিচ্ছু  প্রভৃতি বিষাক্ত ও কষ্টদায়ক প্রাণীর অনিষ্ট থেকে রক্ষা করবেন।” (তিরমিজি হাদিস নং-৩৬০৪)


দোয়াটি হলোঃ


أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ

বাংলা উচ্চারণঃ ”আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খলাক।”

অর্থঃ “আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কলেমার দ্বারা প্রত্যেক শয়তান, বিষাক্ত প্রাণী এবং প্রত্যেক কুদৃষ্টির অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাইছি।”


সুতরাং বিড়ালে কামড় বা আঁচড় দিলে সকাল সন্ধ্যা উপরোক্ত দোয়াটি তিনবার পড়া যেতে পারে।



রেবিস ভ্যাকসিন এর দাম বাংলাদেশে



বর্তমানে বাংলাদেশে রেবিস ভ্যাকসিন যেকোনো সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে দেওয়া হয়। তবে অনেকেই রেবিস ভ্যাকসিন কিনে দিতে চায়। তাই নিচে কিছু ভ্যাকসিনের নাম ও মূল্য তালিকা দেওয়া হলঃ






১.Ing. Rabivax (2.5 IU/ml)- ৫০০ টাকা।

২.Ing. Verorab (2.5 IU/ml)- ৯৯৮ টাকা।

৩.Ing. Rabix-VC(2.5 IU/ml)- ৫০০ টাকা। 




সর্বোপরি বিড়ালের কামড় বা আঁচড় আমাদের শরীরের জন্য খুবই বিপদজনক। কারণ এর জন্য শরীরে পরবর্তীতে জলতাঙ্ক রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যার কারণে মৃত্যু ও হতে পারে। তাই আমাদের সবসময়ই বিড়ালের কামড় বা আঁচড় থেকে সাবধানে থাকতে হবে।

*

إرسال تعليق (0)
أحدث أقدم