সালামের উত্তর দেওয়া কি সুন্নত
সালাম দেওয়া হল একজন মুসলিমের পরিচয়।একজন মুসলিম ব্যক্তি অন্যজন মুসলিম ব্যক্তির সাথে দেখা হলেই সালাম দিয়ে থাকেন। এই সালামের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি অন্যজনের জন্য দোয়া করেন।তাই আমরা এই পোষ্টের মাধ্যমে সালাম দেয়া কি ওয়াজিব, সালামের সঠিক উচ্চারণ, সালাম দেওয়ার নিয়ম এবং সালামের উত্তর দেওয়া কি সুন্নত ,সালাম দিলে কত নেকি পাওয়া যায়, অমুসলিমদের সালাম দেওয়ার বিধান, সালামের উত্তর না দিলে কি গুনাহ হবে এবং যেসব অবস্থায় সালাম দেয়া মাকরুহ সে সম্পর্কে জানব।
সালাম দেয়া কি ওয়াজিব
সালাম দেয়া ওয়াজিব নয়, সালাম দেয়া সুন্নত।
এ সম্পর্কে সহীহ বুখারি হাদিসে এসেছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লামকে প্রশ্ন করলেন< ইসলামের কোন কাজ সবচেয়ে ভালো। তিনি বললেন, ”খাবার খাওয়ানো, পরিচিত অপরিচিত সবাইকে সালাম দেওয়া।”(সহীহ বুখারী হাদিস নং- ১২)
তিরমিজি হাদিসে এসেছে, হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা ঈমানদার না হওয়া পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর ঈমানদার হতে পারবে না পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা না হলে। তোমাদেরকে কি এমন একটি বিষয়ের কথা বলব, যা করলে তোমাদের পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি হবে তোমরা পরস্পরের মধ্যে সালাম এর ব্যাপক প্রসার ঘটাও।(তিরমিজি হাদিস নং- ২৬৮৮)
সালামের সঠিক উচ্চারণ
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ
সালাম দেওয়ার নিয়ম
কোন মুসলিম ব্যক্তি একে অপরের সাথে দেখা হলে আগে সালাম দেওয়া। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কথাবার্তার আগেই সালাম করবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে সালাম না দিলে কথা বলার অনুমতি দিতে নিষেধ করেছেন।
এ সম্পর্কে সিলসিলা সহিহা হাদিসে এসেছে, তিনি আরো বলেন, ”যে ব্যক্তি আগে সালাম দেয় না তাকে কথা বলার অনুমতি দিও না।”
সালামের উত্তর দেওয়া কি সুন্নত
সালামের উত্তর দেওয়া সুন্নত নয়, সালামের উত্তর দেওয়া ওয়াজিব ।যেহেতু সালামের উত্তর দেয়া ওয়াজিব তাই ইচ্ছাকৃতভাবে সালামের উত্তর না দিলে গুনাহ হয়।এছাড়া যদি সালামের দ্বারা কোন দলকে উদ্দেশ্য করা হয়, তাহলে তার উত্তর দেয়া ওয়াজিবের কেফায়া। অর্থাৎ একজন উত্তর দিলে সবার পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে। তবে সালামের উত্তর সবারই দেওয়া উত্তম।
এ সম্পর্কে সূরা নিসা ৮৬ নম্বর আয়াতে এসেছে, আল্লাহ বলেন, আর যখন তোমাদেরকে সালাম দেওয়া হবে, তখন তোমরা তার চেয়ে উত্তম সালাম দেবে, অথবা জবাবে তাই দেবে নিশ্চয়ই আল্লাহ সব বিষয়ে পূর্ণ হিসাবকারি।
সূরা নূর ৬১নম্বর আয়াতে এসেছে, আল্লাহ বলেছেন, ”যখন তোমরা গৃহে প্রবেশ করবে, তখন তোমরা তোমাদের সজনদের প্রতি সালাম বলবে। এ হবে আল্লাহর নিকট হতে কল্যাণময় ও পবিত্র অভিবাদন।”
সূরা নিসা ৮৬ নম্বর আয়াতে এসেছে, যখন কেউ তোমাদের সালাম করে তখন তোমরা তাকে তত অপেক্ষা উত্তম পন্থায় সালাম (জবাব) দিও, কিংবা (অন্ততপক্ষে) সেই শব্দেই তার জবাব দিও । নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু হিসাব রাখেন।
মুসনাদে আহাম্মাদ হাদিসে এসেছে, হযরত আবু উমামা (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ”যে ব্যক্তি আগে সালাম দিবে সে আল্লাহ ও তার রাসূলের কাছে উত্তম ব্যক্তি”।
সালাম দিলে কত নেকি পাওয়া যায়
বর্তমান সমাজে প্রচলিত একটি কথা আছে সালাম দিলে ৯০ নেকি পাওয়া যায় কিন্তু এর উপরে সহি শুদ্ধ কোন হাদিস নেই।
এ সম্পর্কে তিরমিজি হাদিসে এসেছে, হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে একজন লোক বললেন, ”আসসালামু আলাইকুম”।রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ১০ নেকি। তারপর অন্য এক লোক এসে বললেন, ”আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ”। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ২০নেকি। অতঃপর আরেক লোক এসে বললেন, ”আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।” রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ৩০ নেকি।(তিরমিজি হাদিস নং- ২৬৮৯)
অমুসলিমদের সালাম দেওয়ার বিধান
একজন মুসলিম ব্যক্তির একজন অমুসলিম ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া বৈধ নয়। তবে কোন প্রয়োজনে যদি দিতে হয় তাহলে ”আসসালামু আল মানিত্তাবাআল হুদা”বলবে। আর যদি অমুসলিম কোন ব্যক্তি সালাম দেয় তার উত্তরে শুধু ”ওয়া আলাইকুম” বলবে।
সালামের উত্তর না দিলে কি গুনাহ হবে
সালাম দেওয়া সুন্নত। তাই সুন্নত পালন না করলে গুনাহ হবে না। কিন্তু সালামের উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। আর ওয়াজিব ইচ্ছাকৃতভাবে পালন না করলে বা ছেড়ে দিলে গুনাহ হবে।
যেসব অবস্থায় সালাম দেয়া মাকরুহ
যে ব্যক্তি সালামের উত্তর দিতে অক্ষম সেই ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া মাকরূহ।যেসব ব্যক্তি নামাজ,আযান- ইকামত, জিকির, তেলাওয়াত, ধর্মীয় জ্ঞান চর্চা ,খানাপিনা ও প্রসাবরত অবস্থায় থাকে সেসব ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া মাকরুহ।এছাড়াও যে ব্যক্তি গুনাহের কাজে লিপ্ত থাকে বা স্ত্রী সহবাস অবস্থায় থাকে সে ব্যক্তিকে সালাম দেয়া মাকরূহ।
সর্বোপরি সালামের মাধ্যমেই একজন আরেকজনের জন্য দোয়া করেন। তাই আমাদের সালামের প্রসার বাড়াতে হবে।আল্লাহ তা’আলা সালামের মাধ্যমে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের উপর শান্তি বর্ষিত করবে।