পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর কোন কোন তাসবিহ কতবার পড়া হয়
আল্লাহর তরফ থেকে নামাজ আমাদের জন্য ফরজ করা হয়েছে। এই নামাজ হল আল্লাহর কাছে আমাদের করা শ্রেষ্ঠ ইবাদাত।”হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম” প্রতি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পরই তাজবিহ পাঠ করতেন। তাই আমরা আজ জানব পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর কোন কোন তজবি তাসবিহ কতবার পড়া হয়।
আমরা আজ এই পোস্টে আলোচনা করব পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর কোন কোন তাসবিহ কতবার পড়া হয়
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর কোন কোন তাসবিহ পড়া হয়
”হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম” প্রতি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ শেষ হওয়ার পরেই বসে তাসবীহ পাঠ করতেন। তিনি কয়টি ধাপে ধাপে তাসবীহ পাঠ করতেন। সেই ধাপগুলো পর্যায়ক্রমে নিচে দেওয়া হলঃ
১.সহিহ বুখারি ও মুসলিম হাদিসে এসেছে,”হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম” বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের প্রতি ফরজ নামাজের পর নিম্নের তাজবিহ পাঠ করবে তাহলে তার গুনাহ গুলো যদি সাগরের ফ্যানারাশির মতো অসংখ্য হয় তাহলে সেই গুনাহ গুলো ক্ষমা করে দেওয়া হয় ।
তাজবীহ গুলো হলঃ ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ 33 বার আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার আল্লাহু আকবার এবং এর সাথে একশত পূরণ করার জন্য নিম্নের দোয়াটি পাঠ করবে।
দোয়াটি হলঃ
لَا اِلَهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكَ وَ لَهُ الْحَمْدُ وَ هُوَ عَلَى كُلِّ شَيْئٍ قَدِيْر
বাংলা উচ্চারণ : ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহু হামদ, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির।’ (সহিহ বুখারি ও মুসলিম হাদিস)।
অর্থ : আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরিক নেই, রাজত্ব একমাত্র তাঁরই, সব প্রশংসা একমাত্র তাঁরই জন্য, আর তিনি সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।
২.সহীহ বুখারি হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বর্ণনা করে বলেন, ”হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম” এর কাছে কিছু দরিদ্র লোকেরা এসে বললেন যে, ধনী ও সম্পদশালী লোকেরা তাদের সম্পদের জন্য উচ্চ মর্যাদা ও নিয়ামত নিয়ে আমাদের থেকে এগিয়ে আছেন।তারাও আমাদের সাথে নামাজ আদায় করছেন,সিয়াম পালন করছেন ও তাদের সম্পদ ও অর্থের কারণে হজ, ওমরা পালন করছেন, জিহাদের ময়দানে শরিক হচ্ছেন এবং সদকা করার সওয়াব ও মর্যাদা লাভ করছেন।তখন ”হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম” বলেন, আমি কি তোমাদের কিছু কাজের কথা বলব, যে কাজ তোমরা করলে যারা নেক কাজে তোমাদের থেকে এগিয়ে আছে তোমরা ও তাদের পর্যায়ে যেতে পারবে।তাহলে কেউ তোমাদের সমপর্যায়ে উপনীত হতে পারবে না।আর তাদের মধ্যে তোমরাই হবে উত্তম আমলকারী।তখন তিনি নিচের তাদেরকে তাসবিহ গুলা পাঠ করতে বললেন।
তাজবীহ গুলো হলঃ ৩৩ বার তাসবিহ (সুবহানাল্লাহ), ৩৩ বার তাহরিম (আলহামদুলিল্লাহ), ও ৩৩ বার তাকবীর (আল্লাহু আকবার) পাঠ করতে বললেন।এই তাসবিহ পাঠ করার মাধ্যমে তিনি জিহাদের সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করেন।
৩.সহিহ মুসলিম হাদিসে এসেছে, প্রতি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ ও ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পাঠ করে একশ পূর্ণ করবে।
৪.শহীদ ও তিরজিমি হাদীসে এসেছে, ”হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম” বলেছেন, যে ব্যক্তি জীবনে দুটি অভ্যাস আয়ত্ত করতে পারবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। সে অভ্যাস দুটি আয়ত্ত করা ও খুবই সহজ । কিন্তু সেই অভ্যাসের লোকের সংখ্যা খুবই কম সে অভ্যাস এর মধ্যে একটি অভ্যাস হলো প্রতি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর ১০ সুবহানাল্লাহ, ১০ আলহামদুলিল্লাহ, ১০ বার আল্লাহু আকবার পাঠ করা।
৫.এছাড়াও প্রতি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর ২৫ বার সুবহানাল্লাহ, ২৫ বার আলহামদুলিল্লাহ, ২৫ বার আল্লাহু আকবার ও ২৫ বার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ করা যেতে পারে।
৬.প্রতি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ফরজ নামাজের সালাম ফেরানোর পর একবার আল্লাহু আকবার ও তিনবার আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ করে তারপর যদি একবার আয়তাল কুরসি পাঠ করে তাহলে সে জান্নাতে যাওয়ার মধ্যে মাত্র একটি পার্থক্য থাকে। পার্থক্য হল সে মারা যায় না তাই জান্নাতে যায় না মারা গেলেই সে জান্নাতি বা জান্নাতে যাবে ।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর কোন সূরা পড়তে হয়
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম তাজবীহ পাঠ করতেন। এছাড়াও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর সূরা পড়া যায়।
১.ফরজ নামাজের পরে সূরা ইয়াসিন তেলাওয়াত করা যেতে পারে। তবে এই সূরা পাঠ করার নির্দিষ্ট কোন হাদিস পাওয়া যায়নি।
২.জোহরের নামাজের পড়ে সূরা ফাতাহ পাঠ করা যেতে পারে।
৩.আসরের নামাজের পরে সূরা নাবা পাঠ করা যেতে পারে।
৪.মাগরিবের নামাজের পরে সুরা ওয়াকিয়া পাঠ করা যেতে পারে।
৫.এশার নামাজের পরে সূরা মূলক পাঠ করা যেতে পারে।
সর্বোপরি উপরোক্ত ছয়টি আমল প্রতি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর আমাদের করা উচিত। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্যই আমরা নামাজ আদায় করে থাকি আর এই নামাজের পর এই আমলগুলো পড়লে আমাদের জীবনের গুনাহ গুলো মাফ হবে এবং আমরা জান্নাতে যেতে পারবো।