ইসলামিক শরিয়াত মোতাবেক সুন্নাতে খাৎনা করার নিয়ম
সুন্নাতে খতনা বা মুসলমানি মুসলিম সমাজে একটি প্রচলিত প্রথা । ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক সুন্নাতে খাৎনা করা সুন্নত। অসংখ্য নবী রাসুল সুন্নতে খাতনা করিয়েছিলেন। এ সম্পর্কে বহু হাদিস নাযিল হয়েছে। তাই আমরা আজ এই পোস্টের মাধ্যমে সুন্নাতে খাৎনা কি, ইসলামিক শরীয়ত মোতাবেক সুন্নাতে খাৎনা করার নিয়ম, সুন্নাতে খাৎনা করার উপকারিতা,মুসলমানি করার পর ইনফেকশন,মুসলমানি করার পর খাবার এবং মুসলমানি করার খরচ সম্পর্কে জানব।
আমরা আজ এই পোস্টে আলোচনা করব ইসলামিক শরিয়াত মোতাবেক সুন্নাতে খাৎনা করার নিয়ম
সুন্নাতে খাৎনা কি
সুন্নতে খাতনা আরবি শব্দ ”খিত্তা” বা ”খেতাম” থেকে এসেছে।সুন্নতে খাতনার আভিধানিক অর্থ হলো কর্তন করা।সুন্নাতে খাৎনা হল পুরুষের লিঙ্গের অগ্রভাগের ত্বক বা চামড়া কেটে ফেলা বা বাদ দেওয়া।
ইসলামিক শরীয়ত মোতাবেক সুন্নাতে খাৎনা করার নিয়ম
সুন্নাতে খাৎনা সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে কোন আয়াত নাযিল হয়নি। তবে হাদিসে বহু আয়াত নাযিল হয়েছে।
ইসলামিক শরীয়ত মোতাবেক সুন্নাতে খাৎনা করার নিয়ম হলো সন্তান জন্মের ৭ থেকে ১২ বছরের মধ্যে সুন্নাতে খাৎনা করানো উচিত। তবে ৭ বছরের নিচে বয়সে সুন্নতে খাতনা করানো যাবে। কোন মুসলিম ব্যক্তিকে সুন্নতে খাতনা ব্যতীত জীবন যাপন করা উচিত নয় বা জায়েজ নেই।
এ সম্পর্কে সহিহ বুখারি হাদিসে এসেছে, প্রথম খতনা হয়েছে হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর হযরত ইব্রাহিম (আঃ) ৮০ বছর বয়সে খাতনা করিয়েছিলেন। হযরত ইব্রাহিম (আঃ) থেকে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত সব নবী খাতনা করিয়েছিলেন।
সহীহ বুখারি হাদিসে এসেছে, হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ফিতরাত অর্থাৎ মানুষের জন্মগত স্বভাব হলো পাঁচটি। যথাঃ খতনা করা, নাভির নিম্নদেশে ক্ষুর ব্যবহার করা, বগলের পশম উপড়ে ফেলা, নখ কাটা ও গোফ খাটো করা।
আর এক হাদীসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাতনি হাসান (রাঃ) ও হোসাইন (রাঃ) কে জন্মের পর ৭ দিনের মাথায় সুন্নাতে খাৎনা করিয়েছিলেন।
সুন্নাতে খাৎনা করার উপকারিতা
১.সুন্নাতে খাৎনা করার ফলে মূত্রথলির ইনফেকশন থেকে মুক্তি পাওয়া যায় ইনফেকশনের ফলে ওজন কমে যাওয়া খাওয়ার অরুচি হওয়া যার যার ভাব হয়ে থাকে।
২.সুন্নাতে খাৎনা করার ফলে বিভিন্ন ধরনের যৌনবাহিত রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
৩.সুন্নাতে খাৎনা করানোর ফলে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস জনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
৪.সুন্নাতে খাৎনা করানোর ফলে লিঙ্গের ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায়।
৫.সুন্নাতে খাৎনা করার ফলে লিঙ্গের মাথার দিকের চামড়া কেটে ফেলে দেওয়া হয়। যার ফলে লিঙ্গের মাথার দিকে চুলকানি, জ্বালাপোড়া করা বা ফোলা ভাব কম হয়।
৬.সুন্নাতে খাৎনা করার ফলে কিডনিজনিত সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
মুসলমানি করার পর ইনফেকশন
অনেক সময় মুসলমানি বা সুন্নতে খৎনা করার পর ইনফেকশন দেখা দেয়। ইনফেকশনের সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করা উচিত। এছাড়া এ সময় ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করতে হবে।
মুসলমানি করার পর খাবার
মুসলমানি বা সুন্নতে খাতনা খাতনা করার পর পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ উচিত খাওয়ানো উচিত। এ সময় খাবার তালিকায় প্রোটিন ও আয়রন জাতীয় খাবার রাখা উত্তম। প্রোটিন ও আয়রন সমৃদ্ধ খাবার যেমন- মুরগির মাংস, মসুর ডাল, সামুদ্রিক মাছ, ডিম, বিভিন্ন ধরনের বাদাম,মধু, টমেটো, ব্রকলি, চকলেট, সয়াবিন ইত্যাদি খাওয়ানো যেতে পারে। এতে শরীরে দুর্বলতা এবং আয়রনের ঘাটতি পূরণ করতে সহায়তা করে।
মুসলমানি করার খরচ
খাৎনা করার পরবর্তী জটিলতা
সুন্নাতে খাৎনা যদি লোকাল এন্সেসিয়া দিয়ে দেয়া হয়। তাহলে খৎনা করার পরবর্তী সময়ে কিছুদিন লিঙ্গের মাথা দিকে ফোলা ভাব থাকতে পারে। এছাড়াও লিঙ্গের মাথা থেকে রক্ত মিশ্রিত পানি বের হতে পারে। এতে ভয় করার কিছু নাই কিছুদিন পর ঠিক হয়ে যায়।সুন্নতে খাতনা করার পর কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করলে ক্ষতস্থান দ্রুত সেরে যায়। এছাড়া এ সময় ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করা উচিত।
সর্বোপরি সুন্নতে খাৎনা মুসলিম সমাজে প্রচলিত একটি প্রথা। এটি আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে পালন করা উচিত। কারণ প্রত্যেক নবীর সুন্নতে খাৎনা করিয়েছিলেন। তাই আমাদের নবীর সুন্নত পালন করা উচিত।