হজ্জ সম্পর্কে কোরআনের আয়াত ও হাদিস

হজ্জ সম্পর্কে কোরআনের আয়াত ও হাদিস


হজ্জ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে একটি। প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের উপর হজ্জ ফরজ করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের অনেকের মধ্যে এই হজ্জ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা নেই। কিন্তু পবিত্র কোরআনে হজ্জ সম্পর্কে বহু আয়াত ও হাদিস ও নাযিল হয়েছে। তাই আমরা আজ এই পোষ্টের মাধ্যমে হজ্জের ফরজ কয়টি, হজ্জের ওয়াজিব কয়টি, হজ্জের সুন্নত কয়টি, হজ্জ করার নিয়ম, হজ্জের গুরুত্ব ও ফজিলত এবং হজ্জ সম্পর্কে কুরআনের  আয়াত ও হাদিস সম্পর্কে জানবো।


হজ্জ সম্পর্কে কোরআনের আয়াত ও হাদিস


আমরা আজ এই আর্টিকেলে আলোচনা করব  হজ্জ সম্পর্কে কোরআনের আয়াত ও হাদিস



হজ্জের ফরজ  কয়টি



হজ্জের ফরজ তিনটি। হজ্জ করার সময় আপনাকে হজ্জের তিনটি ফরজ মানতে হবে। তা না হলে আপনার হজ্জ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। নিম্নে হজ্জের তিনটি ফরজ দেওয়া হল।

১.ইহরাম বাধা বা নিয়ত করা।

২.অকুফে অবস্থান করা বা আরাফার ময়দানে অবস্থান করা।অর্থাৎ ৯ই জিলহজ জোহর থেকে ১০ই জিলহজ  ফজরের আগ পর্যন্ত আরাফার ময়দানে অবস্থান করা। 

৩.তাওয়াফে জিয়ারত করা।



হজ্জের ওয়াজিব কয়টি



হজ্জের ওয়াজিব ছয়টি।নিম্নে হজ্জের ওয়াজিব ছয়টি দেওয়া হল।

১. ১০ই জিলহজ সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত মুজদালিফায় যেকোনো সময় অবস্থান করা।

২. সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে সাতবার দৌড়ানো। এটিকে সায়ি বলা হয়।

৩.শয়তানকে পাথর মারা। অর্থাৎ ১০,১১ ও ১২ জিলহজ জামানায় শয়তানকে পাথর মারা।

৪.তামাত্তু  ও কিরান হজ কারীদের দমে শোকর করা বা হজের দিন কোরবানি করা।

৫. হারাম শরীফের সীমানায় কুরবানীর দিনগুলোতে মাথার চুল মোড়ানো বা মাথার চুল কেটে ইহরাম সমাপ্ত করা।

৬.বিদায়ী তাওয়াফ করা।



হজ্জের সুন্নত কয়টি


হজ্জের সুন্নত নয়টি।নিম্নে হজের সুন্নতগুলো দেওয়া হল।

১.ইহরাম বাধার আগে গোসল করা বা পরিষ্কার সাদা চাদর পড়া এবং সুগন্ধি  ব্যবহার করা।

২.ইহরাম বাধার আগে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা।

৩.ইহরামের সময় বেশি বেশি তালবিয়া পাঠ করা।

৪.ইফরাদ ও ইরান কিরান হজ কারীদের জন্য তাওয়াফে কুদুম করা ।

৫.তাওয়াফে কুদুম করার সময় যদি ইচ্ছা থাকে তাহলে রমল করা।

৬.৮ জিলহজ মক্কা থেকে মিনাতে গিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা এবং রাতে সেখানে অবস্থান করা।

৭.৯ জিলহজ সূর্যোদয়ের পর মিনা থেকে আরাফার দিকে রওনা হওয়া এবং সূর্যাস্তের পর আরাফা থেকে মুজদালিফার দিকে রওনা হওয়া।

৮.৯,১০, ১১ ও ১২ জিলহজ বা কুরবানীর দিনগুলোতে মিনায় রাত্রি যাপন করা।

৯.মিনা থেকে মক্কা শরীফে প্রত্যাবর্তনের সময় মুহাচ্ছার নামের জায়গায় কিছু সময় অবস্থান করা।

১০.তাওয়াফের সময় হাযরে আসওয়াদে চুমু দেওয়া। এছাড়াও চুমু দেওয়া সম্ভব না হলে হাজারে আসাদের দিকে হাত উঠিয়ে ইশারা করে হাতে চুমু দেওয়া।



হজ্জ করার নিয়ম


হজ করার সময় হজের ফরজ, হজের সুন্নত, হজের ওয়াজিব সমূহ সঠিকভাবে পালন করা।ইতিমধ্যে উপরে হজের ফরজ হজের সুন্নাত ও হজের ওয়াজিব সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।


হজের সময় বেশি বেশি তালবিয়া পাঠ করা। নিচে তালবিয়া বাংলা উচ্চারণ সহ দেওয়া হল।


হজের তালবিয়াঃ

لَبَّيْكَ ٱللَّٰهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إِنَّ ٱلْحَمْدَ وَٱلنِّعْمَةَ لَكَ وَٱلْمُلْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ

বাংলা উচ্চারণঃ “লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্‌নিমাতা লাকা ওয়ালমুল্‌ক লা শারি-কা লাক”

অর্থঃ ”আমি হাজির হে আল্লাহ! আমি উপস্থিত, আপনার ডাকে সাড়া দিতে আমি হাজির। আপনার কোন অংশীদার নেই। নিঃসন্দেহে সমস্ত প্রশংসা ও সম্পদরাজি আপনার এবং একচ্ছত্র আধিপত্য আপনার। আপনার কোন অংশীদার নেই।”



হজ্জ সম্পর্কে কোরআনের আয়াত ও হাদিস



হজ্জ সম্পর্কে কোরআনের আয়াত ও অসংখ্য হাদিস নাযিল হয়েছে। নিম্নে কয়েকটি কোরআনের আয়াত ও হাদিস দেওয়া হল।হজ্জ ও ওমরার গুরুত্ব এতটাই বেশি যে আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনে সূরা হজ্জ নামে একটি সূরা নাযিল করেছেন।


হজ্জ সম্পর্কে কুরআনের আয়াত



১.সূরা বাকারা ১২৫ নাম্বার আয়াতে এসেছে,


١ وَإِذْ يَرْفَعُ إِبْرَٰهِمُ ٱلْقَوَاعِدَ مِنَ ٱلْبَيْتِ وَإِسْمَٰعِيلُ رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّآۖ إِنَّكَ أَنتَ ٱلسَّمِيعُ ٱلْعَلِيمُ

অর্থঃ “স্মরণ কর, যখন ইব্রাহীম ও ইসমাঈল কা’বাগৃহের ভিত্তি স্থাপন করছিল। তারা দোয়া করেছিলঃ পরওয়ারদেগার! আমাদের থেকে কবুল কর। নিশ্চয়ই তুমি শ্রবণকারী, সর্বজ্ঞ।”


২.সূরা হজ্জ ২৭ নম্বর আয়াতে এসেছে,

وَ اَذِّنْ فِی النَّاسِ بِالْحَجِّ یَاْتُوْكَ رِجَالًا وَّعَلٰی كُلِّ ضَامِرٍ یَّاْتِیْنَ مِنْ كُلِّ فَجٍّ عَمِیْقٍ

অর্থঃ ”আর মানুষের নিকট হজ্বের ঘোষনা দাও, তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং সর্ব প্রকার ক্ষীণকায় উটে চড়ে দূর পথ পাড়ি দিয়ে।”


৩.সূরা বাকারা ১৫৮ নম্বর আয়াতে এসেছে, 

إِنَّ ٱلصَّفَا وَٱلْمَرْوَةَ مِن شَعَآئِرِ ٱللَّهِۖ فَمَنْ حَجَّ ٱلْبَيْتَ أَوِ ٱعْتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ أَن يَطَّوَّفَ بِهِمَاۚ وَمَن تَطَوَّعَ خَيْرًا فَإِنَّ ٱللَّهَ شَاكِرٌ عَلِيمٌ

অর্থঃ “নিঃসন্দেহে সাফা ও মারওয়া আল্লাহ তা’আলার নিদর্শন গুলোর অন্যতম। সুতরাং যারা কা’বা ঘরে হজ্ব বা ওমরাহ পালন করে, তাদের পক্ষে এ দুটিতে প্রদক্ষিণ করাতে কোন দোষ নেই। বরং কেউ যদি স্বেচ্ছায় কিছু নেকীর কাজ করে, তবে আল্লাহ তা’আলার অবশ্যই তা অবগত হবেন এবং তার সে আমলের সঠিক মুল্য দেবেন।”


৪.সূরা বাকারা ১৯৭ নম্বর আয়াতে এসেছে,

٤ٱلْحَجُّ أَشْهُرٌ مَّعْلُومَٰتٌۚ فَمَن فَرَضَ فِيهِنَّ ٱلْحَجَّ فَلَا رَفَثَ وَلَا فُسُوقَ وَلَا جِدَالَ فِى ٱلْحَجِّۗ وَمَا تَفْعَلُوا مِنْ خَيْرٍ يَعْلَمْهُ ٱللَّهُۗ وَتَزَوَّدُوا فَإِنَّ خَيْرَ ٱلزَّادِ ٱلتَّقْوَىٰۚ وَٱتَّقُونِ يَٰٓأُولِى ٱلْأَلْبَٰبِ .

অর্থঃ “হজ্জের কয়েকটি মাস আছে সুবিদিত। এসব মাসে যে লোক হজ্জ্বের পরিপূর্ণ নিয়ত করবে, তার পক্ষে স্ত্রীও সাথে নিরাভরণ হওয়া জায়েজ নয়। না অশোভন কোন কাজ করা, না ঝাগড়া-বিবাদ করা হজ্জ্বের সেই সময় জায়েজ নয়। আর তোমরা যাকিছু সৎকাজ কর, আল্লাহ তো জানেন। আর তোমরা পাথেয় সাথে নিয়ে নাও। নিঃসন্দেহে সর্বোত্তম পাথেয় হচ্ছে আল্লাহর ভয়। আর আমাকে ভয় করতে থাক, হে বুদ্ধিমানগন! তোমাদের উপর তোমাদের পালনকর্তার অনুগ্রহ অন্বেষণ করায় কোন পাপ নেই।”


৫.সূরা বাকারা ১৯৬ নম্বর আয়াতে এসেছে, 

وَأَتِمُّوا ٱلْحَجَّ وَٱلْعُمْرَةَ لِلَّهِۚ فَإِنْ أُحْصِرْتُمْ فَمَا ٱسْتَيْسَرَ مِنَ ٱلْهَدْىِۖ وَلَا تَحْلِقُوا رُءُوسَكُمْ حَتَّىٰ يَبْلُغَ ٱلْهَدْىُ مَحِلَّهُۥۚ فَمَن كَانَ مِنكُم مَّرِيضًا أَوْ بِهِۦٓ أَذًى مِّن رَّأْسِهِۦ فَفِدْيَةٌ مِّن صِيَامٍ أَوْ صَدَقَةٍ أَوْ نُسُكٍۚ فَإِذَآ أَمِنتُمْ فَمَن تَمَتَّعَ بِٱلْعُمْرَةِ إِلَى ٱلْحَجِّ فَمَا ٱسْتَيْسَرَ مِنَ ٱلْهَدْىِۚ فَمَن لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ ثَلَٰثَةِ أَيَّامٍ فِى ٱلْحَجِّ وَسَبْعَةٍ إِذَا رَجَعْتُمْۗ تِلْكَ عَشَرَةٌ كَامِلَةٌۗ ذَٰلِكَ لِمَن لَّمْ يَكُنْ أَهْلُهُۥ حَاضِرِى ٱلْمَسْجِدِ ٱلْحَرَامِۚ وَٱتَّقُوا ٱللَّهَ وَٱعْلَمُوٓا أَنَّ ٱللَّهَ شَدِيدُ ٱلْعِقَابِ

অর্থঃ “আর তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ্ব ওমরাহ পরিপূর্ণ ভাবে পালন কর। যদি তোমরা বাধা প্রাপ্ত হও, তাহলে কোরবানীর জন্য যাকিছু সহজলভ্য, তাই তোমাদের উপর ধার্য। আর তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত মাথা মুন্ডন করবে না, যতক্ষণ না কোরবাণী যথাস্থানে পৌছে যাবে। যারা তোমাদের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়বে কিংবা মাথায় যদি কোন কষ্ট থাকে, তাহলে তার পরিবর্তে রোজা করবে কিংবা খয়রাত দেবে অথবা কুরবানী করবে। আর তোমাদের মধ্যে যারা হজ্জ্ব ওমরাহ একত্রে একই সাথে পালন করতে চাও, তবে যাকিছু সহজলভ্য, তা দিয়ে কুরবানী করাই তার উপর কর্তব্য। বস্তুতঃ যারা কোরবানীর পশু পাবে না, তারা হজ্জ্বের দিনগুলোর মধ্যে রোজা রাখবে তিনটি আর সাতটি রোযা রাখবে ফিরে যাবার পর। এভাবে দশটি রোযা পূর্ণ হয়ে যাবে। এ নির্দেশটি তাদের জন্য, যাদের পরিবার পরিজন মসজিদুল হারামের আশে-পাশে বসবাস করে না। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক। সন্দেহাতীতভাবে জেনো যে, আল্লাহর আযাব বড়ই কঠিন।”


৬.সূরা আল ইমরান ৯৭ নম্বর হাদিসে এসেছে,

وَلِلّٰهِ عَلَی النَّاسِ حِجُّ الْبَیْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ اِلَیْهِ سَبِیْلًا وَمَنْ کَفَرَ فَاِنَّ اللهَ غَنِیٌّ عَنِ الْعٰلَمِیْنَ

অর্থঃ ”আর এ ঘরে হজ্ব করা হলো মানুষের উপর আল্লাহর প্রাপ্য, যে লোকের সামর্থ্য রয়েছে এ পর্যন্ত পৌঁছার। আর যে লোক তা মানেনা। আল্লাহ সারা বিশ্বের কোন কিছুরই পরোয়া করেন না।”


৭.সূরা বাকারা ১৯৯ নম্বর আয়াতে এসেছে,

ثُمَّ أَفِيضُوا مِنْ حَيْثُ أَفَاضَ ٱلنَّاسُ وَٱسْتَغْفِرُوا ٱللَّهَۚ إِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ

অর্থঃ “অতঃপর তওয়াফের জন্যে দ্রুতগতিতে সেখান থেকে ফিরে আস, যেখান থেকে সবাই ফিরে। আর আল্লাহর কাছেই মাগফেরাত কামনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাকারী, করুনাময়।”


৮.সূরা হজ্ব ২৮ নাম্বার আয়াতে এসেছে, 

لِّيَشْهَدُوا مَنَٰفِعَ لَهُمْ وَيَذْكُرُوا ٱسْمَ ٱللَّهِ فِىٓ أَيَّامٍ مَّعْلُومَٰتٍ عَلَىٰ مَا رَزَقَهُم مِّنۢ بَهِيمَةِ ٱلْأَنْعَٰمِۖ فَكُلُوا مِنْهَا وَأَطْعِمُوا ٱلْبَآئِسَ ٱلْفَقِيرَ

অর্থঃ “যাতে তারা তাদের কল্যাণের স্থান পর্যন্ত পৌছে এবং নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণ করে তাঁর দেয়া চতুস্পদ জন্তু যবেহ করার সময়। অতঃপর তোমরা তা থেকে আহার কর এবং দুঃস্থ-অভাবগ্রস্থকে আহার করাও।”


৯.সূরা হজ্জ ২৯ নম্বর আয়াতে এসেছে,

ثُمَّ لْيَقْضُوا تَفَثَهُمْ وَلْيُوفُوا نُذُورَهُمْ وَلْيَطَّوَّفُوا بِٱلْبَيْتِ ٱلْعَتِيقِ

অর্থঃ “এরপর তারা যেন দৈহিক ময়লা দূর করে দেয়, তাদের মানত পূর্ণ করে এবং এই সুসংরক্ষিত গৃহের তাওয়াফ করে।”


১০.সূরা মায়েদা ৯৫ নম্বর আয়াতে এসেছে,

يٰا اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنْوْا لَا تَقْتُلُوْ الصَّيْدَ وَاَنْتُمْ حُرُمٌ 

অর্থঃ “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ইহরাম কারীদের জন্য হারাম করা হয়েছে, স্থল শিকার, যতক্ষণ ইহরাম অবস্থায় থাক।”


হজ্জ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে উপরোক্ত আয়াতগুলো নাযিল হয়েছে।


হজ্জ সম্পর্কে হাদিস



১.সহীহ বুখারি  ১৫২১ নম্বর হাদীসে এসেছে,

قَالَ سَمِعْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ مَنْ حَجَّ للهِ÷ فَلَمْ يَرْفُثْ وَلَمْ يَفْسُقْ رَجَعَ كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ

অর্থঃ আবূ হুরাইরা (রাঃ)বর্ণনা করে বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে বলতে শুনেছিঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ করলো এবং অশালীন কথাবার্তা ও গুনাহ হতে বিরত রইল, সে ঐ দিনের মত নিষ্পাপ হয়ে হজ্জ হতে ফিরে আসবে যেদিন তার মা জন্ম দিয়েছিল।”


২.আবু দাউদ ১৭২১ নম্বর হাদীসে এসেছে,

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ الأَقْرَعَ بْنَ حَابِسٍ، سَأَلَ النَّبِيَّ ﷺ  فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ الْحَجُّ فِي كُلِّ سَنَةٍ أَوْ مَرَّةً وَاحِدَةً قَالَ ‏ “‏ بَلْ مَرَّةً وَاحِدَةً فَمَنْ زَادَ فَهُوَ تَطَوُّعٌ ‏”‏.‏

অর্থঃ ”ইবন আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। আকরা ইবন হাবিস (রাঃ) নবী করীম (সা)  কে জিজ্ঞস করেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! হজ্জ কি জীবনে প্রতি বছরই ফরয, নাকি জীবনে একবার? তিনি বলেন, বরং (জীবনে) একবার। এর অধিক যদি কেউ করে তবে তা তার জন্য অতিরিক্ত।”


৩.সহীহ বুখারী ১৫১৯ নম্বর হাদিসে এসেছে,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ سُئِلَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَيُّ الأَعْمَالِ أَفْضَلُ قَالَ إِيمَانٌ بِاللهِ وَرَسُولِهِ قِيلَ ثُمَّ مَاذَا قَالَ جِهَادٌ فِي سَبِيلِ اللهِ قِيلَ ثُمَّ مَاذَا قَالَ حَجٌّ مَبْرُورٌ

অর্থঃ আবূ হুরাইরা (রাঃ) বর্ণনা করেন,নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে জিজ্ঞেস করা হলো, সর্বোত্তম আমল কোনটি? তিনি বললেনঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনা। জিজ্ঞেস করা হল , অতঃপর কোনটি? তিনি বললেনঃ আল্লাহর পথে জিহাদ করা। জিজ্ঞেস করা হল, অতঃপর কোনটি? তিনি বলেনঃ হজ্জ-ই-মাবরূর (মাকবূল হজ্জ)।


৪.সুনানে মাজাহ ২৯৯৪ নম্বর হাদিসে এসেছে,

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ ‏ “‏عُمْرَةٌ فِي رَمَضَانَ تَعْدِلُ حِجَّةً ‏

অর্থঃ”হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা)  বলেছেন, রমযান মাসের উমরা হজ্জের সমতুল্য।”


৫.সহীহ বুখারী ৫৯১৫ নম্বর হাদিসে এসেছে,

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ يُهِلُّ مُلَبِّدًا يَقُولُ: لَبَّيْكَ اللّٰهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ.

অর্থঃ আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা)  -কে মাথার চুল জড়ানো অবস্থায় তালবিয়াহ্ বলতে শুনেছি “হে আল্লাহ! আমি তোমার দরবারে উপস্থিত হয়েছি! আমি তোমার খিদমাতে উপস্থিত হয়েছি। তোমার কোন শারীক নেই। আমি তোমার দরবারে উপস্থিত। সব প্রশংসা, অনুগ্রহের দান তোমারই এবং সমগ্র রাজত্বও তোমারই, তোমার কোন শারীক নেই।”


৬.সুনানে আন-নাসাই ২৬২২ নম্বর হাদীসে এসেছে,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” الْحَجَّةُ الْمَبْرُورَةُ: لَيْسَ لَهَا جَزَاءٌ إِلَّا الْجَنَّةُ، وَالْعُمْرَةُ إِلَى الْعُمْرَةِ كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُمَا 

অর্থঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘মাবরূর’ (কবুল হওয়া) হজ্জের জন্য জান্নাত ব্যতীত কোন প্রতিদান নেই। আর এক উমরা অন্য উমরার মধ্যবর্তী সময়ের জন্য গুনাহর কাফফারা হয়।


৭.সুনানে আন-নাসাই ২৬২১ নম্বর হাদীসে এসেছে,

 عَنْ أَبِي رَزِينٍ، أَنَّهُ قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ أَبِي شَيْخٌ كَبِيرٌ، لَا يَسْتَطِيعُ الْحَجَّ، وَلَا الْعُمْرَةَ، وَلَا الظَّعْنَ، قَالَ: «فَحُجَّ، عَنْ أَبِيكَ، وَاعْتَمِرْ»


অর্থঃ আবূ  রুযাইন (রাঃ)বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমার পিতা একজন অতিবৃদ্ধ লোক, হজ্জ ও উমরা করার এবং বাহনে আরোহণেরও ক্ষমতা তাঁর নেই। তিনি (রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) বললেন, তাহলে তুমি তোমার পিতার পক্ষ থেকে হজ্জ ও উমরা আদায় কর।



হজ্জের গুরুত্ব ও ফজিলত 



হজের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসে অসংখ্য আয়াত এসেছে এ সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যারা মহান স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জনের আশায় হজ আদায় করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম তাদের ব্যাপারে গুনাহ মাফ ও জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান করেছেন।এছাড়াও হজ করার মাধ্যমে নিজেদের গুনাহ মাফ করিয়ে আল্লাহর পথে ফিরে আসা যায়।




সর্বোপরি সামর্থ্যবান ব্যক্তির ওপর একবার হলেও হজ ফরজ। তাই মহান আল্লাহ তা'আলা যেন আমাদের সবাইকে হজ করার তৌফিক দান করে তার জন্য দোয়া করা উচিত।

*

إرسال تعليق (0)
أحدث أقدم