আসরের নামাজের পর নফল নামাজ পড়া যাবে কি

আসরের নামাজের পর নফল নামাজ পড়া যাবে কি


আল্লাহ আমাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম আল্লাহ তা’আলা নামাজের হিসাব নিবেন। ফরজ নামাজ ছাড়াও সুন্নত ওয়াজিব এবং নফল নামাজ রয়েছে এই নামাজগুলো ফরজ নামাজের আগে বা পরে আদায় করা যায়।এর ভিতরে নফল নামাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।কিন্তু আমরা অনেকেই কখন কখন নফল নামাজ পড়া  সম্পর্কে জানিনা । তাই আমরা আজ এই পোষ্টের মাধ্যমে নফল নামাজ কি, নফল নামাজ কখন কখন পড়া যায় এবং আসরের পর নফল নামাজ পড়া যাবে কিনা এবং  নফল নামাজ পড়ার ফজিলত সম্পর্কে জানব।


আসরের নামাজের পর নফল নামাজ পড়া যাবে কি

আমরা আজ এই আর্টিকেলে আলোচনা করব আসরের নামাজের পর নফল নামাজ পড়া যাবে কি



নফল নামাজ কি


নফল অর্থ ”অতিরিক্ত”। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় ফরজ নামাজ পড়ার পর অতিরিক্ত যে নামাজ আদায় করা হয় সেই নামাজকে এই নফল নামাজ বলা হয়।



নফল নামাজ কখন কখন পড়া যায়


কিছু কিছু সময় ব্যতীত অন্য সব সময়ে নফল নামাজ আদায় করা যায়। নফল নামাজের মাধ্যমে নৈকট্য লাভ করা যায়।সূর্য উদয়ের ১৫ মিনিট, আসর ও মাগরিবের ভেতরের সময়টুকু এবং  সূর্যাস্তের ১৫ মিনিট নফল নামাজ আদায় করা মাকরুহ বা নিষিদ্ধ । এছাড়া অন্য যেকোনো সময়ে নফল নামাজ আদায় করা যায়।



আসরের নামাজের পর নফল নামাজ পড়া যাবে কি


না আসরের নামাজের পর থেকে মাগরিবের নামাজের আগ পর্যন্ত নফল নামাজ আদায় করা মাকরূহ।


সহিহ মুসলিম হাদিসে এসেছে, আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  ”আসরের পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত নামাজ পড়তে নিষেধ করেছেন।”



কখন কখন নফল নামাজ আদায় করা মাকরূহ


১.সহিহ মুসলিম হাদিসে, এসেছে ফরজ উদয় হওয়ার পর দুই রাকাত সুন্নাত থেকে অতিরিক্ত নামাজ পড়া মাকরূহ।(সহিহ মুসলিম হাদিস নং- ১১৮৫)


২.সহীহ বুখারী হাদীসে, এসেছে ফরজ নামাজের পর সূর্য উদয় হওয়া পর্যন্ত নফল বা  সুন্নাত নামাজ পড়া মাকরূহ।(সহিহ বুখারি হাদিস নং- ৫৫১)


৩.সহীহ বুখারি হাদিসে, এসেছে আসরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত  নফল নামাজ পড়া মাকরুহ।(সহিহ বুখারি হাদিস নং- ৫৫১)


৪.কানাজুল উম্মাল হাদিসে, এসেছে জুম্মার দিনে ইমাম যখন জুমার খুতবার জন্য বের হন, তখন থেকে ফরজ নামাজ থেকে  ফারেক হওয়া পর্যন্ত নফল নামাজ পড়া মাকরুহ।(কানযুল উম্মালহাদিস নং- ২১২১২)


৫.সহীহ মুসলিম হাদিসে, এসেছে ইকামাতে সময় নফল নামাজ আদায় করা মাকরূহ। (সহিহ মুসলিম হাদিস নং- ১১৬০)


তবে ফরজের সুন্নাতের অত্যাধিক গুরুত্বের কারণে ইকামতের পরও মসজিদের কোন এক কোণে তা আদায় করতে বলা হয়েছে। যদি দ্বিতীয় রাকাত পাওয়ার পুরোপুরি সম্ভাবনা থাকে।(সহিহ মুসলিম হাদিস নং- ১১৯৩; সহিহ বুখারি হাদিস নং- ১০৯৩)


৬.সুন্নাত নামাজ আদায় করতে গেলে যদি  ফরজ নামাজের সময় শেষ হয়ে যায়,যদি  এত সময় কম থাকে তখন সুন্নাত নামাজ আদায় করা মাকরূহ ।


৭.সহীহ মুসলিম হাদিসে, এসেছে পেটে তীব্র ক্ষুধা নিয়ে নফল নামাজ আদায় করা মাকরূহ । কারণ তখন নামাজের থেকে খাবারের দিকে মনোযোগ বেশি থাকে।(সহিহ মুসলিম হাদিস নং- ৮৬৯)


৮.সহীহ মুসলিম হাদিসে, এসেছে মল-মুত্রের অতিরিক্ত বেগ হলে সেই অবস্থায় নফল নামাজ আদায় করা মাকরূহ।(সহিহ মুসলিম হাদিস নং- ৮৬৯)


৯.ঈদের দিন ঈদের নামাজের আগে নফল নামাজ আদায় করা মাকরূহ।


১০.ঈদের দিনে ঈদগাহ মাঠে ঈদের নামাজের আগে ও পরে নফল নামাজ আদায় করা মাকরুহ।


১১.সহীহ বুখারী মুসলিম ও নাসাঈ হাদিসে, এসেছে শুধুমাত্র আরাফার ময়দানে বিশেষ করে হজ যাত্রীদের জন্য জোহর আর আসরের মধ্যবর্তী সময়ে নফল নামাজ পড়া মাকরুহ এবং মুজদালিফায় বিশেষ করে হজ যাত্রীদের জন্য মাগরিব ও এশার মধ্যবর্তী সময়ে নফল নামাজ পড়া মাকরুহ।(সহিহ মুসলিম হাদিস নং- ১২৩৭, সহিহ বুখারি হাদিসনং- ১৫৬২, নাসায়ি হাদিস নং- ৬৫৪)



নফল নামাজ পড়ার ফজিলত


নফল নামাজের ফজিলত অনেক। এই নফল নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি সেজদা করা যায় । যার ফলে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়।


১.অধিক নফল নামাজের মাধ্যমে জান্নাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সালামের  সঙ্গ লাভ করা যায়।

সহীহ মুসলিম হাদিসে এসেছে, সাহাবী রবিয়া আসলামী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বর্ণনা করেন, আমি কখনো কখনো রাতে নবীজির সঙ্গে থাকতাম, এক রাতে আমি তার জন্য অজু ও ইস্তেঞ্জার পানি ব্যবস্থা করলাম। তিনি খুশি হয়ে বললেন, রবিয়া তুমি যা খুশি চাইতে পারো, রবিয়া বললেন, তখন আমি বললাম জান্নাতে আপনার সঙ্গে থাকতে চাই। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (আর কি চাও এবারও রবিয়ার একই উত্তর) তিনি বললেন, আমি তখন বললাম আমার ওই একটাই চাওয়া এ কথা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে কাটরা ”কাসরাতুস সুজুদ” তথা বেশি বেশি নফল নামাজের মাধ্যমে আমাকে এ বিষয়ে সাহায্য করো। (সহীহ মুসলিম হাদিস নং-৪৮৯)


২.বেশি বেশি নফল নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর ভালোবাসা ও নৈকট্য লাভ করা যায়।

সহীহ বুখারী হাদিসে এসেছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করে বলেছেন, আমার বান্দা নফল নামাজের মাধ্যমে আমার নৈকট্য অর্জন করতে থাকে, একপর্যায়ে আমি তাকে মহাব্বত করতে থাকি, যখন তাকে মোহাব্বত করতে থাকি তখন আমি তার কান হয়ে যায়, যা দিয়ে সে শোনে। আমি তার চোখ হয়ে যায়, যা দিয়ে সে দেখে। আমি তার হাত হয়ে যায় যা দিয়ে সে আঘাত করে। আমি তার পা হয়ে যায় যা দিয়ে সে হাটে।  যদি সে আমার কাছে কোন প্রার্থনা করে, আমি তার প্রার্থনা কবুল করি। যদি সে আমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, অবশ্যই আমি তাকে আশ্রয় দেই। (সহীহ বুখারী হাদিস নং- ৬১৩৭)


৩.বেশি বেশি নফল নামাজের মাধ্যমে অধিক মর্যাদা লাভ করা যায় এবং গুনাহ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

সহীহ মুসলিম হাদিসে এসেছে, এক সাহাবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করেন, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় কাজ কি? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম উত্তরে বলেন, তুমি আল্লাহর জন্য বেশি বেশি সেজদা করো বা নফল নামাজ আদায় করো। কারণ তুমি যখন আল্লাহর জন্য একটি সেজদা করবে তখনই তার বিনিময়ে আল্লাহ তোমার একটা গুনাহ থেকে মুক্তি দেন এবং একটি করে মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন।



৪.অধিক নফল নামাজের মাধ্যমে মনের আশা পূরণ করা যায়।নফল নামাজের ভিতরে একটি নামাজ হল তাহাজ্জুদ এর নামাজ। এই নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সবথেকে নিকটে পৌঁছানো যায় । এই নামাজের মাধ্যমেই আল্লাহর কাছে যা চাওয়া হয় আল্লাহ তা পূরণ করে দেন।




সর্বোপরি নফল নামাজ আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফজিলতপূর্ণ নামাজ। এই নামাজের মাধ্যমেই আমরা আল্লাহর ভালোবাসা এবং নৈকট্য লাভ করতে পারি। সেজদার মাধ্যমে সবথেকে বেশি আল্লাহর কাছে পৌঁছানো যায়। তাই বেশি বেশি নফল নামাজের মাধ্যমে নিজেদের পাপ মোচন করতে পারি এবং জান্নাত লাভ করতে পারি।

*

إرسال تعليق (0)
أحدث أقدم