জ্বরের কুরআনী চিকিৎসা

জ্বরের কুরআনী চিকিৎসা


বর্তমানে আবহাওয়া পরিবর্তন হলেই মানুষ জ্বরে ভোগেন। নানা কারণেই মানুষের জ্বর আসতে পারে।জ্বরের কারণেই শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। তাই জ্বর কমানোর জন্য কুরআন ও হাদিসে জ্বর হলে বিভিন্ন ধরনের আমল বা দোয়ার কথা বলা হয়েছে।তাই আমরা আজ কুরআন ও হাদিসের আলোকে জ্বর কমানোর দোয়া বা জ্বর কমানোর চিকিৎসা জ্বর কমানোর উপায় সম্পর্কে কিছু আলোচনা করব। 




আমরা আজ এই আর্টিকেলে আলোচনা করব জ্বরের কুরআনী চিকিৎসা



জ্বর কি 


আমরা সাধারণ মানুষ জ্বর কে রোগ বলে থাকি। কিন্তু চিকিৎসকের ভাষায় জ্বর কোন রোগ নয় বরং জ্বর হল  শরীরের ভিতরে কোন রোগের উপসর্গ বা লক্ষণ।শরীরের ভিতরে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা অন্য কোন জীবাণুর আক্রমণের ফলে রোগ সৃষ্টি হয় তখন সেই রোগ ঠেকাতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার তার কোষ থেকে পাইরোজেন নামক এক ধরনের হরমোন নিঃসরণ করে যা রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।এই পাইরোজেন নামক হরমোন নিঃসরণ এর ফলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় এবং তা জ্বরে রূপ নেয়।


জ্বর কেন হয়


১.শরীরে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা অন্য কোন জীবাণুর আক্রমণের ফলে জ্বর সৃষ্টি হয়।


২.শরীরের ভিতরে বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন এর কারণেও জ্বর হয়।


৩.বিভিন্ন ধরনের টিকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ফলো জ্বর আসতে পারে ।


৪.শরীরে যদি ফোড়া বা টিউমার দেখা দেয় তাহলেও এই ফোড়া বা টিউমারের কারণে জ্বর আসতে পারে।


৫.শরীরে রিউমেটিক আর্থ্রাইটিস বা সি রিয়াক্টিভ প্রোটিন এর সমস্যা থাকলে জ্বর আসতে পারে।


৬.প্রস্রাবে  ইনফেকশন বা প্রসাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়ার কারণেও জ্বর আসতে পারে।


৭.শরীরের কিছু মারাত্মক রোগ যেমনঃ কিডনিতে সমস্যা,ফুসফুসে সমস্যা বা লিভারের সমস্যা দেখা দিলেও জ্বর আসতে পারে।


৮.শরীরে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস আক্রমণ করে যার ফলে করোনা বা টাইফয়েড এর মত রোগ সৃষ্টি হয় যার  শরীরে জ্বর আসে।


জ্বর হলে কুরআনী চিকিৎসা


কুরআন ও হাদিসে জ্বর হলে বিভিন্ন ধরনের আমল বা দোয়ার কথা বলা হয়েছে।


সহীহ মুসলিম ও বুখারি হাদিসে এসেছে, হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করে বলেছেন, জ্বর হল জাহান্নামের আগুনের একটি অংশ ।(কারও জ্বর হলে) তোমরা পানি ঢেলে এটাকে ঠান্ডা করো।রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জ্বরে ভুগতেন তখন তিনি নিজের শরীরে পানি ঢালতেন বেশি করে পানি ঢালতেন এবং নিন্মুক্ত দোয়াটি পাঠ করতেন।


জ্বর কমানোর দোয়া


হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জ্বর ও গলা ব্যাথা হলে নিন্মুক্ত  দোয়া টি পড়তেন এবং তার উম্মতের পড়ার জন্য শিখিয়ে দিয়েছেন।


দোয়াটি হলঃ


بِسْمِ اللَّهِ الْكَبِيرِ أَعُوذُ بِاللَّهِ الْعَظِيمِ مِنْ شَرِّ كُلِّ عِرْقٍ نَعَّارٍ وَمِنْ شَرِّ حَرِّ النَّارِ


বাংলা উচ্চারণঃ 'বিসমিল্লাহিল কাবির, আউজুবিল্লাহিল আজিম, মিন শাররি কুল্লি ইরকিন নায়্যার, ওয়া মিন শাররি হাররিন নার।' (মুজামুল কাবির, তাবারানি, তিরমিজি)


অর্থঃ “মহান আল্লাহর নামে, দয়াময় আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই, শিরা-উপশিরায় শয়তানের আক্রমণ থেকে। শরীরের আগুনের উত্তাপের মন্দ প্রভাব থেকে।”


তিরমিজি হাদিসে এসেছে,  হযরত সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এরশাদ করে বলেন,  জ্বর হলো জাহান্নামের একটি টুকরো। তোমাদের কারোর জ্বর হলে সে যেন তা পানি ঢেলে ঠান্ডা করে। জ্বর কমানোর নিয়ম হচ্ছে ফজরের নামাজের পর সূর্যোদয়ের আগে প্রবাহমান কোন ঝর্ণাই নেমে স্রোত প্রবাহের দিকে মুখ করে নিন্মুক্ত দোয়াটি পাঠ করবে।


দোয়াটি হলঃ


بِسْمِ اللَّهِ اللَّهُمَّ اشْفِ عَبْدَكَ وَصَدِّقْ رَسُولَكَ


বাংলা উচ্চারণঃ ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মাশফি আবদাকা ওয়া সাদ্দিক রাসুলাকা’


অর্থঃ”আল্লাহ তাআলার নামে; হে আল্লাহ! তোমার বান্দাকে রোগমুক্ত করে দাও এবং তোমার রাসুলকে সত্যবাদী প্রমাণ কর।”


তারপর সে যেন ঝর্ণার পানিতে তিনবার ডুব দেয়। এভাবে সে তিন দিন অতিক্রম করবে। তিন দিনও যদি তার জ্বর না ছাড়ে তাহলে সে পাঁচ দিন এভাবে অতিক্রম করবে। পাঁচ দিনেও যদি জ্বর ভালো না হয় তাহলে সে সাত দিন এভাবে অতিক্রম করবে। সাত দিনেও যদি ভালো না হয় তাহলে সে নয় দিন এভাবে অতিক্রম করবে।নিশ্চয়ই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর আদেশে নয় দিনের বেশি তার শরীরে জ্বর অতিবাহিত করবে না।



তিরমিজি হাদিসে এসেছে, হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,  রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার এক  জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দেখতে গিয়ে বলেন, তুমি সুসংবাদ গ্রহণ করো। আল্লাহ তা'আলা বলেন সেটা আমার অগ্নি আমার গুনাহগার বান্দার উপর চাপিয়ে দিয়ে থাকি। যাতে উহা তার জাহান্নামের শাস্তির অংশ হয়ে যায়।অর্থাৎ পরকালের পরিবর্তে দুনিয়াতেই সে শাস্তি পেয়ে যায়।



তিরমিজি হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত হাসান রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত,  তিনি গুনাহের কারণে তাদের মর্যাদার ঘাটতি পূরণের কাফফারা স্বরূপ তারা রাতের বেলায় জ্বরের আকাঙ্ক্ষা করতেন । যাতে জ্বরের কারণে তাদের গুনাহ ক্ষমা করা হয়।



জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়


মাথায় জলপোট্রি বা পানি ঢাললে শরীরের তাপমাত্রা কমে হলে জ্বর কমতে পারে ।


প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা।


তরল জাতীয় খাবার খাওয়া।


বিশ্রাম নেওয়া।


উষ্ণ গরম পানি দিয়ে গোসল করা।


মধু বা আদা মিশ্রিত পানি পান করা।


অতিরিক্ত মাত্রায় জ্বর থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।



সর্বোপরি জ্বরের মাধ্যমে আল্লাহ আমাদেরকে গুনাহ ও মাফ করার সুযোগ করে দেন। তাই জ্বর আসলে আমরা অবশ্যই পুরানো হাদিস অনুযায়ী দোয়া ও আমল করব যাতে আল্লাহ খুশি হয়।

*

إرسال تعليق (0)
أحدث أقدم