ইস্তেখারার দোয়া বাংলা উচ্চারণ অর্থ

ইস্তেখারার দোয়া বাংলা উচ্চারণ অর্থ


দৈনন্দিন জীবনে চলার জন্য আমাদের বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে হয় বা বিভিন্ন ধরনের কাজের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।  কোন কাজটা আমাদের জন্য কল্যাণকর বা কোন কাজটা আমাদের জন্য অকল্যাণ তার জন্য আল্লাহ তা’আলা একটা সুনির্দিষ্ট নামাজের কথা বলেছেন। 

যে নামাজের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর তায়ালার পক্ষ থেকে নির্দেশনা পেয়ে থাকি। সেই নামাজের নাম হল ইস্তেখারা নামাজ। কিন্তু আমরা অনেকেই এই ইস্তেখারার নামাজ সম্পর্কে জানিনা। তাই আমরা এই পোষ্টের মাধ্যমে ইস্তেখারা নামাজের নিয়ম,ইস্তেখারা নামাজের দোয়া, ইস্তেখারা নামাজের নিয়ত এবং ইস্তেখারা নামাজের ফজিলত সম্পর্কে কিছু তথ্য জানবো।




আমরা আজ এই পোস্টে আলোচনা করব ইস্তেখারার দোয়া বাংলা উচ্চারণ অর্থ



ইস্তেখারা কি


ইস্তেখারা আরবি শব্দ । এর আভিধানিক অর্থ হলো আল্লাহর কাছে কোন জিনিসের জন্য কল্যাণ কামনা করা।কোন কাজের সিদ্ধান্ত নেওয়া আপনার জন্য কল্যাণকর বা আপনার জন্য বিপদজনক আল্লাহর কাছ থেকে তার দিকনির্দেশনা নেওয়ার জন্য যে নামাজ পড়া হয় তাকেই ইস্তেখারার নামাজ বলে। 



ইস্তেখারার নামাজের নিয়ম


ইস্তেখারা করা সুন্নত। কোন কাজ বা সিদ্ধান্ত নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতাই ভুগলেই মূলত ইস্তেখারার নামাজ পড়া হয় ।এই নামাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকরী।


ইস্তেখারার নামাজের জন্য প্রথমে উত্তম রূপে ওযু করা ।


দুই রাকাত নফল নামাজের নিয়ত করে নামাজ আদায় করা।


নামাজের সুরা ফাতেহার সাথে মিলিয়ে যে কোন সূরা পাঠ করা ।


নামাজের শেষে সালাম ফিরিয়ে একাগ্রতার সহিত আল্লাহর কাছে বিনয়ী ও আন্তরিকতা প্রকাশ করা। এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দুরুদ পাঠ করে একটি দোয়া পাঠ করা।



ইস্তেখারার নামাজের নিয়ত


অন্যান্য সব নামাজের মতই ইস্তেখারা নামাজ আদায় করার সময় নিয়ত করতে হয়।


নিয়তটি হলঃ


বাংলা উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রাকয়াতাই সালাতিল ইস্তেখারাতি নাফলা, মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারিফাতি ,আল্লাহু আকবার।


বাংলা অর্থঃ আমি ক্বিবলামুখি হয়ে দাঁড়িয়ে ইস্তেখারা’র নফল নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে নিয়ত করলাম, আল্লাহু আকবার।


উপরোক্ত নিয়তি করে ইস্তেখার নামাজ আদায় করতে হয়।



ইস্তেখারার দোয়া বাংলা উচ্চারণ অর্থ


ইস্তেখারার নামাজ শেষে একটি দোয়াটি পাঠ করতে হয়।


সহীহ বুখারী, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ ,নাসাঈ, আবু দাউদ হাদিসে এসেছে,হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সঃ) আমাদেরকে আমাদের কাজকর্মের ব্যাপারে ইস্তিখারা পড়ার নিয়ম এরুপ গুরুত্বসহকারে শিক্ষা দিতেন যেরুপ গুরুত্ব সহকারে আমাদেরকে কুরআন মজীদের কোন সূরা শিক্ষা দিতেন। তিনি বলতেন, যখন তোমাদের কেহ কোন কাজ করার ইচ্ছা করে (আর সে উহার পরিণতি সম্পর্কে চিন্তিত হয়, তখন তাহার এইভাবে ইস্তেখারা করা উচিত যে,) সে প্রথমে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করবে, এরপর এইভাবে দোয়া করবে –


اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلمِكَ وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ ، وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ، فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلاَ أَقْدِرُ وَتَعْلَمُ وَلاَ أَعْلَمُ وَأَنْتَ عَلاَّمُ الغُيُوبِ ، اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ ثم تسميه بعينه خَيْرا لِي في عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ قال أو فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي فَاقْدُرْهُ لي وَيَسِّرْهُ لي ثُمَّ بَارِكْ لي فِيهِ ، اللهم وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّه شَرٌّ لي في ديني وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي أَوْ قَالَ في عَاجِلِ أمري وَآجِلِهِ ، فَاصْرِفْنِي عَنْهُ [واصْرِفْهُ عَنِّى]، وَاقْدُرْ لِي الخَيْرَ حَيْثُ كَانَ ثُمَّ رضِّنِي به،


বাংলা উচ্চারণঃআল্লা-হুম্মা ইন্নী আস্‌তাখীরুকা বিইলমিকা অ আস্‌তাক্‌দিরুকা বি কুদরাতিকা অ আসআলুকা মিন ফায্বলিকাল আযীম, ফাইন্নাকা তাক্‌দিরু অলা আক্‌দিরু অতা’লামু অলা আ’লামু অ আন্তা আল্লা-মুল গুয়ূব। আল্লা-হুম্মা ইন কুন্তা তালামু আন্না হা-যাল আমরা ( ) খাইরুল লী ফী দীনী অ মাআ’শী অ আ’কিবাতি আমরী অ আ’-জিলিহী অ আ-জিলিহ, ফাক্‌দুরহু লী, অ য়্যাসসিরহু লী, সুম্মা বা-রিক লী ফীহ। অ ইন কুন্তা তা’লামু আন্না হা-যাল আমরা শাররুল লী ফী দীনী অ মাআ’শী অ আ’-কিবাতি আমরী অ আ’-জিলিহী অ আ-জিলিহ, ফাস্বরিফহু আন্নী অস্বরিফনী আনহু, অক্বদুর লিয়াল খাইরা হাইসু কা-না সুম্মা রায্বযিনী বিহ।


অর্থঃ ”হে আল্লাহ! আমি আপনার জ্ঞানের সাহায্যে আপনার কাছে কল্যাণ প্রার্থনা করছি। আমি আপনার শক্তির সাহায্যে শক্তি ও আপনার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি। কেননা আপনিই ক্ষমতা রাখেন; আমি ক্ষমতা রাখি না। আপনি জ্ঞান রাখেন, আমার জ্ঞান নেই এবং আপনি অদৃশ্য বিষয়ে সম্পূর্ণ পরিজ্ঞাত। হে আল্লাহ! আপনার জ্ঞানে আমার এ কাজ (নিজের প্রয়োজনের নামোল্লেখ করবে) আমার বর্তমান ও ভবিষ্যত জীবনের জন্য কিংবা বলবে আমার দ্বীনদারি, জীবন-জীবিকা ও কর্মের পরিণামে কল্যাণকর হলে আপনি তা আমার জন্য নির্ধারণ করে দিন। সেটা আমার জন্য সহজ করে দিন এবং তাতে বরকত দিন। হে আল্লাহ্‌! আর যদি আপনার জ্ঞানে আমার এ কাজ আমার দ্বীনদারি, জীবন-জীবিকা ও কর্মের পরিণামে কিংবা বলবে, আমার বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য অকল্যাণকর হয়, তবে আপনি আমাকে তা থেকে ফিরিয়ে দিন এবং সেটাকেও আমার থেকে ফিরিয়ে রাখুন। আমার জন্য সর্বক্ষেত্রে কল্যাণ নির্ধারণ করে রাখুন এবং আমাকে সেটার প্রতি সন্তুষ্ট করে দিন।”(সহিহ বুখারী ,তিরমিযি, নাসাঈ, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ ও মুসনাদে আহমাদ) ।


ইস্তেখারা নামাজের ফজিলত


ইস্তেখারা নামাজের ফজিলত অনেক।


এক হাদিসে এসেছে, হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের যেভাবে কোরআনের সেভাবেই প্রতিটি কাজের আগে আমাদের ইস্তেখারা করার শিক্ষা দিতেন।


মুস্তাদরাক হাকেম হাদিসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বনি আদমের সৌভাগ্য হল আল্লাহর কাছে ইস্তেখারা করা। বনি আদমের আরো সৌভাগ্য হল আল্লাহ তার জন্য যা নির্ধারণ করেছেন তার উপর সন্তুষ্ট থাকা। আর বনি আদমের দুর্ভাগ্য হলো আল্লাহর নিকট ইস্তেখারা করা বন্ধ করে দেওয়া। বনি আদমের আরো দুর্ভাগ্য হল আল্লাহ তার জন্য যা নির্ধারণ করেছেন তার উপর অসন্তুষ্ট হওয়া।


কোন কাজ বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আল্লাহর কাছ থেকে পরামর্শ বা দিক নির্দেশনা পাওয়া।


কোন কাজ করার আগে ইস্তেখারা নামাজ আদায় করা যার ফলে আল্লাহ সেই কাজ সফল করে দেন।



সর্বোপরি ইস্তেখারার নামাজ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই ইস্তেখারার নামাজের নামাজ পড়ার মাধ্যমেই আমরা কোন কাজের জন্য আল্লাহর কাছ থেকে দিকনির্দেশনা বা পরামর্শ পেয়ে থাকি। তাই আমাদের অবশ্যই ইস্তেখারার নামাজ সম্পর্কে সঠিক তথ্য জেনে নামাজ আদায় করা উচিত ।

*

إرسال تعليق (0)
أحدث أقدم