জরায়ু ভালো রাখার দোয়া
বর্তমানে অধিকাংশ নারীর জরায়ুতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে।বিভিন্ন কারণে জরায়ুতে সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকেই কিভাবে জরায়ু ভালো রাখা যায় সে সম্পর্কে জানেনা। তাই আমাদের আজকের এই পোস্টের আলোচ্য বিষয় হলো জরায়ু ইনফেকশনের কারণ কি, জরায়ু ইনফেকশনের লক্ষণ,জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ, জরায়ু টিউমারের লক্ষণ, জরায়ু ইনফেকশনের ঘরোয়া চিকিৎসা, জরায়ুতে ইনফেকশন হলে কি বাচ্চা হয়, জরায়ু ভালো রাখার খাবার, জরায়ু ভালো রাখার দোয়া, জরায়ু সুস্থ রাখার উপায়।
আমরা আজ এই পোস্টে আলোচনা করব জরায়ু ভালো রাখার দোয়া
জরায়ু ইনফেকশনের কারণ কি
বিভিন্ন কারণে জরায়ুতে ইনফেকশন দেখা দিতে পারে। নিচে কারণগুলো দেওয়া হলঃ
১.ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে জরায়ুতে ইনফেকশন দেখা দিতে পারে ।
২.ঘনঘন প্রসাবে ইনফেকশন দেখা দিলে এর প্রভাবে জড়াতে ইনফেকশন এর সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৩.শরীরে ইস্ট্রোজেন নামক একটি হরমোন থাকে। যা জরায়ুর টিসুকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে যদি ইস্ট্রোজেন হরমোন শরীরে কমে যায়, তাহলে জরায়ুর বাইরে থাকার টিসুগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে। যার কারণে জড়াতে ইনফেকশন দেখা দিতে পারে।
৪.অনেক সময় প্রসবের কারণে জরায়ুতে ইনফেকশন দেখা দিতে পারে। কারণ প্রসবের সময় জরায়ুতে টান লাগে বা লিগামেন্টে টান লাগে যার ফলে পরবর্তীতে জরায়ুতে ইনফেকশনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৫.অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পেলে জরায়ুর উপরে চাপ সৃষ্টি হয়। যার ফলে জরায়ুতে ইনফেকশন দেখা দিতে পারে।
৬.ঘনঘন সন্তান ধারণ করলে জরায়ুতে ইনফেকশন দেখা দিতে পারে।
৭.ঘন ঘন গর্ভপাতের কারণে জরায়ুতে ইনফেকশন দেখা দিতে পারে।
জরায়ু ইনফেকশনের লক্ষণ
জরায়ুতে ইনফেকশন বা সমস্যা দেখা দিলে শরীরে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায় যে লক্ষণ গুলি দেখলে সহজে বোঝা যায় যে জরায়ুতে ইনফেকশন হয়েছে কি না। নিচে লক্ষণ গুলো দেওয়া হলঃ
১.তলপেটে অতিরিক্ত ব্যথা হওয়া।
২.অতিরিক্ত সাদা স্রাব যাওয়া এবং দুর্গন্ধ হওয়া।
৩.তলপেটে চাপ বা ভারী ভারী ভাব অনুভূত হওয়া।
৪.ঘন ঘন প্রস্রাবে ইনফেকশন হওয়া।
৫.মাসিকের সময় অতিরিক্ত ব্যথা হওয়া।
৬.মাসিক অনিয়মিত হওয়া।
৭.মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত হওয়া।
৮.ঘন ঘন প্রসাব হওয়া বা প্রস্রাব ক্লিয়ার না হওয়া।
৯.সহবাসের সময় অতিরিক্ত ব্যথা অনুভূত হওয়া।
১০.মেনোপজের সময় বা পরে রক্তপাত হওয়া।
১১.হঠাৎ ওজন অতিরিক্ত বৃদ্ধি পাওয়া বা কমে যাওয়া।
১২.শরীরে অতিরিক্ত ক্লান্তি বোধ হওয়া।
উপরোক্ত লক্ষণ গুলি জরায়ু ইনফেকশনের লক্ষণ হতে পারে। তাই এর যে কোন একটি লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ
বর্তমানে অধিকাংশ নারীর জড়াতে ইনফেকশন দেখা দিচ্ছে। আর এই ইনফেকশন পরবর্তীতে জরায়ু ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। জরায়ু ক্যান্সার শরীরে কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। নিচে লক্ষণ গুলো দেওয়া হলঃ
১.অতিরিক্ত রক্তপাত হওয়া।
২.অতিরিক্ত সাদা স্রাব যাওয়া।
৩.তলপেটে অতিরিক্ত ব্যথা হওয়া।
৪.সহবাসের সময় অতিরিক্ত ব্যথা হওয়া।
৫.জরায়ুতে মুখে ক্ষত হওয়া।
৬.অতিরিক্ত ওজন কমে যাওয়া।
৭.মানসিক অবসাদ বা অতিরিক্ত ও ক্লান্তিবোধ দেখা দেওয়া।
উপরোক্ত লক্ষণগুলো ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। তাই উপরোক্ত লক্ষণগুলি দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসাকের শরণাপন্ন হতে হবে।
জরায়ু টিউমারের লক্ষণ
অনেক সময় জরায়ুতে টিউমার দেখা দেয়। জরায়ুতে টিউমার দেখা দিলে শরীরে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। নিচে লক্ষণ গুলো দেওয়া হলঃ
১.অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা দেখা দেওয়া।
২.মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত হওয়া এবং দীর্ঘসময় রক্তপাত হওয়া।
৩.অতিরিক্ত সাদা স্রাব হওয়া।
৪.সহবাসের সময় অতিরিক্ত ব্যথা হওয়া বা অস্বস্তি বোধ হওয়া।
৫.মেনোপজের পরে রক্তপাত হওয়া।
৬.তলপেটে চাপ বা ভারী অনুভূত হওয়া।
৭.তলপেট ফুলে যাওয়া।
৮.প্রসাবে ইনফেকশনের সমস্যা দেখা দেওয়া।
জরায়ু ইনফেকশনের ঘরোয়া চিকিৎসা
কয়েকটি ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করলেই জরায়ু ইনফেকশন থেকে মুক্তি লাভ করা যেতে পারে।
১.অনেক সময় ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ফলে জরায়ু ইনফেকশন দেখা দেয়। তাই এই ব্যাটারিয়া ধ্বংস করার জন্য দই খুব কার্যকরী। কারণ দইয়ের মধ্যে থাকা এন্টি ব্যাকটেরিয়া যা জরায়ুর মধ্যে থাকা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে সাহায্য করে। তাই জরায়ুতে ইনফেকশন দেখা দিলে জরায়ুর চারিপাশে দই লাগানো যেতে পারে।এতে করে দ্রুত জরায়ু ইনফেকশন কমে যেতে পারে ।
২.জরায়ু ইনফেকশন দূর করার জন্য নারকেল তেল খুবই কার্যকরী। কারণ নারকেল তেলে এন্টিফাঙ্গাল থাকে। যা জরায়ুর মধ্যে থাকা ফাঙ্গাস বা ছত্রাককে দূর করে।
জরায়ুতে ইনফেকশন হলে কি বাচ্চা হয়
অনেক সময় জরায়ুতে ইনফেকশন দেখা দিলে বাচ্চা কনসেভ হয় না। কারণ জরায়ুতে ইনফেকশন দেখা দিলে সঠিকভাবে ডিম্বাণু তৈরি হতে পারে না বা ডিম্বাণু সক্রিয় হয় না। এছাড়াও জরায়ুতে ইনফেকশনের কারণে বীর্য সঠিকভাবে জরায়ুর ভিতরে প্রবেশ করতে পারে না। যার ফলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা খুব কম থাকে। তাই জরায়ু ইনফেকশন দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
জরায়ু ভালো রাখার খাবার
সঠিক খাবার নির্বাচনে মাধ্যমে যেমন শরীর সুস্থ থাকে তেমন জরায়ু ভালো রাখা যায়। নিচে জরায়ু ভালো রাখার জন্য কয়েকটি খাবারের নাম দেওয়া হল যে খাবার গুলো জরায়ু ভালো রাখতে সাহায্য করে।
১.প্রতিদিনের খাবার তালিকায় শাকসবজি যেমন- পালং শাক লেডুস পাতা ইত্যাদি রাখতে হবে। শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ভিটামিন বা খনিজ পদার্থ থাকে। যা শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোন কমাতে সাহায্য করে এবং জরায়ু ইনফেকশন প্রতিরোধ করে এবং যারা ভালো রাখে।
২.ভিটামিন সি যুক্ত ফল মূল খেতে হবে। কারণ ভিটামিন সি জরায়ুতে ক্যান্সার প্রতিরোধ করে এবং প্রজনন সিস্টেমকে সচল বা শক্তিশালী করে। যার ফলে জরায়ু ভালো থাকে।
৩. জরায়ু ভালো রাখার জন্য প্রতিদিন বাদাম বা বীজ জাতীয় খাবার খেতে হবে। কারণ বাদাম বা বীজ জাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণে ফাইবারয়েড থাকে। যা জরায়ু ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।
৪.চর্বিযুক্ত মাছ ও চর্বিহীন মাংস খেতে হবে। এতে করে জরায়ু ভালো থাকে এবং প্রজনন সিস্টেম শক্তিশালী হয়।
৫.ডার্ক চকলেট জরায়ু ভালো রাখতে সাহায্য করে। কারণ ডার্ক চকলেটে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট জরায়ুর প্রজনন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
৬.জরায়ু ভালো রাখার জন্য দুধের তৈরি যে কোন খাবার খাওয়া যেতে পারে। প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম বা ফাইবারয়েড থাকে। যা জরায়ু ভালো রাখতে সাহায্য করে।
জরায়ু ভালো রাখার দোয়া
জরায়ু সুস্থ রাখার জন্য সঠিক কোন দোয়ার তথ্য পাওয়া যায় নাই । তবে শরীর সুস্থ রাখার দোয়া করা যেতে পারে। কারণ শরীর সুস্থ থাকলেই জরায়ু বা শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সুস্থ থাকবে।তাই নিচে শরীর সুস্থ থাকার দোয়া দেওয়া হলঃ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুস্থ থাকার জন্য সব সময় আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন এবং আমাদেরকে দোয়া করতে বলেছেন।
এ সম্পর্কে সহীহ আবু দাউদ ৫০৯০ নং হাদিসে এসেছে, হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বর্ণনা করেন, আমি আমার পিতাকে বললাম, আব্বাজান আমি আপনাকে প্রতিদিন ভোরে ও সন্ধ্যায় তিন বার বলতে শুনি ”হে আল্লাহ আমার দেহ সুস্থ রাখুন”, হে আল্লাহ, “আমাকে সুস্থ রাখুন আমার শ্রবণ ইন্দ্রিয়ে”হে আল্লাহ, ”আমাকে সুস্থ রাখুন আমার দৃষ্টিশক্তিতে” ”আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নাই”।বলেন আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এই বাঁকাগুলো দ্বারা দোয়া করতে শুনেছি। সে জন্য আমিও তার নিয়ম অনুসরণ করতে ভালোবাসি।
দোয়াটি হলঃ
اللَّهُمَّ عَافِنِي فِي بَدَنِي اللَّهُمَّ عَافِنِي فِي سَمْعِي اللَّهُمَّ عَافِنِي فِي بَصَرِي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ الْكُفْرِ وَالْفَقْرِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ
বাংলা উচ্চারণঃ ”আল্লাহুম্মা আফিনি ফি বাদানি, আল্লাহুম্মা আফিনি ফি সাময়ি; আল্লাহুম্মা আফিনি ফি বাসারি। লা ইলাহা ইল্লা আনতা, আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল কুফরি ওয়াল ফাকরি। আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবিল ক্বাবারি, লা ইলাহা ইল্লা আনতা”।
অর্থঃ ”হে আল্লাহ, আমার দেহ সুস্থ রাখুন। হে আল্লাহ, আমাকে সুস্থ রাখুন আমার শ্রবণ ইন্দ্রিয়ে। হে আল্লাহ, আমাকে সুস্থ রাখুন আমার দৃষ্টিশক্তিতে। আপনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই”।
জরায়ু সুস্থ রাখার উপায়
দৈনন্দিন জীবনে কয়েকটি উপায় অবলম্বন করলেই সহজে যারাই হোক ভালো রাখা সম্ভব। নিচে কয়েকটি উপায় দেওয়া হলোঃ
১.জরায়ু ভালো রাখার জন্য একাধিক ব্যক্তির সাথে যৌন মিলন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ একাধিক ব্যক্তির সাথে যৌন মিলনের ফলে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া শরীরের ভিতরে প্রবেশ করে। যার কারণে জরায়ুতে ইনফেকশন দেখা দিতে পারে।
২.ঘন ঘন গর্ভপাত করানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
৩.পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। যে খাবারগুলো জড়ায়ে ভালো রাখতে সাহায্য করে সেই খাবারগুলো প্রতিদিনের খাবার তালিকায় রাখতে হবে।
৪.নিয়মিত হবে বা শারীরিক চর্চা করতে হবে। শারীরিক চর্চা বা ব্যায়াম জরায়ু ভালো রাখার জন্য খুবই কার্যকরী একটি উপায়।
৫.ধূমপান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৬.জরায়ুর মুখ বা যোনিপথ সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে ।
৭.অতিরিক্ত টাইট ফিট পোশাক বা জামা কাপড় পড়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
উপরোক্ত উপায়গুলো অবলম্বন করলে সহজেই জরায়ু ভালো রাখা যায় এবং বিভিন্ন ধরনের জরায়ু ইনফেকশন বা জরায়ু টিউমার বা জরায়ু ক্যান্সার থেকে মুক্তি লাভ করা যায়।
সর্বোপরি যারা ইনফেকশন দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে এবং চিকিৎসা নিতে হবে। কারণ জরায়ু ইনফেকশন অনেক সময় জরায়ু ক্যান্সার বা জরায়ু টিউমারের মত মারাত্মক রোগের লক্ষণ হতে পারে।