সকালে খালি পেটে ডিম খেলে কি উপকার হয়

সকালে খালি পেটে ডিম খেলে কি উপকার হয়


শরীর সুস্থ রাখার জন্য সারাদিনের খাবার তালিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার মাধ্যমে শরীর সুস্থ রাখা সম্ভব।তাই আমাদের আজকের এই প্রশ্নের আলোচ্য বিষয় হলো সকালে খালি পেটে সিদ্ধ ডিম খেলে কি হয়,সিদ্ধ ডিম খেলে কি গ্যাস হয়, সকালে খালি পেটে ডিম খেলে কি উপকার হয়, শরীর সুস্থ রাখার উপায়,শরীর সুস্থ রাখার খাবার তালিকা, সুস্থ থাকার জন্য করণীয়, শরীর সুস্থ রাখার দোয়া।




আমরা আজ এই পোস্টে আলোচনা করব সকালে খালি পেটে ডিম খেলে কি উপকার হয়



সকালে খালি পেটে সিদ্ধ ডিম খেলে কি হয়


সকালে খালি পেটে ডিম খাওয়ার অনেক উপকারিতা আছে । ডিমের ভিতরে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে যা শরীরে ভালো কোলেস্টেরল বা এইচডিএল বাড়াতে সাহায্য করে। শরীরে এইচডিএল এর মাত্রা বেশি হলে হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগের ঝুঁকি কম থাকে ।তাই সকালে খালি পেটে সিদ্ধ ডিম খাওয়া খুবই উপকারী এবং শরীরের জন্য বা সুস্থ থাকার জন্য খুবই কার্যকরী।



সিদ্ধ ডিম খেলে কি গ্যাস হয়





অনেকেই মনে করেন সিদ্ধ  ডিম খেলে গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে তবে এই ধারণা অনেকটাই ভুল কারণ একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের প্রতিদিন একটি ডিম খাওয়া উচিত। যদি কারোর অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থাকে। তাহলে তাদের ডিম খেলে গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম থাকে।



সকালে খালি পেটে ডিম খেলে কি উপকার হয়




সকালে খালি পেটে সিদ্ধ ডিম খাওয়ার অনেক উপকারিতা আছে। ডিম শরীরের জন্য খুবই স্বাস্থ্যকর একটি খাবার। প্রতিদিন খাবার তালিকায় একটি ডিম শরীর সুস্থ রাখার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।


  • প্রতিদিন সকালে খালি পেটে সিদ্ধ ডিম খেলে শরীরে খারাপ কলেস্টরলের মাত্রা কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। 
  • সকালে খালি পেটে সিদ্ধ ডিম খেলে হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগের ঝুঁকি কম থাকে ।
  • প্রতিদিন সকালে খালি পেটে একটি সিদ্ধ ডিম খেলে হার্ট সুস্থ বা ভালো থাকে।
  • প্রতিদিন সকালে খালি পেটে একটি ডিম খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
  • প্রতিদিন সকালে খালি পেটে একটি ডিম সিদ্ধ খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে বা শরীর ফিট থাকে ।



শরীর সুস্থ রাখার উপায়



দৈনন্দিন জীবনে সুস্থ থাকার জন্য রুটিন অনুযায়ী জীবন যাপন করতে হবে। যদি দৈনন্দিন জীবনে কয়েকটি উপায় অবলম্বন করা যায়। তাহলে সহজেই সুস্থ থাকা যেতে পারে। নিচে কয়েকটি উপায় তুলে ধরা হলোঃ




  • সকালে ঘুম থেকে উঠে শারীরিক চর্চা বা ব্যায়াম করতে হবে।
  • সঠিক সময়ে খাবার খেতে হবে।
  • একবারে অতিরিক্ত বেশি না খেয়ে অনেকবার অল্প অল্প করে খেতে হবে।
  • প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে।
  • খাবার সাথে সাথে শুয়ে বা বসে না থেকে একটু হাটাহাটি করতে হবে।
  • প্রতিদিনের খাবার তালিকায় সবুজ শাকসবজি ফলমূল রাখতে হবে।
  • অতিরিক্ত তেল মশলা ভাব ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় বা কোমল পানীয় খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • সারাদিন এ পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে এবং বিশ্রাম নিতে হবে।
  • তিন মাস অন্তর  শারীরিক চেকআপ করতে হবে।
  • অতিরিক্ত মানসিক টেনশন বা চাপমুক্ত থাকতে হবে।

উপরোক্ত কাজগুলো যদি দৈনন্দিন জীবনে রুটিন মেনে করা যায় তাহলে সহজেই সুস্থ থাকা সম্ভব।



শরীর সুস্থ রাখার খাবার তালিকা



সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিনের খাবার তালিকায় সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সঠিক খাবারের মাধ্যমে সব থেকে বেশি সুস্থ থাকা সম্ভব। নিচে কয়েকটি খাবারে তালিকা দেয়া হলো যে খাবারগুলো দৈনন্দিন জীবনের খাবার তালিকায় রাখলে শরীর সুস্থ রাখা সম্ভব।




  • প্রতিদিনের খাবার তালিকায় আঁশযুক্ত বা ফাইবারযুক্ত খাবার রাখতে হবে।
  • প্রতিদিনের খাবার তালিকায় প্রোটিনযুক্ত খাবার রাখতে হবে।
  • প্রতিদিনের খাবার তালিকায় ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে।
  • প্রতিদিনের খাবার তালিকায় সামুদ্রিক মাছ রাখতে হবে। কারণ সামুদ্রিক মাছের প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ থাকে। এটা শরীরের জন্য খুবই উপকারী এবং শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
  • প্রতিদিনের খাবার তালিকায় বাদাম জাতীয় খাবার রাখতে হবে।
  • প্রতিদিনের খাবার তালিকায় চর্বিহীন মাংস রাখতে হবে।



সুস্থ থাকার জন্য করণীয়




সুস্থ থাকার জন্য দৈনন্দিন জীবনে রুটিন অনুযায়ী চলা খুবই জরুরী। নিয়ম মেনে জীবন যাপন করলেই শরীর সুস্থ রাখা সম্ভব।সুস্থ থাকার জন্য উপরেই কিছু উপায় আলোচনা করা হয়েছে যে উপায়গুলো অবলম্বন করলেই সহজেই সুস্থ থাকা সম্ভব । আশা করি আমাদের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা সুস্থ থাকার উপায় গুলো সঠিকভাবে জানতে পারবেন।




সকালে খালি পেটে কি খেলে শরীর ভালো থাকে




সারাদিনে শরীর সুস্থ রাখার জন্য সকালে খালি পেটে সঠিক খাবার নির্বাচন করা খুবই জরুরী। সকালে খাবারের মাধ্যমেই শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টি এবং শক্তি বাড়ে। যার কারণে সারাদিনে সুস্থ থাকা সম্ভব হয়।





  • সকালে খালি পেটে উষ্ণ গরম পানির সাথে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে পান করা যেতে পারে। এতে করে শরীরে অতিরিক্ত চর্বি কমে যায় যার ফলে শরীর সুস্থ থাকে।
  • সকালে খালি পেটে খেজুর খাওয়া যেতে পারে। খেজুর শরীরে শক্তি জোগাতে সাহায্য করে। যার ফলে সারাদিনের ক্লান্তি ভাব কম হয় এবং শরীর সুস্থ এবং সতেজ থাকে।
  • সকালে খালি পেটে গ্রিন টি  খাওয়া যেতে পারে। গ্রিন টি অতিরিক্ত মেদ বা চর্বি কমাতে সাহায্য করে। যার ফলে শরীরের ওজন কমে যায় এবং শরীর ফিট রাখতে সাহায্য করে।
  • সকালে খালি পেটে ভেজানো কাঁচা ছোলা খাওয়া যেতে পারে। ভেজানো কাঁচা ছোলা শরীরে অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সাহায্য করে। যার ফলে হৃদরোগের ঝুকি কমায় । এছাড়াও কাঁচা ছোলা শরীরের শক্তি যোগাতে সাহায্য করে । যার কারণে শরীর সুস্থ থাকে।
  • সকালে খালি পেটে ওটস বা চিয়া সিড খাওয়া যেতে পারে। ওটস বা চিয়া সিড খেলে পেট ভরা ভরা থাকে। যার ফলে অনেক সময় না খেয়ে থাকা যায় এবং যার ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  • সকালে খালি পেটে পাকা পেঁপে খাওয়া যেতে পারে ।কারণ পাকা পেঁপে গ্যাস কমাতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন খালি পেটে পাকা পেপে খেলে গ্যাসের সমস্যা দূর হয়।



খালি পেটে কোন খাবার খাওয়া উচিত নয়




সকালে খালি পেটে এমন খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে যে খাবারগুলো শরীরের জন্য ক্ষতিকর। নিচে কয়েকটি খাবারের তালিকা দেয়া হলো যে খাবারগুলো সকালে খালি পেটে খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।





  • সকালে খালি পেটে মিষ্টি জাতীয় খাবার বাদ দুগ্ধ জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার বা দুগ্ধ জাতীয় খাবারের ব্যাকটেরিয়া থাকে পাকস্থলীতে প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সৃষ্টি করতে সাহায্য করে।
  • সকালে খালি পেটে অতিরিক্ত তেল মশলা জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • সকালে খালি পেটে অতিরিক্ত ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। অতিরিক্ত ভাজাপোড়া খাবার খেলে গ্যাস্টিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • সকালে খালি পেটে ইস্ট দিয়ে তৈরি যেমন- পাউরুটি, কেক, বিস্কুট, ইত্যাদি খেলা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এসব খাবার ব্যাকটেরিয়া থাকে যে ব্যাকটেরিয়া পাকস্থলীতে যেয়ে প্রদাহ সৃষ্টি করে। যার ফলে অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেয়।
  • সকালে খালি পেটে সফট ড্রিংকস বা কোমল পানিয় খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট থাকে যা মোটা হতে সাহায্য করে।



শরীর সুস্থ রাখার দোয়া



শরীর সুস্থ রাখার জন্য দৈনন্দিন জীবনে খাবার তালিকার বা শারীরিক চর্চা বা ব্যায়ামের পাশাপাশি দোয়া করা খুবই জরুরী। কারণ আল্লাহর কাছে সুস্থ থাকার জন্য দোয়া চাইতে বলেছেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তাই আমাদের সুস্থ থাকার জন্য বেশি বেশি করে আল্লাহর কাছে করতে হবে।সুস্থ থাকার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে দোয়া পাঠ করতেন। নিচে দোয়াটি দেওয়া হলোঃ



দোয়াটি হলঃ


اَللَّهُمَّ عَافِنِىْ فِىْ بَدَنِى - اَللَّهُمَّ عَافِنِىْ فِىْ سَمْعِىْ - اَللَّهُمَّ عَافِنىِ فِىْ بَصَرِىْ – لَا اِلَهَ اِلَّا اَنْتَ


বাংলা উচ্চারণঃ ”আল্লাহুম্মা আফেনি ফি বাদানি, আল্লাহুম্মা আফেনি ফি সাময়ি, আল্লাহুম্মা আফেনি বি বাসারি; লা ইলাহা ইল্লা আন্তা।”


অর্থঃ ”হে আল্লাহ! আমার দেহ সুস্থ রাখুন। হে আল্লাহ! আমাকে সুস্থ রাখুন আমার শ্রবণ ইন্দ্রিয়ে। হে আল্লাহ! আমাকে সুস্থ রাখুন আমার দৃষ্টিশক্তিতে। আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নাই।”(আবু দাউদ হাদিস নং-৫০৯০)



শরীরে সুস্থ রাখার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকাল সন্ধ্যা ফজরের ও মাগরিবের নামাজের পরে উপরোক্ত দোয়াটি তিনবার পাঠ করে শরীর মোবারক করতেন।



সর্বোপরি শরীর সুস্থ রাখার জন্য দৈনন্দিন জীবনের রুটিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।দৈনন্দিন জীবনে রুটিন অনুযায়ী এবার নিয়ম-কানুন মেনে জীবন যাপন করলে শারীরিকভাবে এবং মানসিকভাবে সুস্থ থাকা যেতে পারে।

*

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post