শিশুদের ভিটামিন ডি এর অভাবের লক্ষণ

শিশুদের ভিটামিন ডি এর অভাবের লক্ষণ


বর্তমানে অধিকাংশ শিশু ভিটামিন ডি এর অভাবে বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। মূলত ভিটামিন ডি এর অভাব হলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তাই আমাদের আজকের এই পোষ্টের আলোচ্য বিষয় হলো ভিটামিন ডি এর অভাব কেন হয়,ভিটামিন ডি এর অভাব জনিত লক্ষণ,শিশুদের ভিটামিন ডি এর অভাবের লক্ষণ,ভিটামিন ডি এর অভাবে কোন রোগ হয়,ভিটামিন ডি এর অভাবে শিশুদের কি রোগ হয়, ভিটামিন ডি এর অভাব হলে করণীয়,ভিটামিন ডি যুক্ত খাবারের তালিকা, ভিটামিন ডি ঔষধের নাম,ভিটামিন ডি ট্যাবলেট এর উপকারিতা এবং ভিটামিন ডি টেস্ট খরচ কত।




আমরা আজকে এই পোস্টে আলোচনা করব  শিশুদের ভিটামিন ডি এর অভাবের লক্ষণ



ভিটামিন ডি এর অভাব কেন হয়



বিভিন্ন কারণে শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি দেখা দিতে পারে। নিচে কারণগুলো দেওয়া হলোঃ


১.অনেক সময় বাচ্চারা জিনগত কারণে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে।


২.ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার কম খাওয়ার কারণে শরীরে ভিটামিন বি এর ঘাটতি দেখা দেয়।


৩.শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে সূর্যের আলো না লাগালে শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি দেখা দেয়।


৪.অনেক ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার হলেও শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি দেখা দিতে পারে।



ভিটামিন ডি এর অভাব জনিত লক্ষণ


শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি দেখা দিলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। যার কারণে শরীরে কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। অনেক সময় এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে বুঝতে হবে শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি দেখা দিচ্ছে নিচে লক্ষণ গুলো দেওয়া হলঃ




১.শরীরের হাড় বা মাংসপেশী দুর্বল হয়ে যাওয়া।


২.শরীরের হাড় ক্ষয় হয়ে যাওয়া।


৩.শরীরে অতিরিক্ত ক্লান্তি বোধ হওয়া।


৪.অতিরিক্ত চুল পড়ে যাওয়া।


৫.হঠাৎ করে ওজন বৃদ্ধি পাওয়া।


৬.শরীরে কেটে গেলে ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া।


৭.মানসিক অবসাদ দেখা দেওয়া।


৮.শরীরে বিভিন্ন জায়গায় যেমন মেরুদন্ড বা পিঠের ব্যথা অনুভূত হওয়া।


৯.শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথা বা হারে বা স্নায়ুতে ব্যথা অনুভূত হওয়া।


১০.শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া যার ফলে সহজেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়া।


উপরোক্ত লক্ষণ গুলি শরীরে দেখা দিলে বুঝতে হবে শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে এবং ভিটামিন ডি এর সাপ্লিমেন্ট খেতে হবে।



শিশুদের ভিটামিন ডি এর অভাবের লক্ষণ



শিশুরা অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো ভিটামিন ডি এর অভাব। নিচে কিছু লক্ষণ দেওয়া হলো যে লক্ষণ গুলি শিশুদের মধ্যে দেখা দিলে বুঝতে হবে শিশুদের শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব দেখা দিছে।




১.শিশুদের হাড় বা বুকের পাঁজর নরম হওয়া।

২.শিশুদের হাত-পায়ে বা মাংসপেশীতে শক্তি কমে যাওয়া।

৩.শিশুদের হাত পায়ে বা মাংসপেশীতে ব্যথা অনুভূত হওয়া।

৪.শিশুদের শরীরে অতিরিক্ত ক্লান্তি বা মানসিক অবসাদ দেখা দেওয়া।

৫.ঘনঘন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়া।

৬.শিশুদের খাবারে অরুচি দেখা দেওয়া ।


শিশুদের শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাবজনিত কারণে শরীরের হাড় বেঁকে যেতে পারে ।ফলে শিশুদের শরীর বিকলাঙ্গ হতে পারে। তাই শিশুদের শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে এবং চিকিৎসা নিতে হবে।




ভিটামিন ডি এর অভাবে কোন রোগ হয়



ভিটামিন ডি এর অভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের অস্টিও প্যারোসিসসের মতো রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে । এর কারণে শরীরে হাড় বা মাংসপেশী দুর্বল বা ভেঙে যাওয়া সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও ভিটামিন ডি এর অভাবে শরীরে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।



ভিটামিন ডি এর অভাবে শিশুদের কি রোগ হয়




ভিটামিন ডি এর অভাবে শিশুদের রিকেটস রোগের লক্ষণ দেখা দেয়। এতে করে শিশুদের শরীরের হাড় নরম থাকে যার কারণে হাড় বেঁকে যায় বা প্রতিবন্ধী হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এছাড়াও ভিটামিন ডি এর অভাবে শিশুরা পুষ্টিহীনতায় ভোগে। যার কারণে সহজেই নানা রোগে আক্রান্ত হয়।




ভিটামিন ডি এর অভাব হলে করণীয়



শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব দেখা দিলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে এবং সে অনুযায়ী ভিটামিন ডি এর সাপ্লিমেন্ট সেবন করতে হবে। তবে ঘরোয়া কিছু খাবারের মাধ্যমেও শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পূরণ করা যেতে পারে।


১.ভিটামিন ডি এর প্রধান উৎস হল সূর্যের আলো। তাই ভিটামিন ডি এর অভাব দেখা দিলে সূর্যের আলোয় দাঁড়াতে হবে। প্রতিদিন আধা ঘন্টা থেকে এক ঘন্টা সূর্যের আলোয় দাঁড়ালে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি কমে যেতে পারে।

২.প্রতিদিনের খাবার তালিকায় ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার রাখতে হবে।

৩.ভিটামিন ডি এর অভাব দেখা দিলে ভিটামিন ডি এর সাপ্লিমেন্ট খেতে হবে।

৪.নিয়মিত শারীরিক চর্চা বা ব্যায়াম করতে হবে।

৫.প্রতিদিনের খাবার তালিকায় সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল রাখতে হবে যাতে করে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।



ভিটামিন ডি যুক্ত খাবারের তালিকা



প্রতিদিনের খাবার তালিকায় কয়েকটি খাবার রাখলে সহজেই ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পূরণ করা যেতে পারে। নিচে কয়েকটি খাবারের তালিকা দেওয়া হলো যা শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি কমাতে সাহায্য করে।




১.মাশরুমঃমাশরুম ভিটামিন ডি তৈরির একটি উত্তম উৎস। প্রতিদিনের খাবার তালিকায় যদি মাশরুম রাখা যায় তাহলে শরীরে ভিটামিন ডি এর চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।

২.দুগ্ধজাত খাবারঃদুগ্ধজাত খাবার যেমন: দুধ, দই, ছানা, চিজ ইত্যাদি শরীরে ভিটামিন ডি এর চাহিদা  পূরণ করতে সাহায্য করে। যার ফলে শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি কমে যায়।

৩.ওটসঃ ওটস ভিটামিন ডি এর অন্যতম উৎস। প্রতিদিন সকালে খাবারে ওটস রাখলে শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব।

৪.সালমন ফিসঃ সালমন ফিসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি থাকে। যা শরীরে ভিটামিন ডি এর চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করে।

৫.ডিমঃ ডিমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি থাকে। যার শরীরে ভিটামিন ডি এর চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করে।

৬.সয়াবিনঃ সয়াবিন ভিটামিন ডি এর উৎস হিসেবে পরিচিত। তাই প্রতিদিনের খাবার তালিকায় সয়াবিন দিয়ে তৈরি খাবার রাখা উচিত। 

৬.এছাড়াও সূর্যমুখী বীজ, কিসমিস, কাঠবাদাম, শুকনা ডুমুর ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি থাকে।  যার শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি কমাতে সাহায্য করে।



ভিটামিন ডি ঔষধের নাম



শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন ডি এর সাপ্লিমেন্ট সেবন করা উচিত। নিচে কিছু ভিটামিন ডি এর ওষুধের নাম দেওয়া হলঃ





1.Cap.3D (2000 IU).

2.Cap. 3D (20000 IU).

3.Cap. 3D (40000 IU).

4.Cap.Aristo D3 (2000 IU).

5.Cap. Aristo D3 (20000 IU).

6.Cap.Aristo D3 (40000 IU).

7.Cap. D-Balance (2000 IU).

8.Cap. D-Balance (20000 IU).

9.Cap.D-Balance (40000 IU).

10.Cap.D-Balance (50000 IU).

11.Cap. D-Cap (1000 IU).

12.Cap. D-Cap (2000 IU).

13.Cap.D-Cap (20000 IU).

14.Cap.D-Cap (40000 IU).

15.Cap.D-Rise (1000 IU).

16.Cap.D-Rise (2000 IU).

17.Cap.D-Rise (20000 IU).

18.Cap.D-Rise (40000 IU).




ভিটামিন ডি ট্যাবলেট এর উপকারিতা




ভিটামিন ডি ট্যাবলেট আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। ভিটামিন ডি ট্যাবলেট আমাদের শরীরে ভিটামিন ডি এর চাহিদা পূরণ করে। যার কারণে শরীরে হার মাংসপেশ এবং দাতঁ মজবুত করে। ভিটামিন ডি শরীরে দুর্বলতা কাটাতে সাহায্য করে। ভিটামিন ডি ট্যাবলেট চুল পড়া বন্ধ করতে সাহায্য করে।ভিটামিন ডি ট্যাবলেট প্রাপ্তবয়স্কদের অস্টিওপেরোসিস এবং শিশুদের রিকেটস রোগ হওয়া প্রতিরোধ করে এবং ভিটামিন ডি ট্যাবলেট শরীরে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।




ভিটামিন ডি টেস্ট খরচ কত



অনেকে এ ভিটামিন ডি টেস্ট করাতে চান তবে এর সঠিক মূল্য না জানার কারণে বিভ্রান্তিতে পড়তে হয়। ভিটামিন ডি টেস্ট করানোর জন্য যেকোন বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা হাসপাতালে ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকার মতো খরচ হতে পারে।




সর্বোপরি আমাদের আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে আপনারা ভিটামিন ডি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন এবং  ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পূরণের জন্য কি কি করণীয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

*

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post