গর্ভাবস্থায় জরায়ুর মুখ খোলার জন্য করণীয়

গর্ভাবস্থায় জরায়ুর মুখ খোলার জন্য করণীয়



অধিকাংশ নারী গর্ভধারণের পরে সন্তান নরমাল ডেলিভারিতে করানোর চিন্তা করেন। তবে অনেক সময় বিভিন্ন কারণে ডেলিভারির সময় নরমাল ডেলিভারি হয় না। এর মধ্যে অন্যতম প্রধান কারণ হলো জরায়ুর মুখ না খোলা। তাই আমাদের আজকের এই পোষ্টের আলোচ্য বিষয় হলো জরায়ুর মুখ খোলার লক্ষণ, গর্ভাবস্থায় জরায়ু নিচে নামার লক্ষণ, জরায়ুর মুখ না খোলার কারণ, গর্ভাবস্থায় জরায়ুর মুখ খোলার জন্য করণীয়,গর্ভাবস্থায়  জরায়ু ব্যথা, গর্ভাবস্থায় জরায়ু নিচে নেমে গেলে করণীয়, গর্ভাবস্থায় জরায়ু ইনফেকশনের লক্ষণ,জরায়ু টিউমারের লক্ষণ, জরায়ুতে টিউমার হলে কি বাচ্চা হয়,জরায়ুতে টিউমার হলে করণীয়, জরায়ু টিউমার প্রতিরোধের উপায়।





আমরা আজকে এই পোস্টে আলোচনা করব গর্ভাবস্থায় জরায়ুর মুখ খোলার জন্য করণীয়



জরায়ুর মুখ খোলার লক্ষণ


গর্ভধারণের পরে ডেলিভারির সময় চলে আসলে বা ফুল টাইম প্রেগনেন্সি হয়ে গেলে নরমাল ডেলিভারি হওয়ার আগে শরীরে কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। অনেক সময় এই লক্ষণগুলো আমাদের না জানার কারণে আমরা বুঝতে পারি না যে বাচ্চা নরমাল ডেলিভারি হতে পারে। তাই নিচে কিছু লক্ষণ দেওয়া হলো যে লক্ষণগুলো দেখলে বোঝা যায় যে জরায়ুর মুখ খুলে গেছে এবং নরমাল ডেলিভারি হতে পারে।


১.জরায়ুর মুখ ঘনঘন সংকুচিত বা প্রসারিত হওয়া।


২.জরায়ুর মুখ বড় হয়ে যাওয়া।


৩.তলপেটে অতিরিক্ত ব্যথা হওয়া।


৪.তলপেটের সাথে পিঠে ও কোমরে অতিরিক্ত ব্যথা হওয়া।


৫.অতিরিক্ত সাদা স্রাব বা রক্ত মিশ্রিত স্রাব যাওয়া ।


৬.পানি ভেঙ্গে যাওয়া।


৭.বাচ্চা নিচের দিকে নেমে যাওয়া।


৮.পায়ের মাংসপেশি শিথিল হয়ে যাওয়া।


৯.শরীরে অস্বস্তি লাগা।


উপরোক্ত লক্ষণ গুলি জরায়ুর মুখ খোলার লক্ষণ হয়। তাই  উপরোক্ত লক্ষণ গুলি ফুল টাইম প্রেগনেন্সিতে বা ডেলিভারির সময় দেখা দিলে নরমাল ডেলিভারি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।



গর্ভাবস্থায় জরায়ু নিচে নামার লক্ষণ


গর্ভধারণের পরে সাধারণত জরায়ুর মধ্যে শিশু বড় হতে থাকে। যার কারণে জরায়ু মুখ বা জরায়ু প্রসারিত হয়। এ সময় অনেকেরই জরায়ু নিচের দিকে নেমে যায়। গর্ভাবস্থায় জরায়ু নিচের দিকে নেমে যাওয়ার কিছু লক্ষণ দেওয়া হল:




১.তলপেট ভার ভার লাগা।


২.ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ আসা।


৩.তলপেটে ব্যথা অনুভূত হওয়া।


৪.তলপেটে চাপ অনুভূত হওয়া।


৫.গর্ভাবস্থায় অধিকাংশ মহিলার দেখা যায় পা ফুলে গেছে। এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো জরায়ু নিচের দিকে নেমে যাওয়া।



জরায়ুর মুখ না খোলার কারণ


অনেক সময় শারীরিক কিছু সমস্যার কারণে গর্ভাবস্থায় ডেলিভারির সময় জরায়ুর মুখ খোলে না। নিচে কিছু কারণ দেওয়া হলো যেসব কারণে ডেলিভারির সময় জরায়ুর মুখ খোলে না।


১.জরায়ুর মুখ না খোলার অন্যতম প্রধান কারণ হলো জরায়ু মুখ ছোট হওয়া।


২.জরায়ু দুর্বল হলে অনেক সময় ডেলিভারির সময় জরায়ুর মুখ খোলার সম্ভাবনা খুব কম থাকে ।


৩.জরায়ুতে কোন ধরনের টিউমার বা ক্ষত থাকলে নরমাল ডেলিভারির সময় জরার মুখ খোলে না বা খোলা সম্ভাবনা খুব কম থাকে।


৪.জরায়ুতে কোন ধরনের অপারেশন করা থাকলে ডেলিভারির সময় জরায় মুখ খোলার সম্ভাবনা খুব কম থাকে।



গর্ভাবস্থায় জরায়ুর মুখ খোলার জন্য করণীয়


গর্ভাবস্থায় ডেলিভারির সময় জরায়ুর মুখ খোলাটা খুবই জরুরী। কারণ জরায়ুর মুখ না খুললে নরমাল ডেলিভারি হয় না। তাই গর্ভাবস্থায় শুরুতে যদি কিছু নিয়ম অনুযায়ী জীবন যাপন করা যায়। তাহলে ডেলিভারি সময় সহজেই জরায়ুর মুখ খুলে যেতে পারে।




১.জরায়ুর মুখ খোলার জন্য শারীরিক  সুস্থতা সব থেকে বেশি জরুরী। কারণ শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যত ভালো থাকে তত তার নরমাল ডেলিভারি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।


২.গর্ভাবস্থার শুরু থেকে পুষ্টি গুন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।


৩.গর্ভাবস্থার শুরু থেকে খেজুর খাওয়া যেতে পারে। কারণ খেজুর জরায়ুর মুখ খুলতে সাহায্য করে জরায়ুর।


৪.গর্ভাবস্থার শুরু থেকে ডেলিভারি পর্যন্ত রুটিন অনুযায়ী ব্যায়াম বা শারীরিক চর্চা করতে হবে।


৫.ডেলিভারি পেইন উঠলে জরায়ুর মুখ খোলার জন্য ঝাল জাতীয় খাবার খাওয়া যেতে পারে। এতে করে দ্রুত জরায়ুর মুখ যায় খুলে যায়।


৬.নিয়মিত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে এবং রুটিন অনুযায়ী চেকআপ করতে হবে।



গর্ভাবস্থায়  জরায়ু ব্যথা


গর্ভাবস্থায় জরায়ুতে ব্যথা হওয়া একটি কমন সমস্যা। সাধারণত জরায়ুর ভিতরে শিশু বড় হওয়ার সাথে সাথে জরায়ু বড় হয়। যার কারণে ব্যথা অনুভূত হয়। এছাড়াও কিছু কিছু কারণে ব্যথা অনুভূত হয়। নিচে কারণগুলো দেওয়া হল:




১.যারা জরায়ু প্রসারিত হওয়া বা বড় হওয়ার কারণে জরায়ুতে ব্যথা অনুভূত হয়।


২.অনেক সময় গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দেয়। যার কারণে জরায়ুতে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। 


৩.গর্ভাবস্থায় প্রস্রাবে ইনফেকশন দেখা দিলে জরায়ুতে ব্যথা অনুভূত হয়।


৪.অনেক সময় গর্ভপাতের সম্ভাবনা দেখা দিলে জরায়ুতে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।


৫.একটোপিক প্রেগনেন্সি বা বাচ্চা যদি জরায়ুর বাহিরে কোথাও জন্ম নেয়। তাহলে জড়াতে ব্যথা জরায়ুতে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।


৬.সিজারের পরে পুনরায় গর্ভধারণ করলে বাচ্চা বড় হওয়ার সাথে সাথে জরায়ু প্রসারিত হয় যার কারণে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।



গর্ভাবস্থায় জরায়ু ইনফেকশনের লক্ষণ



গর্ভাবস্থায় জরায়ুতে ইনফ্রেশনের সমস্যা প্রায় দেখা দেয় । জরায়ুতে এই ইনফেকশন দেখা দিলে অনেক সময় এর প্রভাব বাচ্চার উপরে যে পড়ে। জরায়ুতে ইনফেকশন দেখা দিলে শরীরে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায় যে লক্ষণ গুলো দেখলে বোঝা যায় যে জরায়ুতে ইনফেকশন হয়েছে। 


১.প্রস্রাবে ইনফেকশন জরায়ু ইনফেকশনের লক্ষণ হতে পারে।


২.তলপেটে ব্যথা হওয়া জরায়ু ইনফেকশনের লক্ষণ হতে পারে।


৩.জরায়ুর মুখে জ্বালাপোড়া করা জরায়ু ইনফেকশনের লক্ষণ হতে পারে।


৪.কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা জরায়ু ইনফেকশনের লক্ষণ হতে পারে।



জরায়ু টিউমারের লক্ষণ



জরায়ুতে টিউমার দেখা দিলে শরীরে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। নিচে লক্ষণগুলো দেওয়া হলঃ




১.অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা দেখা দেওয়া।


২.অতিরিক্ত মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত হওয়া।


৩.অতিরিক্ত সাদাস্রাব যাওয়া।


৪.তলপেট ফুলে ওঠা বা ব্যথা হওয়া।


৫.প্রসাবে ইনফেকশন হওয়া।


৬.কোমর বা পিঠে ব্যথা হওয়া।


৭.ঘন ঘন প্রসাব হওয়া।


৮.শরীরে দুর্বল অনুভূত হওয়া।


৯.গর্ভধারণে সমস্যা হওয়া বা গর্ভধারণ হলেও গর্ভপাতের সম্ভাবনা বেড়ে যাওয়া।


১০.সহবাসের সময় অতিরিক্ত ব্যথা হওয়া।



জরায়ুতে টিউমার হলে কি বাচ্চা হয়


অনেকেই মনে করেন জরায়ুতে টিউমার হলে বাচ্চা হয় না। তবে এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। জরায়ুতে টিউমার হলে সেটা সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে সারিয়ে তোলা সম্ভব এবং গর্ভধারণ করা সম্ভব। জরায়ুতে টিউমার অনেক সময় গর্ভধারণে বাধা দেয় বা বারবার গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। তাই জরায়ুতে টিউমার দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত এবং চিকিৎসা নেওয়া উচিত।



জরায়ুতে টিউমার হলে করণীয়




জরায়ুতে টিউমার দেখা দিলে একমাত্র করণীয় কাজ হল চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলা। অনেক সময় জরায়ু টিউমার অপারেশনের মাধ্যমে কেটে ফেলা হয় বা ওষুধের মাধ্যমে সারিয়ে তোলা যায়।



জরায়ু টিউমার প্রতিরোধের উপায়


জরায়ুতে টিউমার বর্তমান সময়ে অল্প বয়স থেকে বয়স্ক নারীদের একটি কমন রোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাধারণত অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের কারণে জরায়ুতে টিউমারের সমস্যা দেখা দেয়। যদি প্রতিদিনের খাবার তালিকায় পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার রাখা যায় এবং নিজের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তাহলে সহজেই জরায়ুতে টিউমার প্রতিরোধ করা সম্ভব।



সর্বোপরি জরায়ুতে টিউমার নারীদের একটি কমন সমস্যা। তবে অনেক সময় এই টিউমার থেকে ক্যান্সারের সৃষ্টি হয়। তাই জরায়ুতে টিউমার দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

*

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post