পিরিয়ডের সময় পেটে ব্যাথা হলে করণীয়

পিরিয়ডের সময় পেটে ব্যাথা হলে করণীয়


বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় সব মেয়েদেরই মাসিকের সময় অতিরিক্ত পেটে ব্যথার সমস্যা দেখা দেয়।মাসিকের সময় বা পিরিয়ডের সময় এই পেটে ব্যথা কিছু ঘরোয়া উপায়ে কমানো যায়।কিন্তু এ সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। তাই আমাদের আজকের এই প্রশ্নের আলোচ্য বিষয় হলো পিরিয়ডের ব্যথা কোথায় হয়,মাসিকের সময় পেটে ব্যথার কারণ, পিরিয়ড হলে কি কি সমস্যা হয়, পিরিয়ডের সময় পেটে ব্যথা হলে করণীয়, পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর খাবার,পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর দোয়া , পিরিয়ডের ব্যথা হলে কি বাচ্চা হয় না এবং পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায় ঔষধের নাম।




আমরা আজকে এই পোস্টে আলোচনা করব পিরিয়ডের সময় পেটে ব্যাথা হলে করণীয়



পিরিয়ডের ব্যথা কোথায় হয়



পিরিয়ডের সময় কম বেশি সবারই পেটে ব্যথা হয়।অধিকাংশ মেয়েদেরই এই পেটে ব্যথা সাধারণত তলপেটে হয়ে থাকে। কিন্তু অনেক সময় এই ব্যথা পুরো পেট, কোমর বা পিঠে ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়াও পিরিয়ডের সময় অনেকেরই পায়ে ব্যথা বা উরুতে ব্যথা হয়ে থাকে। অনেক সময় এই ব্যথা অতিরিক্ত হয় যার কারণে খিচুনী হয়।


মাসিকের সময় পেটে ব্যথার কারণ



পিরিয়ডের সময় পেটে ব্যথার অন্যতম প্রধান কারণ হলো জরায়ু সংকোচন হওয়া। কারণ পিরিয়ডের সময় জরায়ু সংকুচিত হয়। যার কারণে পেটে ব্যথা অনুভূত হয় । এছাড়াও শরীরের কোষের উৎপন্ন হওয়া প্রোস্টাগ্ল্যানডিনস নামে এক ধরনের চর্বিযুক্ত যৌগ পদার্থ। যা হরমোনের মতো কাজ করে। পিরিয়ডের সময় এই পদার্থ বেড়ে যায়। যার কারণে ব্যথা অনুভূত হয়।


পিরিয়ড হলে কি কি সমস্যা হয়



পিরিয়ড চলাকালীন নারীদের মধ্যে কিছু সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যাগুলো মূলত পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে দেখা দেয়। পিরিয়ড শেষ হয়ে গেলে এটা এমনিতেই ঠিক হয়ে যায়। নিচে সমস্যা গুলো দেওয়া হলঃ 


১.মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া।

২.মাথা ঘোরা বা মাথা ব্যথা করা।

৩.ব্রণের সমস্যা দেখা দেওয়া।

৪.স্তনে ব্যথা হওয়া।

৫.শরীরে ক্লান্তি বা দুর্বল অনুভূত হওয়া।

৬.খাওয়ার রুচি কমে যাওয়া।

৭.তলপেটে, কোমরে, পিঠে বা পায়ে ব্যথা অনুভূত হওয়া।


পিরিয়ডের সময় পেটে ব্যাথা হলে করণীয়



নারীদের মাসিকের সময় বা পিরিয়ডের সময় পেটে ব্যথা একটি কমন সমস্যা। কারণ প্রায় প্রতিটি নারী মাসিকের সময় পেটে ব্যথা হয়ে থাকে। তাই এই পেটে ব্যথা হলে কিছু ঘরোয়া উপায়ে ব্যথা কমানো যেতে পারে।




১.পিরিয়ডের সময় পেটে ব্যথা হলে গরম পানির সেক ব্যথা কমানোর জন্য খুবই কার্যকারী একটি পদ্ধতি। পেটে ব্যথা কমাতে হট ব্যাগ বা গরম পানির সেক দিলে পেটে ব্যথা অনেকটা কমে যেতে পারে।




২.পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর জন্য আদা খুবই কার্যকরী একটি খাবার। কারণ আদা শরীরে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। তাই পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে গরম পানির সাথে আদার রস ও মধু মিশিয়ে পান করা যেতে পারে। এতে পিরিয়ডের ব্যথা অনেকটা কমে যায়।




৩.পিরিয়ডের সময় কাঁচা পেঁপে খাওয়া যেতে পারে। কারণ কাঁচা পেঁপে পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। তাই পিরিয়ডের সময় ব্যাথা অনুভূত হলে কাঁচা পেঁপে  খাওয়া উচিত।




৪.পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর আরেকটি অন্যতম কার্যকরী উপায় হলো পেটের উপরে হালকা মেসেজ করা। কারণ আলতোভাবে মেসেজ করলে পেটে ব্যথা অনেকটা কমে যায়। তাই পিরিয়ডের সময় পেটে ব্যাথা হলে লেভেন্ডার অয়েল দিয়ে মেসেজ করলে পিরিয়ডের ব্যথা অনেকটা কমে যায়।

৫.পিরিয়ডের সময় হালকা ব্যায়াম করা যেতে পারে। এতে করে পিরিয়ডের ব্যথা কমে যেতে পারে।

৬.পিরিয়ডের সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিতে হবে।

৭.পিরিয়ডের সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে বা তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে।

৮.পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার বা সফট ড্রিংস জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

৯.পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত মানসিক টেনশন বা দুশ্চিন্তা থেকে বিরত থাকতে হবে।


পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর খাবার



পিরিয়ডের সময় যেহেতু শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। তাই এ সময় প্রতিদিনের খাবার তালিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ খাবারের মাধ্যমেই অনেক সময় পিরিয়ডের ব্যথা কমানো যায় বা শরীরে শক্তি যোগানো যায়।




১.পিরিয়ডের সময় যেত অতিরিক্ত রক্তপাত হয় ।তাই শরীরে ডিহাইড্রেশনের  সমস্যা দেখা দিতে পারে। তার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি বা তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে।

২.পিরিয়ডের সময় যেহেতু অতিরিক্ত রক্তপাত হয়। তাই শরীরে রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে। তাই পিরিয়ডের সময় আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। যেমনঃ কচু শাক, কলমি শাক, পুই শাক, মাছ, মাংস, ডিম, কলিজা, খেজুর  ইত্যাদি পিরিয়ড চলাকালীন খাওয়া যেতে পারে। 
৩,পিরিয়ডের সময় ভিটামিন সি যুক্ত খাবার যেমনঃ কলা, পেয়ারা, আমলকি, লেবু, কমলা, আমড়া, আপেল ,তরমুজ, শসা ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।

৪.পিরিয়ডের সময় ডার্ক চকলেট খাওয়া যেতে পারে কারণ। ডার্ক চকলেট পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে বা শরীরে আয়নের ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে ।

৫.পিরিয়ডের সময় বিভিন্ন ধরনের বাদাম যেমনঃ পেস্তা বাদাম, কাজুবাদাম, কাঠবাদাম ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।

৬.পিরিয়ডের সময় আরা রস খুবই উপকারী। পিরিয়ড চলাকালীন উষ্ণ গরম পানিতে আদার রস মধু মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এতে করে পিরিয়ডের ব্যথা কমে যায়।

৭.পিরিয়ড চলাকালীন ফাইবার জাতীয় খাবার খাওয়া যেতে পারে। কারণ এসব খাবার হজম শক্তি সচল রাখে।

৮.পিরিয়ডের সময় দই খাওয়া যেতে পারে।


পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর দোয়া 


হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেকোনো ধরনের ব্যাথা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন। যে দোয়া পাঠ করলে ব্যথা কমে যেতে পারে। এ সম্পর্কে সহীহ মুসলিম ও আবু দাউদ হাদিসে এসেছে, হযরত ওসমান ইবনে আবুল আস আস-সাকাফি (রাঃ) বর্ণনা করেন, তিনি একবার রাসূল (সাঃ) এর কাছে পেটে ব্যথার কথা জানান। তখন তিনি বলেন, পেটে ব্যথা আমাকে অস্থির করে তুলেছে। তখন রাসুল (সাঃ) বলেন, তুমি তোমার ব্যথার স্থানে ডান হাত রেখে তিনবার ”বিসমিল্লাহ” পড়ো। এরপর নিম্নোক্ত দোয়াটি সাতবার পড়ো।

দোয়াটি হলঃ

أعوذُ باللهِ و قُدرتِه من شرِّ ما أَجِدُ و أُحاذِرُ

বাংলা উচ্চারণঃ ”আউজু বি-ইজ্জাতিল্লাহি ওয়া কুদরাতিহি মিন শাররি মা আজিদু ওয়া উহাজিরু।”

অর্থঃ ”আল্লাহর মর্যাদা ও তার কুদরতের উসিলায় আমি যা অনুভব এবং ভোগ করছি, তা থেকে মুক্তি চাচ্ছি।”

তখন তিনি বলেন, আমি এইরুপ করার সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহ আমার কষ্ট দূর করে দেন। এরপর থেকে আমি পরিবার পরিজন ও অন্যদের এরকম করার নির্দেশ দেয়।


পিরিয়ডের ব্যথা হলে কি বাচ্চা হয় না



অনেকেরই মনে এই প্রশ্নটা থাকে যে মাসিকের সময় পেটে ব্যাথা হলে বাচ্চা হয় না। তবে এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। কারণ মাসিকের সময় পেটে ব্যথা হওয়া কমন সমস্যা । এই সমস্যাটা প্রায় প্রতিটি মেয়েদেরই হয়ে থাকে। এটা কারোর কম বা কারোর বেশি হয়ে থাকে। তবে এর সাথে বাচ্চা হওয়া বা না হওয়ার কোন সংযোগ নাই। তবে মাসিকের সময় অতিরিক্ত পেটে ব্যথা হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।


পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায় ঔষধের নাম




পিরিয়ডের সময় প্রায় প্রতিটি মেয়েরই ব্যথা হয়। আর এই ব্যথা কমানোর জন্য অনেকেই বিভিন্ন ধরনের ঔষধ খেয়ে থাকেন। তবে পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর জন্য আগে ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করা উচিত। তারপরও যদি ব্যথা না কমে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। এছাড়াও পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল  বা ন্যাপ্রোসিন জাতীয় ঔষধ খাওয়া যেতে পারে। 


সর্বোপরি পিরিয়ড বা মাসিক মেয়েদের একটি মাসিক ঋতুচক্র। এই ঋতুচক্রের কারণেই নারীরা মা হওয়ার সক্ষমতা পায়।মাসিক যদি অনিয়মিত হয় তাহলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই আমাদের মাসিক যাতে নিয়মিত হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

*

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post