সিজারের পর পেটে ব্যথা কতদিন থাকে

সিজারের পর পেটে ব্যথা কতদিন থাকে


বর্তমানে বাংলাদেশের অধিকাংশ নারীরা সিজারের মাধ্যমে বাচ্চা জন্ম দিয়ে থাকেন। কিন্তু অনেক সময় এই সিজারের পরে কি কি সমস্যা হতে পারে বা কি কি কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হয় সে সম্পর্কে জানে না। তাই আমাদের আজকের এই পোস্টের আলোচ্য বিষয় হলো সিজারের পর পেটে ব্যথা কতদিন থাকে, সিজারের পর শোয়ার নিয়ম,সিজারের পর বেল্ট পরার নিয়ম, সিজারের কতদিন পর সেলাই শুকায়, সিজারের পর কতদিন ব্লিডিং হয়, সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ,সিজারের সেলাই কাটার পর যত্ন, সিজারের পর কাটা জায়গায় ব্যথা, সিজারের পর পেট শক্ত হয় কেন, সিজারের পর পেট বড় হয় কেন, সিজারের পর খাবার তালিকা এবং সিজারের পর পেট কমানোর উপায়।




আমরা আজকে এই পোস্টে আলোচনা করব  সিজারের পর পেটে ব্যথা কতদিন থাকে



 সিজারের পর পেটে ব্যথা কতদিন থাকে



সিজার করার পর প্রত্যেকটা নারীকে নিয়ম কানুন মেনে চলতে হয়। তা না হলে সেলাইয়ের জায়গা বা শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও সিজারের পরে সেলাইয়ের জায়গায় বা পেটে অনেকদিন ধরে ব্যথা থাকতে পারে।সিজারের পরে পেটে ব্যথা করা মূলত শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও ওষুধের ডোজের উপরে নির্ভর করে। যদি শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকে এবং সঠিক সময়ে ঔষধের ডোজ পড়ে। তাহলে সিজারের পর এই পেটে ব্যথা কারোর এক সপ্তাহ থাকতে পারে বা কারোর একমাস বা দুই মাসও থাকতে পারে।



সিজারের পর শোয়ার নিয়ম



সিজারের পরে সব থেকে বেশি কমন একটি সমস্যা হলো ঘুমানোর সময় শোয়ার সমস্যা। কারণ একটু ওলট পালট শোয়ার কারণে সেলাইয়ের জায়গায় ব্যথা করে বা তলপেটে ব্যথা অনুভূত হয় বা সেলাইয়ের জায়গায় টান লাগে। তাই এ সময় শোয়ার স্টাইল চেঞ্জ করতে হবে বা যেভাবে শুলে শরীর আরাম ভাবে থাকতে পারবে সেভাবে শুতে হবে।





১.সিজারের করে সোজা হয়ে সোয়া যেতে পারে কারণ সোজা হয়ে শুলে সেলাই তে চাপ কম পড়ে। এছাড়াও সোজা হয়ে শোয়ার কারণে সেলাইয়ের জায়গা খোলামেলা থাকে। যার ফলে সেলাই দ্রুত টেনে যায় বা দ্রুত ব্যথা কমে যায়।

২.সিজারের পরে যে কোন এক পাশ কাত হয়ে শোয়া যেতে পারে। কারণ কাত হয়ে শুলে সেলাইতে টান কম লাগে। তবে এ সময় বেশিরভাগ বাম কাত হয়ে শোয়া উচিত। কারণ বাম কাত হয়ে শুলে শরীরে রক্ত চলাচল সঠিকভাবে করতে পারে।

৩.এছাড়া সিজারের পরে চেয়ারে হেলান দিয়ে শুতে পারেন।



সিজারের পর বেল্ট পরার নিয়ম


নারীরা মনে করে সিজারের মাধ্যমে কোন ব্যথা বা কষ্ট ছাড়াই সন্তান জন্ম দেওয়া যায় । তবে এই সিজারের পরে নারীদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে বা সিজারের পরে সেলাইয়ের জায়গায় অতিরিক্ত ব্যথা বা পেটে অতিরিক্ত চর্বি বা বুড়ি বেড়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে।




এর জন্য সিজারের পরে চিকিৎসক বেল্ট পড়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন । কারণ এই বেল্ট পড়ার মাধ্যমে একদিকে যেমন পেটের মেদ বা বুড়ি বা চর্বি কমানো যায় অন্যদিকে সেলাইয়ের জায়গা সুরক্ষিত থাকে।এছাড়াও সিজারের পরপরই বেল্ট পড়া উচিত। কারণ সিজারের পরে অনেক সময় হাঁটার সময়  সেলাইতে টান পড়ে। যার কারণে সেলাইতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে বা সেলাই কেটে যেতে পারে। তাই সিজারের পর বেল্ট পড়া উত্তম।কিন্তু আমরা অনেকেই সিজারের পর বেল্ট পড়ার নিয়ম জানিনা। নিচে সিজারের পরে বেল্ট পড়ার নিয়ম দেওয়া হলঃ


১.সিজারের পরে সব সময় বেল্ট পড়া যায় না যেমন- শোয়ার সময়, বসে কিছু খাওয়ার সময় বেল্ট পরা উচিত নয়। শুধুমাত্র হাঁটার সময় বেল্ট পড়া উচিত। 

২.বেল্ট সব সময় তলপেটে একটু টাইট করে করতে হয়।

৩.বেল্ট জামাকাপড়ের উপর থেকে পড়া উচিত নয়। কারণ অনেক সময় জামাকাপড়ের উপরে বেল্ট পড়লে জামা কাপড়ের জন্য পেটে চাপ পড়ে বা টান লাগে। তাই বেল্ট সবসময় জামাকাপড়ের নিচে শুধু শরীরেই পড়া উচিত।

৪.সিজারের পরে যেহেতু পেটে মেদ বা বুড়ি বেড়ে যায়। তাই সিজারের পরে অন্তত দুই থেকে তিন মাস প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা করে বেল্ট পড়া উচিত।



সিজারের কতদিন পর সেলাই শুকায়


সিজারের পরে অন্যতম চিন্তার কারণ হলো সিলাই শুকানো। কারণ এই সেলাই শুকানোর উপরে অনেক কিছু নির্ভর করে। যদি সঠিক সময়ে সেলাই না শুকায় তাহলে ইনফেকশনের লক্ষণ হতে পারে। তাই সিজারের পরে সেলাই শুকানোর জন্য সঠিক সময়ে ঔষধ খেতে হবে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিতে হবে। কারণ সিজারের পরে সেলাই পুরোপুরি শুকাতে ০১ থেকে ০২ মাস সময় লাগতে পারে। 



সিজারের পর কতদিন ব্লিডিং হয়



সিজারের পর আরেকটি কমন সমস্যা হল ব্লিডিং হওয়া। সাধারণত সিজারের পর প্রথম সপ্তাহ একটু বেশি ব্লিডিং হয়। তারপরে তিন সপ্তাহ থেকে ছয় সপ্তাহ অল্প অল্প করে ব্লিডিং হতে পারে। যদি তিন সপ্তাহ থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে অতিরিক্ত বিলিং হয় বা ছয় সপ্তাহ পরেও ব্লিডিং হয়। তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। কারণ ছয় সপ্তাহ পরেও যদি না ব্লিডিং কমে । তাহলে বুঝতে হবে শরীরে যে কোন সমস্যা আছে তার জন্য ব্লিডিং হচ্ছে।



সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ


সিজারের পরে অনেকেরই সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু আমরা অনেক সময় প্রাথমিক পর্যায়ে ইনফেকশনের লক্ষণ বুঝতে না পেরে দেরি করে ফেলি। তাই সিজারের পরে ইনফেকশনের কিছু লক্ষণ দেওয়া হলঃ





১.সেলাইয়ের জায়গায় অতিরিক্ত ব্যথা অনুভূত হওয়া।

২.সেলাইয়ের জায়গা টানটান অনুভব হওয়া।

৩.সেলাইয়ের জায়গা ফুলে যাওয়া বা লাল হয়ে যাওয়া।

৪.সেলাইয়ের জায়গা থেকে রক্ত বা পুঁজ বের হওয়া।

৫.তলপেটে ব্যথা অনুভূত হওয়া।

৬.প্রসাবের সময় জ্বালাপোড়া করা।

৭.অতিরিক্ত ব্লিডিং হওয়া বা সাদা জাতীয় স্রাব যাওয়া।

৮.জ্বর জ্বর অনুভূত হওয়া।

৯.পা ফুলে যাওয়া।

১০.সেলাই দ্রুত না শুকানো।


উপরোক্ত লক্ষণ গুলি দেখা দিলে বুঝতে হবে আপনার সেলাইয়ের জায়গায় ইনফেকশন হয়েছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।



সিজারের সেলাই কাটার পর যত্ন



সিজার করার পাঁচ থেকে সাত দিন পরে সেলাই কাটা হয়। তারপরে সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তারপরের এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে সেলাই করা জায়গার যত্ন করাটা খুবই জরুরি।কারণ এই সময়ে সেলাই করা জায়গার যত্ন না নিলে ইনফেকশনের সম্ভাবনা থাকে। যা পরবর্তীতে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।


১.সেলাই করা জায়গাটা সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

২.সেলাই করা জায়গাটা যত সম্ভব খোলামেলা রাখার চেষ্টা করতে হবে যাতে করে কতটা তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়।

৩.চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মলম বা অয়েন্টমেন্ট ব্যবহার করতে হবে।

৪.কোন ধরনের ভারী কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

৫.সেলাই কাটার পর কিছুদিন সময় সহবাস থেকে বিরত থাকতে হবে।



সিজারের পর কাটা জায়গায় ব্যথা


সেলাই এর পরে কাটা জায়গায় কিছুদিন ব্যথা থাকতে পারে এটা স্বাভাবিক। সঠিক সময়ে ঔষধ বা পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিলে সময়ের সাথে সাথে কাটা জায়গায় ব্যথা কমে যায়। তবে অনেক সময় সেলাইয়ের জায়গায় ইনফেকশন হলে অতিরিক্ত ব্যথা অনুভূত হতে পারে। তার জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।



সিজারের পর পেট শক্ত হয় কেন


সিজারের পরে অনেক সময় পেট শক্ত হয়ে যায়। তার কারণ হলো সিজারের সময় জরায়ু সংকুচিত হয়। যার ফলে পেটছে ব্যথা অনুভূত হয় বা সাথে পেট শক্ত হয়ে যায় । এছাড়াও সিজারের পর অতিরিক্ত গ্যাসের সমস্যা দেখা দিলে পেট শক্ত হয়ে যেতে পারে।



সিজারের পর পেট বড় হয় কেন



সিজারের পরে নারীদের পেট বড় হয়ে যাওয়াটা খুব স্বাভাবিক। কারণ গর্ভধারণের সময় পেটে জরায়ু অতিরিক্ত প্রসারিত হয় বা বড় হয়ে যায় এবং গর্ভাবস্থায় পেটের চামড়া অনেকটা প্রসারিত হয়। যার কারণে পেট বড় হয়ে যায়। এছাড়া সিজারের সময় এনেসথেসিয়া দেওয়া হয়। যার কারণে পেট বড় হয়ে যায়।



সিজারের পর খাবার তালিকা


সিজারের পরে মায়েদের জন্য প্রতিদিনের খাবার তালিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সিজারের সময় নারীদের শরীর থেকে অনেকটা রক্ত ঝরে যায় বা শরীর অতিরিক্ত দুর্বল হয়ে যায়। যার কারণে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবারের দিকে বেশি নজর দিতে হবে। এ সময় এমন খাবার প্রতিদিনের খাবার তালিকায় রাখতে হবে। যাতে করে মায়েদের শারীরিক দুর্বলতা কাটে এবং মায়েদের বুকে পর্যাপ্ত পরিমাণে দুধ আসে বা সেলাইয়ের জায়গা দ্রুত শুখায়।





১.সিজারের পরে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে।

২.সিজারে পরে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খেতে হবে । এতে করে সেলাইয়ের জায়গা দ্রুত টেনে যাবে।

৩.সিদারের পরে খাবার তালিকায় ফাইবার বা আঁশযুক্ত খাবার রাখতে হবে । যা ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

৪.সিজারের পরে প্রোটিন ও ভিটামিনযুক্ত খাবার খাওয়াতে হবে । এতে করে মায়েদের শারীরিক দুর্বলতা কাটবে এবং বুকে পর্যাপ্ত পরিমাণে দুধ উৎপন্ন হবে।

৫.সিতারা সময় যেহেতু মায়েদের শরীর থেকে অনেকটা রক্ত ক্ষরণ হয়। তাই সিজারের পরে অবশ্যই আয়রন বা ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে হবে।



সিজারের পর পেট কমানোর উপায়


সিজারের পরে পেটে ব্যথা একটু কমন সমস্যা। কারণ সিজারের পরে অনেক সময় সেলাইয়ের জায়গায় বা তলপেটে ব্যথা করে।


১.সিজার এরপরে সেলাইয়ের জায়গায় ব্যথা অনুভূত হলে হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করা যেতে পারে। এতে করে সেলাইয়ের জায়গায় ব্যথা কমে যাবে।

২.সিজারের পরে পেটে ব্যথা কমানোর জন্য বেল্ট ব্যবহার করতে হবে।

৩.সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।

৪.সিজারের পরে পেটে ব্যথা কমানোর জন্য হালকা শারীরিক ব্যায়াম করতে হবে ।

৫.সিজারের পরে অতিরিক্ত ভারী কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ অতিরিক্ত ভারী কাজ করলে পেটে ব্যাথা অনুগত হতে পারে ।

৬.সিজারের পর পরই ট্রাভেল করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এ সময়ে সেলাইয়ের জায়গায় অতিরিক্ত ঝাঁকে লাগতে পারে। যার কারণে পেটে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।



সর্বোপরি সিজারের পরে মায়েদের শরীরের যত্ন নেওয়াটা খুবই জরুরী। কারণ সিজারের ফলে শারীরিক দুর্বলতা বা বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। তাই এই সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম বা সঠিক সময়ে খাওয়া-দাওয়া করা করতে হবে।

*

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post