গর্ভাবস্থায় তোকমা খাওয়া যাবে কি
গর্ভাবস্থায় শরীরে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন দেখা যায়। এ সময় শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় খাবার তালিকায় পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার রাখা উচিত। তাই আমাদের আজকের এই পোস্টের আলোচ্য বিষয় হলো গর্ভাবস্থায় তোকমা খাওয়া যাবে কি, তোকমা খাওয়ার অপকারিতা , গর্ভাবস্থায় কি কি খাওয়া যাবে না,গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া উচিত,গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে না,গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না,গর্ভাবস্থায় কি কি মাছ খাওয়া যাবে না,গর্ভাবস্থায় না খেয়ে থাকলে কি হয়,গর্ভাবস্থায় কি কি কাজ করা নিষেধ।
আমরা আজকে এই পোস্টে আলোচনা করব গর্ভাবস্থায় তোকমা খাওয়া যাবে কি
গর্ভাবস্থায় তোকমা খাওয়া যাবে কি
গর্ভাবস্থায় প্রতিদিনের খাবার তালিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ প্রতিদিনের খাবার তালিকায় পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার থাকলে গর্ভের শিশু সঠিকভাবে বেড়ে ওঠে এবং গর্ভবতী মায়েরা সুস্থ থাকে। অনেকের মনে একটি প্রশ্ন থাকে যে গর্ভাবস্থায় তোকমা খাওয়া যাবে কিনা। তবে গর্ভাবস্থায় তোকমা না খাওয়াই উচিত। কারণ গর্ভাবস্থায় তোকমা শরীরে ইস্ট্রোজেন নামক একটি হরমোন কমিয়ে দিতে সাহায্য করে। আর ইস্ট্রোজেন হরমোন গর্ভাবস্থায় কমে গেলে গর্ভের শিশু সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে পারেনা। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় যদি তোমার পুরোপুরি না ভিজিয়ে সাথে সাথে পানিতে গুলিয়ে খাওয়া হয়। তাহলে এটি পেটে যে ফুলে যায় যার। ফলে গর্বের শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হয়। যার ফলে শিশু মৃত্যু বরণ করতে পারে।
তোকমা খাওয়ার অপকারিতা
তোকমা খাওয়ার অপকারিতা থেকে উপকারিতা অনেকটা বেশি। শুধুমাত্র গর্ভাবস্থায় তোকমা খাওয়া থেকে বিরত থাকা বা শিশুদের তোকমা খাওয়ানো থেকে বিরত থাকা উচিত। এছাড়া অন্য সবার জন্য তোকমা খাওয়া খুব উপকারী। গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত তোকমা খেলে শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোন কমে যায় যার। ফলে গর্বের শিশু বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এছাড়া বাচ্চাদের তোকমা খাওয়ালে তাদের শ্বাস প্রশ্বাস নিতে সমস্যা হতে পারে এবং যাদের ওজন অতিরিক্ত কম তাদের ক্ষেত্রে ওজন আরো কমে যেতে পারে।
গর্ভাবস্থায় কি কি খাওয়া যাবে না
গর্ভাবস্থায় খাবার তালিকায় উপরে সবথেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কারণ এই খাবারের পুষ্টিগুণ থেকেই গর্ভের শিশু সঠিকভাবে বৃদ্ধি পায়। কিন্তু অনেক সময় কিছু কিছু খাবার গর্ভাবস্থায় খুবই বিপদজনক হতে পারে। নিচে কিছু খাবারের নাম দেয়া হলো যে খাবারগুলো গর্ভাবস্থায় খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
১.সরাসরি কাঁচা দুধ থেকে তৈরি যেকোনো খাবার যেমন- চিজ,পনির ইত্যাদি গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। তাই গর্ভাবস্থায় চিজ বা পনির দিয়ে বানানো খাবার অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না
২.গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত চা বা কফি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।কারণ চা ও কফিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যাফেইন থাকে। যা গর্ভাবস্থায় ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
৩.কিছু কিছু ফল যেমন- আনারস, পেঁপে ইত্যাদি গর্ভাবস্থায় খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এই ফল গুলি গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিতে পারে।
৪.গর্ভাবস্থায় কলিজা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এই কলিজায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ থাকে। যা গর্ভাবস্থায় ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
৫.গর্ভাবস্থায় কাঁচা ডিম বা হাফ-বয়েল বা কম সিদ্ধ ডিম খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ কাঁচা ডিম বা অল্প সিদ্ধ ডিমে ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। যা গর্ভাবস্থায় ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
৬.গর্ভাবস্থায় কম সেদ্ধ করা খাবার বা মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৭.গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন ধরনের সিফুড খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে ।
তাই গর্ভাবস্থায় উপরোক্ত খাবার গুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এই খাবারগুলো গর্ভাবস্থায় ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে বা গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া উচিত
গর্ভাবস্থায় শরীরে সুস্থ ও বা গর্ভের শিশু সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার জন্য বিভিন্ন ধরনের ফল খাওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। যে ফল গুলো খাওয়ার মাধ্যমে গর্বে শিশু ও গর্ভবতী মায়েরা উভয় সুস্থ থাকে। নিচে কিছু ফলের নাম দেওয়া হলো যা গর্ভাবস্থায় খাওয়া যেতে পারে।
১.কলাঃ গর্ভাবস্থায় কলা খুব উপকারী একটি খাবার। গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন খাবার তালিকায় কলা রাখা উচিত। কারণ কলায় প্রচুর পরিমাণে আয়রন বা কার্বোহাইড্রেইট থাকে। যা শরীরে কার্বোহাইড্রেইট পরিমাণ এবং আয়রনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে ।যার ফলে শরীরে রক্তশূন্যতা কম হতে পারে।
২.বেদানাঃ গর্ভাবস্থায় বেদানা খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ গর্ভাবস্থায় বেদানা খেলে আয়রনের ঘাটতি পূরণ হয়। যার ফলে রক্তশূন্যতা কম দেখা দেয়।
৩.আপেলঃ গর্ভাবস্থায় আপেল খাওয়া যেতে পারে। কারণ আপেল সারাবছর পাওয়া যায়। এই আপেলের প্রচুর পরিমাণে লৌহ ও পটাশিয়াম থাকে। যা শরীরে শক্তি জোগাতে সাহায্য করে।
৪.কমলা বা মাল্টাঃ গর্ভাবস্থায় কমলা বা মাল্টা খাওয়া যেতে পারে। কারণ মাল্টা বা কমলায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। যা গর্ভের শিশুর বুদ্ধি বা বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে।
৫.এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সিজনাল ফল যেমন- আম, জাম, কাঁঠাল, তরমুজ ইত্যাদি গর্ভাবস্থায় খাওয়া যেতে পারে।
গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে না
গর্ভাবস্থায় কিছু কিছু ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এই ফলগুলো গর্ভাবস্থার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে । এমনকি গর্ভপাত ও ঘটাতে পারে। নিচে কিছু ফলের নাম দেয়া হলো যে ফলগুলো গর্ভাবস্থায় খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
১.আনারসঃ গর্ভাবস্থায় আনারস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ আনারসে ব্রোমেলাইন নামক একটি উপাদান থাকে। যা জরায়ুর মুখ নরম করে এবং জরায়ুর মুখে ব্যাথা সৃষ্টি করে। যার ফলে গর্ভপাত হওয়া সম্ভবনা থাকে। এছাড়াও আনারস খেলে ডায়রিয়া দেখা দেয়। যার ফলে গর্ভপাতের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
২.পেঁপেঃ গর্ভাবস্থায় কাঁচা পেঁপে খুবই ক্ষতিকর। কারণ কাঁচা পেঁপে তে প্রচুর পরিমাণে ল্যাটেক্স রয়েছে যা গর্ভপাত ঘটায় । এছাড়াও গর্ভাবস্থায় কাঁচা পেঁপে খেলে পাকস্থলীতে ব্যথা হতে পারে।
৩.আঙ্গুরঃ গর্ভাবস্থায় আঙ্গুর খাওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ থাকে। আর এ সময় আঙ্গুর খেলে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
৪.অতিরিক্ত ফরমালিন যুক্ত বা হিমায়িত যেকোনো ফল গর্ভাবস্থায় খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ এসব ফলে অতিরিক্ত ফরমালিন দেওয়ার কারণে দীর্ঘদিন যাবৎ সংরক্ষণ করে রাখা হয়। যার ফলে এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে বিষাক্ত পদার্থ থাকে। যা গর্ভে শিশুর জন্য খুবই ক্ষতিকারক হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না
গর্ভাবস্থায় খাবার তালিকায় পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ শাকসবজি রাখতে হবে। এর মধ্যে কিছু কিছু শাকসবজি আছে যে শাকসবজি গুলো গর্ভাবস্থায় খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
১.গর্ভাবস্থায় কাঁচা পেঁপে খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ গর্ভাবস্থায় কাঁচা পেঁপে খেলে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
২.গর্ভাবস্থায় করলা খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। কারণ করলা অনেক সময় গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
৩.গর্ব অবস্থায় বিভিন্ন ধরনের শস্যদানা যেমন- গম- শিমের বীজ বা বিভিন্ন ধরনের অঙ্কুরিত বিজ খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। কারণ এই খাবারগুলো গর্বের শিশুর জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে।
৪.গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন ধরনের কাঁচা সবজি দিয়ে সালাত বানিয়ে খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এই কাঁচা সবজিতে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে যা গর্ভে শিশুর জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে।
৫.গর্ভাবস্থায় সজিনা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ গর্ভাবস্থায় সজিনা খেলে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৬.গর্ভাবস্থায় অ্যালোভেরার জুস বা শরবত খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এলোভেরার জুস বা শরবত গর্ভাবস্থায় গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিতে পারে।
গর্ভাবস্থায় কি কি মাছ খাওয়া যাবে না
গর্ভাবস্থায় প্রায় সব ধরনের মাছ শরীরের জন্য খুবই উপকারী। তবে গর্ব অবস্থায় দুই একটি সামুদ্রিক মাছ যেমন -শার্ক, টুনা ফিস ইত্যাদি খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। কারণ এসব মাসে প্রচুর পরিমাণে পারদ থাকে। যা গর্বের শিশুর জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় না খেয়ে থাকলে কি হয়
গর্ব অবস্থায় সঠিক সময়ে পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই খাবার খাওয়ার মাধ্যমে গর্ভবতী মায়েরা এবং গর্ভের শিশু সুস্থ স্বাভাবিক থাকে। এবং গর্বের শিশুর স্বাভাবিকভাবে সঠিকভাবে বিকাশ ঘটে। গর্ভাবস্থায় অনেক সময় অনেকেই অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকে কিন্তু ও গর্ভাবস্থায় অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকা উচিত নয়। কারণ গর্ব অবস্থায় না খেয়ে থাকলে গর্ভের শিশু সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে না। আবার সঠিকভাবে গর্বে শিশুর বুদ্ধি বিকাশ ঘটতে পারে না। তাই গর্ভাবস্থায় পাঁচবার খাবার খাওয়া উচিত।
গর্ভাবস্থায় কি কি কাজ করা নিষেধ
গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস এবং শেষের তিন মাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় কিছু কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে যে কাজগুলো গর্ভের সন্তানের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
১.গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ভারী কাজ যেমন- মসলা বাটা, টিউবওয়েল চাপা, জামাকাপড় কাঁচা, ভারি জিনিস উঠানো ইত্যাদি কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
২.গর্ভাবস্থায় ঘন ঘন ট্রাভেল করা থেকে বিরত থাকতে হবে ।
৩.পেটে চাপ দিয়ে বসে যে কোন ধরনের কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪.গর্ভাবস্থায় ঘন ঘন সিঁড়ি দিয়ে উঠানামা করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
সর্বোপরি গর্ভাবস্থায় গর্বের সন্তান এবং নিজে সুস্থ থাকার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং সেই অনুযায়ী খাবার এবং জীবন যাপন করতে হবে। তাহলে সুস্থ ভাবে গর্ভের শিশু পৃথিবীতে আসতে পারবে।