গর্ভাবস্থায় কোন মাসে কোন সূরা পড়তে হয়
গর্ভধারণ করলে গর্ভকালীন সময়ে ইসলামিক শরীয়ত মোতাবেক চললে গর্বের সন্তান সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে বা গর্ভের সন্তান দ্বীনদার হয়ে বেড়ে ওঠে তাই গর্ভকালীন সময়ে বেশি বেশি করে কোরআন তেলাওয়াত বা করা উত্তম তাই আমাদের আজকের এই পোস্টের আলোচ্য বিষয় হলো গর্ভাবস্থায় কোন মাসে কোন সূরা পড়তে হয়, গর্ভাবস্থায় জিকির, গর্ভাবস্থায় রোজা রাখার ফজিলত, গর্ভাবস্থায় সূরা মারিয়াম শুনলে কি হয়, গর্ভাবস্থায় বাচ্চা সুরক্ষিত রাখার আমল,গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসের সতর্কতা, গর্ভের সন্তান সুন্দর হওয়ার দোয়া, গর্ভের বাচ্চা সুস্থ থাকার লক্ষণ এবং পেটে বাচ্চা মারা যাওয়ার লক্ষণ।
আমরা আজকে এই পোস্টে আলোচনা করব গর্ভাবস্থায় কোন মাসে কোন সূরা পড়তে হয়
গর্ভাবস্থায় কোন মাসে কোন সূরা পড়তে হয়
গর্বের সন্তান সুস্থ স্বাভাবিক বা সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য কোরআনী আমল সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় বেশি বেশি করে কোরআন তেলাওয়াত করতে হবে। এ সময়ে প্রতিমাসে এক একটি সূরার তেলাওয়াত এক একটি ফজিলত রয়েছে। তাই নিচে গর্ভাবস্থায় কোন মাসে কোন সূরা পড়তে হয় তা দেওয়া হলঃ
১.গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসে সূরা আল-ইমরান পড়ার ফজিলত অনেক। প্রথম মাসে সূরা আল-ইমরান পাঠ করলে গর্ভের সন্তান দামি হয়।
২.গর্ভাবস্থায় দ্বিতীয় মাসে সূরা ইউসুফ করা উত্তম। কারণ দ্বিতীয় মাসে সূরা ইউসুফ পাঠ করলে করলে গর্ভের সন্তান সুন্দর হয়।
৩.গর্ভাবস্থায় তৃতীয় মাসে সূরা মারিয়াম পড়া উচিত। কারণ তৃতীয় মাসে সূরা মারিয়াম পাঠ করলে সন্তান সহিষ্ণু,সহনশীল বা ধৈর্যশীল হয়।
৪.গর্ভাবস্থায় চতুর্থ মাসে সূরা লোকমান পড়া উত্তম। কারণ চতুর্থ মাসে সূরা লোকমান পাঠ করলে সন্তান বুদ্ধিমান বা মেধাবী হয়।
৫.গর্ভাবস্থায় পঞ্চম মাসে সূরা মুহাম্মদ পড়া খুবি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পঞ্চম মাসে আল্লাহ তা’লা সন্তানের চরিত্র গঠন করেন। তাই পঞ্চম মাসে সূরা মুহাম্মদ পাঠ করলে সন্তান চরিত্রবান হয়।
৬.গর্ভাবস্থায় ষষ্ঠ মাসে সূরা ইয়াসিন পড়া উত্তম। কারণ ষষ্ঠ মাসে সূরা ইয়াসিন পাঠ করলে সন্তান জ্ঞানী বা সুবিচারপূর্ণ হয়।
৭.গর্ভাবস্থায় সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম মাসে সূরা ইউসুফ, সূরা মুহাম্মদ, সূরা ইব্রাহীমের কিছু কিছু অংশ পাঠ করা উত্তম।
গর্ভাবস্থায় জিকির
গর্ভকালীন সময়ে নির্দিষ্ট কোন আমল করার কথা কুরআন বা হাদিসে নেই। তবে গর্ভাবস্থায় মায়েরা যে কাজগুলো করে থাকেন সেই কাজের প্রভাব গর্ভের সন্তানের উপরে পড়ে থাকে। তাই গর্ভকালীন সময়ে বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত বা জিকির করা উত্তম।কারণ গর্ভকালীন সময়ে বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত বা জিকির করলে তার প্রভাব গর্বের সন্তানের উপরে পড়ে। যার ফলে গর্ভের সন্তান দ্বীনদার ও নেককার হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় রোজা রাখার ফজিলত
অনেকেই মনে করেন গর্ভাবস্থায় রোজা রাখলে গর্ভের সন্তানের ক্ষতি হতে পারে। তবে গর্ভাবস্থায় রোজা রাখলে গর্বের সন্তানের কোন ক্ষতি হয় না। তবে যদি গর্ভবতী নারীরা শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকে বা শরীরে কোন সমস্যা থাকে। তাহলে গর্ভাবস্থায় রোজা রাখা থেকে বিরত থাকা উচিত।কারণ গর্ভাবস্থায় অসুস্থ থাকার পরেও রোজা থাকলে শরীরে পানি শূন্যতা সমস্যা দেখা দিতে পারে। এতে করে বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে।তবে গর্ভাবস্থায় সুস্থ স্বাভাবিক থাকলে ফরজ রোজা রাখা উত্তম। আর যদি গর্ভাবস্থায় অসুস্থ থাকে তাহলে রোজা পরবর্তীতে সুস্থ হওয়ার পরে রাখতে হবে।
গর্ভাবস্থায় সূরা মারিয়াম শুনলে কি হয়
গর্ভাবস্থায় গর্ভের সন্তানকে দ্বীনদার নেকার বানানোর জন্য কোরআন তেলাওয়াত বা জিকির করা উত্তম। তবে এ সময় যদি কেউ কোরআন তেলাওয়াত করতে না পারে তাহলে কোরআন তেলাওয়াত করা শুনতে পারে। এ সময় যদি সূরা মারিয়াম তেলাওয়াত শুনে তাহলে গর্ভের সন্তান সহিষ্ণু,সহনশীল বা ধৈর্যশীল হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় বাচ্চা সুরক্ষিত রাখার আমল
গর্ভের সন্তানকে সুস্থ বা সুরক্ষিত রাখার জন্য বেশি বেশি দোয়া করতে হবে। এ সময় নিন্মুক্ত দুটি দোয়া বেশি বেশি পাঠ করা যেতে পারে। এতে করে গর্বের সন্তান সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে।
দোয়াটি হলঃ
رَبِّ هَبْ لِي مِن لَّدُنْكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةً إِنَّكَ سَمِيعُ الدُّعَاء
বাংলা উচ্চারণঃ” রাব্বি হাবলি মিল্লাদুনকা যুরিরয়্যাতান ত্বাইয়্যিবাহ, ইন্নাকা সামিউদ দুআ।”
অর্থঃ “হে আমাদের প্রতিপালক! তোমার পক্ষ থেকে আমাকে পূতপবিত্র সন্তান দান করো। নিশ্চয়ই তুমি প্রার্থনা কবুলকারী।” (সুরা আল-ইমরান আয়াত নং- ৩৮)।
দোয়াটি হলঃ
رَبِّ هَبْ لِي مِنَ الصَّالِحِينَ
বাংলা উচ্চারণঃ ”রাব্বি হাবলি মিনাস সলেহিন।”
অর্থঃ ”হে আমার প্রভু! আমাকে এক সৎপুত্র দান করুন।” (সুরা সাফফাত আয়াত নং- ১০০)
এছাড়াও রাতে ঘুমানোর আগে সূরা ফালাক, সূরা নাস, সূরা ইখলাস সূরা কাফিরুন পড়ে পেটে ফু দেয়া উত্তম। এতে করে গর্ভের সন্তান শয়তানের বদনজর থেকে সুরক্ষিত থাকতে পারে।
এছাড়াও গর্ভের সন্তানকে সুস্থ সুরক্ষিত রাখার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে এবং বিশ্রাম নিতে হবে।
গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসের সতর্কতা
গর্ভধারণের প্রথম তিন মাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।কারণ প্রথম তিন মাসে কোন ধরনের সমস্যা হলে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ।তাই এই প্রথম তিন মাসে খুবই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
১.গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে আলট্রাসনো করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আলট্রাসনো করার মাধ্যমে গর্ভের শিশু সঠিক পজিশনে বা সঠিক অবস্থানে আছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা যায়।
২.গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয় এমন সব খাবার যেমন- আনারস, পেঁপে, আঙুর, কামরাঙ্গা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৩.গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে কম সেদ্ধ করা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এতে ব্যাকটেরিয়া থেকে যায় যার ফলে গর্বে শিশু ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে
।
৪.গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে ট্রাভেল বা জার্নি করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৫.গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে ভারী কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে বা ঘনঘন সিঁড়ি দিয়ে উপরে ওঠানামা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৬.গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকতে হবে।
৭.গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিতে হবে।
৮.গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
৯.কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দেয় এমন সব খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে উপরোক্ত কাজগুলো করা থেকে বিরত থাকতে হবে বা পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। তা না হলে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
গর্ভের সন্তান সুন্দর হওয়ার দোয়া
আল্লাহ তা’লা শিশু গর্ভে থাকা কালীনী তার আকার, আকৃতি, গঠন ও চেহারা ইত্যাদি তৈরি করে দেন। তাই এ সময় সূরা ইউনুস পাঠ করা যেতে পারে। এতে করে গর্ভের সন্তান সুন্দর হতে পারে।তাই গর্ব অবস্থায় বেশি বেশি সূরা ইউনুস পাঠ করতে হবে।
গর্ভের বাচ্চা সুস্থ থাকার লক্ষণ
অনেক গর্ভবতী মায়েরা দুশ্চিন্তায় থাকে এদের তাদের গর্ভের শিশু সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠছে কিনা। তবে কিছু লক্ষণের মাধ্যমে বোঝা যায় যে গর্বের শিশু সঠিকভাবে সুস্থভাবে বেড়ে উঠছে।
গর্ভের বাচ্চা সুস্থ থাকার প্রথম লক্ষণ হলো নড়াচড়া করা। মূলত পাঁচ মাসের পর থেকে পেটের ভিতর বাচ্চা নড়াচড়া করা শুরু করে। যদি দৈনিক ১০ থেকে ১২ বার শিশু নড়াচড়া করে তাহলে বুঝতে হবে শিশু সুস্থ আছে।
গর্ভের বাচ্চা সুস্থ থাকার আরেকটি লক্ষণ হলো ওজন সঠিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়া। যদি মাস অনুযায়ী গর্ভের বাচ্চা সঠিক ওজনে বৃদ্ধি পায়। তাহলে বুঝতে হবে গর্ভের বাচ্চা সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠছে।
গর্ভবতী মায়েদের শারীরিক অবস্থার উপরেও নির্ভর করে গর্ভের বাচ্চা সুস্থ থাকা। তাই গর্ভবতী মায়েদের গর্ভকালীন সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার বা বিশ্রাম বা দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকতে হবে। তাহলে গর্ভের বাচ্চা সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠবে।
পেটে বাচ্চা মারা যাওয়ার লক্ষণ
গর্ভের বাচ্চা সুস্থ থাকার অন্যতম প্রধান লক্ষণ হল নড়াচড়া করা।পেটে বাচ্চা মারা গেলে প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু লক্ষণ দেখা দেয় । নিচে লক্ষণ গুলো দেওয়া হলোঃ
১.পেটে বাচ্চা মারা যাওয়ার অন্যতম লক্ষণ হলো পেটের বাচ্চা নড়াচড়া না করা।
২.পেট শক্ত হয়ে যাওয়া।
৩.পেটে ব্যথা হওয়া।
৪.শরীরে অস্বস্তি বোধ হতে পারে।
উপরোক্ত লক্ষণ গুলো পেটে বাচ্চা মারা যাওয়ার লক্ষণ হতে পারে। তাই উপরোক্ত লক্ষণ দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
সর্বোপরি গর্ভাবস্থায় গর্ভের সন্তানকে সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠার জন্য গর্ভবতী মায়েদের নিয়ম কানুন মেনে জীবন যাপন করতে হবে এবং ইসলামিক শরীয়ত মোতাবেক জীবন যাপন করা উচিত। এটা করলে গর্ভে সন্তান সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠে এবং দ্বীনদার বা নেককার হয়।