দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর ঔষধ

দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর ঔষধ


বর্তমানে ছোট থেকে বড় প্রায় সবারই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেয়।অনেক সময় হজম প্রক্রিয়ায় সমস্যা দেখা দিলে খাবার হজম হয় না। যার ফলে পেটে গ্যাস জমে যায়। যা পরবর্তীতে গ্যাস্ট্রিক আলসারের মতো রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তাই আমাদের আজকের এই পোস্টের আলোচ্য বিষয় হলো পেটে গ্যাস হওয়ার কারণ, পেটে গ্যাস হলে কি কি সমস্যা হয়, পেটে গ্যাস এর লক্ষণ, পেটে গ্যাস হলে কি বুক ধরফর করে, দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায়, অতিরিক্ত গ্যাস হলে কি খাওয়া উচিত, গ্যাস্ট্রিক হলে কি কি খাওয়া যাবে না, সকালে কি খেলে গ্যাস হবে না,কোন কোন সবজি খেলে গ্যাস হয় না, কোন কোন ফল খেলে গ্যাস হয় না, দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর ঔষধ এবং গ্যাসের ঔষধ খাওয়ার নিয়ম। 

 


আমরা আজকে এই পোস্টে আলোচনা করব দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর ঔষধ


পেটে গ্যাস হওয়ার কারণ


আমাদের পাকস্থলীতে গ্যাস্ট্রিক গ্ল্যান্ড নামে একটি গ্ল্যান্ড থাকে। যা অ্যাসিড নিঃসরণ করে। যদি গ্যাস্টিক গ্ল্যান্ড অতিরিক্ত পরিমাণে অ্যাসিড নিঃসরণ করে তখনই পেটে গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়াও বিভিন্ন কারণে পেটে গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। নিচে কারণগুলো দেওয়া হলোঃ


১.আঁশযুক্ত বা ফাইবার যুক্ত খাবার কম খাওয়ার ফলে গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। কারণ আঁশযুক্ত খাবার বা ফাইবার যুক্ত খাবার হজম প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সাহায্য করে। আর এই হজম প্রক্রিয়ায় যখন বাধার সৃষ্টি হয় তখনই পেটে গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয়।

২.যদি দীর্ঘ সময় খালি পেটে থাকা হয়। তাহলে পেটে গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৩.অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত বা মসলাযুক্ত খাবার খাবার মাধ্যমেও গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৪.অতিরিক্ত ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার বা কোল্ড ড্রিংকস জাতীয় খাবার খাওয়ার মাধ্যমেও গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৫.অতিরিক্ত ধূমপান করার মাধ্যমে ও গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৬.অতিরিক্ত অ্যালকোহল বা মদ্যপান করার কারণেও পেটে গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৭.অতিরিক্ত টেনশন বা দুশ্চিন্তা করার কারণে গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৮.অনেক সময় অতিরিক্ত ঘুম কম হলেও গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে।



পেটে গ্যাস হলে কি কি সমস্যা হয়



পেটে অতিরিক্ত গ্যাস হলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। সেই সমস্যা গুলো দেখা দিলে বুঝতে হবে পেটে গ্যাসের সমস্যা হয়েছে। তাই দ্রুত গ্যাস কমানোর চেষ্টা করতে হবে বা ওষুধ খেতে হবে।


১.পেট ফাঁপা বা ফুলে যাওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে।

২.পেটে, পিঠে, বুকে বা কোমরে ব্যথার সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৩.বদ হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৪.বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে।

৫.মাথা ঘোরার সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৬.শরীরে ক্লান্তি বা দুর্বলতা অনুভূত হতে পারে।

৭.গ্যাস্ট্রিক আলসারের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৮.হজম প্রক্রিয়ায় সমস্যা দেখা দিতে পারে।



পেটে গ্যাস এর লক্ষণ


পেটে গ্যাসের সমস্যা দেখা দিলে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। যে লক্ষণগুলো দেখলে বোঝা যায় যে পেটে গ্যাসের সমস্যা হয়েছে। নিচে লক্ষণগুলো দেওয়া হলোঃ





১.পেট ফাঁপা দেওয়া বা ফুলে যাওয়া।

২.পেটে, পিঠে, কোমরে বা বুকে ব্যথা হওয়া।

৩.পেট ভরা ভরা লাগা।

৪.বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।

৫.ঘন ঘন হেঁচকি বা ঢেকুর তোলা।

৬.মাথা ঘোরা।

৭.ক্ষুধা মন্দা দেখা দেওয়া।

৮.শরীরে ক্লান্তি বা দুর্বলতা লাগা ।

৯.শরীরে অস্বস্তি বোধ হওয়া।

১০.ঘন ঘন বায়ু ত্যাগ হওয়া।

১১.পেট শক্ত হয়ে যাওয়া।


উপরোক্ত লক্ষণগুলি দেখা দিলে বুঝতে হবে গ্যাসের সমস্যা দেখা দিছে। তাই দ্রুত গড়া উপায়ে গ্যাস কমাতে হবে বা ওষুধ খেয়ে গ্যাস নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।কারণ অতিরিক্ত গ্যাসের সমস্যা দেখা দিলে শ্বাসকষ্টের মত সমস্যা দেখা দিতে পারে।



পেটে গ্যাস হলে কি বুক ধরফর করে


পেটে অতিরিক্ত গ্যাস জমে গেলে সেটা হার্টের উপরে চাপ সৃষ্টি করে। যার ফলে বুকে ব্যথা অনুভূত হয়। ফলে বুকে অস্বস্তি বোধ হয়। অনেক সময় এই অতিরিক্ত গ্যাসের কারণে বুক ধরফর ও করতে পারে।হার্টবিট বেড়ে যাওয়ার কারণে বুক ধরফর করে । অনেক সময় এটি শ্বাসকষ্টে পরিণত হতে হয়।


দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায়


হঠাৎ পেটে অতিরিক্ত গ্যাসের সমস্যা দেখা দিলে শরীরে অস্বস্তি বোধ হয় বা বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয় । তাই দ্রুত পেটে গ্যাস কমানোর চেষ্টা করা উচিত। নিচে কিছু উপায় দেওয়া হলো যে উপায় গুলো অবলম্বন করলে পেটে গ্যাস কমানো যায়।




১.হঠাৎ পেটে অতিরিক্ত গ্যাসের সমস্যা দেখা দিলে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা উচিত। কারণ পানি হজম প্রক্রিয়া দ্রুত করতে সাহায্য করে। যার ফলে গ্যাসের সমস্যা কমে যেতে পারে।



২.দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর জন্য আদা খাওয়া যেতে পারে । পেটে অতিরিক্ত গ্যাসের সমস্যা দেখা দিলে এক টুকরো আদা চিবিয়ে খেলে সঙ্গে সঙ্গে গ্যাসের সমস্যা কিছুটা কমতে পারে।



৩.দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর জন্য কলা খাওয়া যেতে পারে। কারণ কলাতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম ও প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড আছে। যা এসিডের বিরুদ্ধে কাজ করে। যার ফলে দ্রুতই গ্যাসের সমস্যা কমে যায়।



৪.হঠাৎ করে পেটে গ্যাস হলে দ্রুত পেটে গ্যাস কমানোর জন্য তুলসী পাতা বা পুদিনা পাতা খাওয়া যেতে পারে। কারণ তুলসী পাতা বা পুদিনা পাতা হজম ক্ষমতা বাড়ায়। যার ফলে সহজে হজম প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।



৫.দ্রুত পেতে গ্যাস কমানোর জন্য দই খাওয়া যেতে পারে। কারণ দইতে থাকা ব্যাকটেরিয়া  হজম শক্তি বাড়ায়। ফলে দ্রুত খাবার হজম হয়। যার ফলে গ্যাসের সমস্যা কম হয়।




৬.দ্রুত পেটে গ্যাস কমানোর জন্য এক টুকরো দারচিনি এলাচ বা লবঙ্গ খাওয়া যেতে পারে । এতে করে পাকস্থলীতে হজম প্রক্রিয়া দ্রুত করতে সহায়তা করে। যার ফলে গ্যাসের সমস্যা কমে যায়।



৭.দ্রুত পেটে গ্যাস কমানোর জন্য ডাবের পানি খুবই কার্যকরী একটি খাবার। পেটে গ্যাস হলে ডাবের পানি খাওয়া উচিত। এটি দ্রুত গ্যাস কমাতে সাহায্য করে।

৮.দ্রুত পেটে গ্যাস কমানোর আরেকটি অন্যতম উপায় হল হাটাহাটি বা হালকা ব্যায়াম করা। খাবার পরে হাঁটাহাঁটি বা হালকা ব্যায়াম করলে সহজেই খাবার গুলো হজম হয় । যার ফলে গ্যাসের সমস্যা অনেকটা কমে যায়।



৯.পেটে গ্যাস কমানোর আরেকটি অন্যতম উপায় হল জিরা পানি। পেটে গ্যাস কমাতে জিরা পানি খুবই কার্যকরী। পেটে গ্যাসের সমস্যা দেখা দিলে জিরা পানি খেলে সঙ্গে সঙ্গে গ্যাস অনেকটা কমে যায়।



অতিরিক্ত গ্যাস হলে কি খাওয়া উচিত



অতিরিক্ত গ্যাস হলে কিছু খাবার খাওয়ার মাধ্যমে যেমন- আদা, জিরা, দই, পুদিনা পাতা, তুলসী পাতা, মৌরি, ডাবের পানি ইত্যাদি খাওয়ার মাধ্যমে সহজে গ্যাসের সমস্যা কমানো যেতে পারে।উপরেরটা খাবারগুলো অতিরিক্ত গ্যাসের সমস্যা দেখা দিলে খাওয়া উচিত। কারণ উপর একটা খাবারগুলো গ্যাসের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।



গ্যাস্ট্রিক হলে কি কি খাওয়া যাবে না



অতিরিক্ত গ্যাসের সমস্যা দেখা দিলে কিছু খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। কারণ এই খাবারগুলো গ্যাসের সমস্যা আরো বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে। নিচে কিছু খাবারের নাম দেয়া হলো যে খাবারগুলো যাদের অতিরিক্ত গ্যাসের সমস্যা তাদের খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।





১.অতিরিক্ত ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

২.অতিরিক্ত মশলাযুক্ত বা চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

৩. দুধ বা দুগ্ধ জাতীয় খাবার যেমন- পনির, চিজ, বাটার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

৪.অতিরিক্ত ধূমপান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

৫.অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

৬.অতিরিক্ত অ্যালকোহল বা কোল্ড ড্রিংকস জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

৭.অতিরিক্ত চা বা কফি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

৮.অতিরিক্ত শাক খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ যাদের অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা তারা অতিরিক্ত শাক খেলে গ্যাসের সমস্যা আরো বৃদ্ধি পেতে পারে।



সকালে কি খেলে গ্যাস হবে না


প্রতিদিন সকালে খালি পেটে কয়েকটি খাবার খাওয়ার অভ্যাস করলে চিরতরে গ্যাসের সমস্যা দূর হয়ে যেতে পারে।


১.সকালে খালি পেটে জিরা পানি খাওয়া যেতে পারে। জিরা পানি হজম প্রক্রিয়া সচল রাখে। যার ফলে গ্যাসের সমস্যা কম হয়।

২.রাতে কয়েকটি কিসমিস পানিতে ভিজিয়ে রেখে সেটা সকালে খালি পেটে খেলে গ্যাসের সমস্যা অনেকটাই কমে যায়।

৩.সকালে খাবার তালিকায় কলা রাখলে গ্যাসের সমস্যা কম হয়।

৪.সকালে খালি পেটে হালকা কুসুম গরম পানি বা পুদিনা পাতা দিয়ে পানি ফুটিয়ে কুসুম গরম থাকা অবস্থায় পান করলে গ্যাসের সমস্যা কম হয়।



কোন কোন সবজি খেলে গ্যাস হয় না





সাধারণত কোন সবজিতে গ্যাস হয় না। তবে যদি শাক-সবজি কাঁচা খাওয়া হয় তাহলে অনেক সময় গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয়। তাই সব ধরনের সবজি খাওয়ার আগে রান্না করে নিতে হবে বা কাঁচা খাওয়ার আগে অন্ততপক্ষে ৩০ মিনিট থেকে এক ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে । তারপরে খাওয়া উচিত তাহলে গ্যাসের সমস্যা কম হতে পারে। 



কোন কোন ফল খেলে গ্যাস হয় না


সাধারণত কোন ফল খেলেই গ্যাসের সমস্যা হয় না যদি না খালি পেটে ফল খাওয়া হয়। কারণ খালি পেটে ফল খেলে গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয় । তাই খালি পেটে ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। এছাড়া আনারস ,পেঁপে বা কিউই ফল হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে। যার ফলে গ্যাসের সমস্যা কম হয়। 





দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর ঔষধ


হঠাৎ গ্যাসের সমস্যা দেখা দিলে সেটি কমানোর জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু ঘরোয়া টোটকা ব্যবহার করা যেতে পারে। তাতে যদি দ্রুত গ্যাস না কমে তাহলে ইনো পানিতে গুলিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এটি খেলে সঙ্গে সঙ্গে পেটে গ্যাস কমে যেতে পারে। এছাড়াও বাজারে বিভিন্ন ধরনের গ্যাসের ঔষধ পাওয়া যায় যে ওষুধগুলো খেলে সমস্যা কমে যায়।নিচে কিছু গ্যাস্ট্রিকের ওষুধের নাম দেওয়া হল যেগুলো খেলে গ্যাসের সমস্যা কমে কমে যায়।


১.রেনিটিডিন 

২.ওমিপ্রাজল 

৩.ইসোমিপ্রাজল 

৪.রেবিপ্রাজল

৫.প্যানটোপ্রাজল


এছাড়াও দ্রুত পেতে গ্যাস কমানোর জন্য অ্যান্টাসিড বা অ্যান্টাসিড প্লাস খাওয়া যেতে পারে। এতে করে দ্রুত পেটে গ্যাস কমে যায় বা ফার্মেসিতে বিভিন্ন ধরনের গ্যাসের সিরাপ পাওয়া যায়। যে সিরাপ খাওয়ার মাধ্যমে দ্রুত পেটের গ্যাস কমে যায়।


উপরোক্ত গ্রুপের বিভিন্ন ঔষধ বাজারে ওষুধের দোকানে পাওয়া যায়। অতিরিক্ত গ্যাসের সমস্যা দেখা দিলে ওষুধের দোকান থেকে যেকোনো গ্রুপের ওষুধ কিনে খেলে দ্রুত এই গ্যাসের সমস্যা কমে যেতে পারে।



গ্যাসের ঔষধ খাওয়ার নিয়ম


গ্যাসের ওষুধ মূলত খালি পেটে খাবার নিয়ম। চিকিৎসক গ্যাসের ওষুধ খাবার খাওয়ার অন্তত ৩০ মিনিট থেকে ০১ ঘন্টা আগে খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।



সর্বোপরি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে অস্বস্তিতে ফেলে দেয়। এছাড়াও দীর্ঘদিন যাবত গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থাকলে গ্যাস্ট্রিক আলসারের মতো রোগের লক্ষণ দেখা দেয়। তাই আমাদের সবসময়ই যেসব খাবারে গ্যাসের সমস্যা খায় সেসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।

*

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post