বাচ্চাদের পেট ব্যাথা কমানোর ঔষধ
বাচ্চাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় কম থাকে। তাই এ সময় সহজেই বাচ্চারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। অনেক সময় বিভিন্ন কারণে বাচ্চাদের পেটে ব্যথা হয়। যার কারণে পেট ফাঁপা দেয়। তাই আমাদের আজকের এই পোস্টের আলোচ্য বিষয় হলো বাচ্চাদের পেটে ব্যথা কেন হয়, বাচ্চাদের পেট ব্যাথা কমানোর ঘরোয়া উপায়, বাচ্চাদের পেটে ব্যথা কি স্বাভাবিক, বাচ্চাদের পেট ব্যাথা কমানোর ঔষধ, বাচ্চাদের পেট ব্যাথা কমানোর দোয়া, পেট ব্যথা কিসের লক্ষণ, পেট ব্যাথা হলে কি খাওয়া উচিত, পেটে ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় এবং পেটে ব্যথা কমানোর ওষুধ।
আমরা আজকে এই পোস্টে আলোচনা করব বাচ্চাদের পেট ব্যাথা কমানোর ঔষধ
বাচ্চাদের পেটে ব্যথা কেন হয়
যেহেতু বাচ্চাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে বা বাচ্চাদের হজম শক্তি কম থাকে। তাই কোন ধরনের বাড়তি খাবার খাওয়ার মাধ্যমে অনেক সময় বাচ্চাদের পেটে ব্যথা সমস্যা দেখা দেয়।
১.অনেক সময় অতিরিক্ত পেতে গ্যাসের কারণে বাচ্চাদের পেটে ব্যথা হয়ে থাকে।
২.হজম শক্তি বাচ্চাদের কম থাকায় সহজে খাবার হজম না হওয়ার ফলে বদহজম হয়ে যায়। যার কারণে বাচ্চাদের পেটে ব্যথা হয়ে থাকে।
৩.বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিলে পেটে ব্যথা হতে পারে।
৪.বাচ্চাদের পেটে প্রায় সময় কৃমির সংক্রামক ঘটে যার ফলে বাচ্চাদের পেটে ব্যথা হতে পারে।
৫.বাচ্চাদের পেটে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের সংক্রমণ বা ইনফেকশনের কারণে বাচ্চাদের পেটে ব্যথা হতে পারে ।
৬.বাচ্চাদের যদি প্রসাবে ইনফেকশন এর সমস্যা দেখা দেয় । তাহলে বাচ্চাদের প্রসাবে ইনফেকশনের কারণে পেটে ব্যথা হতে পারে।
৭.অনেক সময় এলার্জি যুক্ত খাবার খাওয়ার মাধ্যমে বাচ্চাদের পেটে ব্যথা হতে পারে।
বাচ্চাদের পেট ব্যাথা কমানোর ঘরোয়া উপায়
অনেক সময় বিভিন্ন কারণে বাচ্চাদের পেটে ব্যথা হয়ে থাকে । আগে দেখতে হবে ঠিকই কারণে বাচ্চাদের পেটে ব্যথা হচ্ছে। তারপর সেই অনুযায়ী ঘরোয়া চিকিৎসা করা যেতে পারে।
১.অনেক সময় বাচ্চাদের পেটে অতিরিক্ত গ্যাস জমে গেলে পেটে ব্যথা হতে পারে। তাই গ্যাসের সমস্যা জনিত কারণে পেটে ব্যথা দেখা দিলে বাচ্চাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করাতে হবে এবং বাইরের খাবার খাওয়ানো থেকে বিরত রাখতে হবে।
২.অনেক সময় কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যার জন্য বাচ্চাদের পেটে ব্যথা হয়ে থাকে। তাই বাচ্চাদের যাতে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দেখা না দেয়। তার জন্য তরল জাতীয় খাবার খাওয়াতে হবে।
৩.বাচ্চাদের পেটে ব্যথা কমানোর জন্য আদা খাওয়ানো যেতে পারে। কারণ আদা পেটে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
৪.বাচ্চাদের পেটে ব্যথা কমানোর জন্য অ্যালোভেরার জুস খুবই উপকারী। হঠাৎ যদি বাচ্চাদের পেটে ব্যথা হয়। তাহলে দুই চামচ এলোভেরা রসের সাথে মধু মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে। এতে দ্রুত ও পেটে ব্যথা কমে যেতে পারে।
৫.তুলসী পাতার রস বাচ্চাদের পেটে ব্যথা কমানোর জন্য খুবই উপকারী। তাই বাচ্চাদের পেটে ব্যথা কমানোর জন্য তুলসীপাতা রস ও মধু মিশিয়ে বাচ্চাদের খাওয়ানো যেতে পারে। এতে করে দ্রুতই বাচ্চাদের পেটে ব্যথা কমে যেতে পারে।
৬.হঠাৎ করে বাচ্চাদের পেটে ব্যাথা সমস্যা দেখা দিলে এলার্জি জাতীয় খাবার খাওয়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে কারণ এলার্জি জাতীয় খাবার পেটে ব্যাথা বাড়াতে সাহায্য করে।
৭.এরপরও যদি বাচ্চাদের পেটে ব্যথা না কমে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
বাচ্চাদের পেটে ব্যথা কি স্বাভাবিক
অধিকাংশ বাচ্চাদের খাবার খাওয়ার মাধ্যমে বা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিলে পেটে ব্যথা হয়ে থাকে। অনেক সময় এই পেটে ব্যথা স্বাভাবিক বলে মনে করা হয়। তবে যদি পেটে ব্যথা অনেক দিন থাকে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
বাচ্চাদের পেট ব্যাথা কমানোর ঔষধ
বাচ্চাদের পেটে ব্যথা হলে ঘরোয়া উপায়ে বাচ্চাদের পেটে ব্যথা কমানো উচিত। তবে নিম্নে ওষুধের নাম দেওয়া হল যে ঔষুধগুলো খাওয়ালে বাচ্চাদের পেটে ব্যথা কমে যেতে পারে।
১. নিওপেপটিন(Neopeptin) ড্রপ বাচ্চাদের পেটে ব্যথা কমানোর জন্য খুবই কার্যকরী। এটি মূলত বাচ্চাদের গ্যাস জনিত বা কোষ্ঠকাঠিন্য জনিত কারণে পেটে ব্যথা হলে সেই ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও বাচ্চাদের পেটে ব্যাথা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করানো উচিত।
বাচ্চাদের পেট ব্যাথা কমানোর দোয়া
পেটে ব্যথা বা শরীরের যেকোনো ব্যথা কমানোর জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন। যে দোয়া পাঠ করলে আল্লাহ তা'আলা পেটে ব্যথা কমিয়ে দিতে পারেন।
এ সম্পর্কে সহিহ মুসলিম ও আবু দাউদ হাদিসে এসেছে, হযরত ওসমান ইবনে আবুল আস আস-সাকাফি (রাঃ) বর্ণনা করেন, একবার তিনি রাসুল (সাঃ) এর কাছে পেটে ব্যথার কথা জানান। তখন তিনি বলেন, পেটে ব্যথা আমাকে অস্থির করে তুলেছে। তখন রাসূল (সাঃ) বলেন, তুমি তোমার ডান হাত ব্যাথার স্থানে রেখে প্রথমে তিনবার ”বিসমিল্লা ” পড়ে এবং তারপরে নিম্নক্ত দোয়াটি সাতবার পড়ো। তখন আমি রাসূল (সাঃ) যা বললেন সেইরুপ করলাম এবং সাথে সাথে আল্লাহ তা’আলা আমার পেটে ব্যাথা দূর করে দিলেন ।
দোয়াটি হলোঃ
أعوذُ باللهِ و قُدرتِه من شرِّ ما أَجِدُ و أُحاذِرُ
বাংলা উচ্চারণঃ ”আউজু বি-ইজ্জাতিল্লাহি ওয়া কুদরাতিহি মিন শাররি মা আজিদু ওয়া উহাজিরু।”
অর্থঃ ”আল্লাহর মর্যাদা ও তার কুদরতের উসিলায় আমি যা অনুভব এবং ভোগ করছি, তা থেকে মুক্তি চাচ্ছি।”
তাই বাচ্চাদের পেটে ব্যথা হলে বাচ্চাদের পেটে হাত রেখে উপরোক্ত দোয়াটি পড়া যেতে পারে। এতে করে আল্লাহ তা’আলা বাচ্চাদের পেটে ব্যথা কমিয়ে দিতে পারেন।
পেট ব্যথা কিসের লক্ষণ
ছোট থেকে বড় প্রায় সকলেরই বিভিন্ন কারনে পেটে ব্যথার সমস্যা দেখা দেয়। অনেক সময় এই ব্যথা বিভিন্ন রোগের লক্ষণ হতে পারে। নিচে লক্ষণ গুলো দেওয়া হলঃ
১.অধিকাংশ সময় অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার কারণে পেটে ব্যথা হয়ে থাকে। আর এই পেটে ব্যথা অনেক সময় গ্যাস্ট্রিক আলসারের লক্ষণ হতে পারে।
২.অনেক সময় গলব্লাডার বা পাকস্থলীতে ইনফেকশন বা পাথর দেখা দিলে পেটে ব্যথা হতে পারে । তাই গলব্লাডার বা পাকস্থলীতে ইনফেকশন পেটে ব্যথার অন্যতম লক্ষণ হতে পারে।
৩.অনেক সময় কিডনিরজনিত সমস্যার কারণে পেটে ব্যথা হতে পারে। তাই পেটে ব্যথা কিডনিজনিত রোগের লক্ষণ হতে পারে।
৪.অনেক সময় প্রসাবে ইনফেকশন হলে পেটে ব্যথা হয়। তাই পেটে ব্যথা হলে ইউটিআই বা ইউরেনারি ট্রাক ইনফেকশন এর লক্ষণ হতে পারে।
৫.অনেক সময় অ্যাপেন্ডিসাইডের সমস্যার কারণে পেটে ব্যথা হয়। পেটে ব্যথা এপেন্ডিক্স এর লক্ষণ হতে পারে।
৬.মেয়েদের খেতে অনেক সময় মাসিকের কারণে পেটে ব্যথা হতে পারে।
পেট ব্যাথা হলে কি খাওয়া উচিত
ছোট থেকে বড় কমবেশি সবারই পেটে ব্যথা সমস্যা দেখা দেয়। এই পেটে ব্যথা দেখা দিলে কিছু খাবার খাওয়ার মাধ্যমে সহজেই পেটে ব্যথা দূর করা যায়।এছাড়াও কিছু কিছু খাবার এড়িয়ে চলা উচিত যে খাবারগুলো পেটে ব্যথা আরো বাড়িয়ে দিতে পারে।
১.শরীরে যে কোন ব্যথা কমাতে আদা খুব কার্যকরী। তাই পেটে ব্যথা হলে আদা খাওয়া যেতে পারে। এতে করে পেটে ব্যথা দ্রুত কমে যেতে পারে।
২.পেটে ব্যাথা হলে টক দই খাওয়া উচিত। টক দই পেটে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে বা পেটে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
৩.পেটে ব্যাথা হলে কাঁচকলা খাওয়া যেতে পারে। কারণ কাঁচকলা পেটের প্রদাহ বা পেটে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
৪.পেটে ব্যথা হলে প্রচুর পরিমাণে পানি খাওয়া উচিত।
৫.পেটে ব্যথা হলে পেপারমেন্ট চা খাওয়া উচিত । এটা কোষ্ঠকাঠিন্য বা গ্যাসের সমস্যা বা বদ হজমের সমস্যা দূর করে। যার কারণে পেটে ব্যথা কম হতে পারে।
পেটে ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়
পেটে ব্যথা হলে কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করে সহজেই পেটে ব্যথা কমানো যেতে পারে। নিচে কিছু ঘরোয়া উপায় দেওয়া হলোঃ
১.পেটে ব্যথা হলে পেটে ব্যাথা কমানোর জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
২.পেটে ব্যথা কমানোর জন্য পুদিনা পাতা চা বা লেবু চা খাওয়া যেতে পারে। এতে করে দ্রুতই পেটে ব্যথা কমে যেতে পারে।
৩.পেটে ব্যথা কমানোর জন্য ক্যামমিল চা খাওয়া যেতে পারে। ক্যামমিল চা পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব বা বদহজম বা ডায়রিয়ার সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
৪.পেটে ব্যাথা কমানোর জন্য পেপারমেন্ট চা খুবই কার্যকরী । পেটে ব্যথা হলে পেপারমেন্ট চা খেলে দ্রুত পেটে ব্যথা কমে যেতে পারে।
৫.পেটে ব্যথা কমানোর জন্য আদা চা বা আদা চিবিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এতে করে দ্রুত পেটে ব্যথা কমে যেতে পারে।
৬.হলুদ শরীরের জন্য অ্যান্টিসেটিক হিসেবে কাজ করে । তাই পেটে ব্যথা হলে হলুদ খাওয়া যেতে পারে। এতে করে দ্রুত পেটে ব্যথা কমে যেতে পারে।
৭.পেটে ব্যাথা কমানোর জন্য টক দই খুবই উপকারী । তাই পেটে ব্যথা হলে টক দই খাওয়া যেতে পারে। এতে করে দ্রুত পেটে ব্যথা কমে যেতে পারে।
পেটে ব্যথা কমানোর ওষুধ
যেহেতু বিভিন্ন কারণে ছোট থেকে বড় সবারই পেটে ব্যথা হয়ে থাকে। তাই আগে সঠিকভাবে জানতে হবে যে ঠিক কি কারনে পেটে ব্যথা হচ্ছে। সেই অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে।তবে যে কোন ধরনের ওষুধ খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
১.যদি অতিরিক্ত গ্যাসের কারণে পেটে ব্যথা হয় । তাহলে যেকোনো গ্যাসের ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। এতে করে দ্রুত গ্যাস কমে যাবে। যার ফলে পেটে ব্যথা কমে যাবে।
২.যদি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যার কারণে পেটে ব্যথা হয়ে থাকে। তাহলে ডুলকোলাক্স (Dulcolax) বা বিসাকোডিল (bisacodyl) ট্যাবলেট খাওয়া যেতে পারে। এতে করে দ্রুত কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হবে। যার কারণে পেটে ব্যাথা কমে যেতে পারে।
৩.এছাড়া ও পেটে ব্যথা কমানোর জন্য অ্যালজিন( Algin) ট্যাবলেট খাওয়া যেতে পারে। এতে করে দ্রুত পেটে ব্যথা কমে যেতে পারে।
৪.এছাড়াও যদি কিডনি জনিত সমস্যার কারণে বা গলব্লাডারে ইনফেকশন জনিত কারণে পেটে ব্যথা হয়। তাহলে দ্রুতই চিকিৎসা কে শরণাপন্ন হতে হবে এবং সেই অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে।
সর্বোপরি ছোট থেকে বড় প্রায় সবারই কোনো না কোনো কারণে প্রায়ই পেটে ব্যথা হয়ে থাকে। যদি কিছু জীবনে কিছু নিয়মকানুন মেনে চলা হয় বা কিছু ঘরোয়া করার উপায় অবলম্বন করা হয়। তাহলে সহজেই পেটে ব্যথা দূর করা সম্ভব ।