অবিবাহিত মেয়েদের জরায়ুতে টিউমার কেন হয়
বর্তমানে বাংলাদেশের অধিকাংশ নারীদের জরায়ুতে টিউমারের সমস্যা দেখা দেয়। অনেক সময় এই টিউমার অবিবাহিত মেয়েদের জরায়ুতে দেখা দেয়। তাই আমাদের আজকের এই পোস্টের আলোচ্য বিষয় হলো জরায়ু টিউমার কেন হয়, অবিবাহিত মেয়েদের জরায়ুতে টিউমার কেন হয়,জরায়ু টিউমারের লক্ষণ,জরায়ুতে টিউমার হলে করণীয়,জরায়ু টিউমার প্রতিরোধের উপায়,জরায়ুতে টিউমার হলে কি বাচ্চা হয়,জরায়ুর টিউমার থেকে ক্যান্সার,জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ,জরায়ু ক্যান্সার হলে কতদিন বাঁচে জরায়ু না থাকলে কি বাচ্চা হয় এবং জরায়ুর টিউমার অপারেশন খরচ কত।
আমরা এই পোস্টে আলোচনা করব অবিবাহিত মেয়েদের জরায়ুতে টিউমার কেন হয়
জরায়ু টিউমার কেন হয়
এখনো সুস্পষ্টভাবে জানা যায়নি জরায়ু ক্যান্সার কেন হয়। তবে বংশগত,জিনগত এবং গ্রোথ ফ্যাক্টর জনিত কারণে জরায়ুতে ক্যান্সার হতে পারে। বিবাহিত বা অবিবাহিত মেয়েদের জরায়ুতে টিউমার হওয়ার জন্য আলাদা কোন কারণ নেই।
- জরায়ুর মাংসপেশী ও ফাইব্রাস টিস্যু অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে এই টিউমারের সৃষ্টি হয়।
- জরায়ুর ভিতরে দেয়ালে রক্তনালী সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় কারণে ভ্রূণ ঠিকমতো বেড়ে উঠতে পারে না।
- জরায়ু পেশির উপর অনবরত চাপ পড়া ।
- শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে জরায়ুতে টিউমারের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- সঠিক সময়ে বাচ্চা না নিলে বা বাচ্চা কম নিলে জরায়ুতে টিউমার দেখা দিতে পারে।
অবিবাহিত মেয়েদের জরায়ুতে টিউমার কেন হয়
অবিবাহিত মেয়েদের এর জরায়ুতে টিউমার দেখা দেয় এর অন্যতম কারণ হলো বংশগত বা জিনগত। এছাড়াও সঠিক সময়ে বিয়ে বা বাচ্চা না হওয়ার কারণে অবিবাহিত মেয়েদের জরায়ুতে টিউমার দেখা দিতে পারে।
জরায়ু টিউমারের লক্ষণ
জরায়ুতে টিউমার দেখা দিলে কিছু লক্ষণ শরীরে প্রকাশ পায়। যে লক্ষণগুলো দেখলে অবশ্যই চিকিৎসা করা শরণাপন্ন হওয়া উচিত। নিচে লক্ষণগুলো দেওয়া হলোঃ
- অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা দেখা দেওয়া।
- মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত হওয়া।
- মাসিকের সময়কাল বেশি হওয়া।
- মাসিকের সময় অতিরিক্ত ব্যথা হওয়া।
- গর্ভধারণে সমস্যা হওয়া বা না হওয়া।
- গর্ভধারণ করলেও গর্ভপাতের আশঙ্কা দেখা দেওয়া।
- প্রসাবে জ্বালাপোড়া করা।
- ঘন ঘন ও প্রস্রাবের বেগ আসা বা প্রস্রাব হওয়া।
- তলপেট বা কোমরে অতিরিক্ত ব্যথা হওয়া।
- সহবাসের সময় অতিরিক্ত ব্যথা হওয়া।
জরায়ুতে টিউমার হলে করণীয়
জরায়ুতে টিউমার দেখা দিলে সাথে সাথে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে এবং সেই অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে। তবে জরায়ুতে টিউমার দেখা দিলে একমাত্র উপায় হল সার্জারি করা। বর্তমানে আধুনিক পদ্ধতিতে জরায়ুতে টিউমার অপারেশন করা হয় যার নাম হল লেজার সার্জারি। এই পদ্ধতিতে অপারেশন করলে পেটে কোনরকম কাটার প্রয়োজন হয় না।এই পদ্ধতিতে অপারেশন করলে জরায়ু পুরোপুরি কেটে ফেলে দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। জরায়ু থেকে টিউমারটা সহজেই বের করে আনা যায় এবং পরবর্তীতে নারীরা গর্ভধারণ করতে সক্ষম হয়।
জরায়ু টিউমার প্রতিরোধের উপায়
- জরায়ুতে টিউমার প্রতিরোধের একমাত্র উপায় হল সঠিক সময়ে টিকা দেওয়া।
- জরায়ুতে টিউমার আর অন্যতম কারণ হলো ইস্ট্রোজেন হরমোনের বৃদ্ধি। তাই ইস্ট্রোজেন হরমোন বৃদ্ধি পায় এমন খাবার বা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
- প্রতিদিন খাবার তালিকায় পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ শাকসবজি বা ফলমূল রাখতে হবে।
- প্রতিদিন ব্যায়াম বা শারীরিক চর্চা করতে হবে।
- প্রতি তিন মাস অন্তর জরায়ু পরীক্ষা করতে হবে।
- দীর্ঘদিন যাবত কন্ট্রাসেপটিভ পিল খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
জরায়ুতে টিউমার হলে কি বাচ্চা হয়
জরায়ুতে টিউমার ফলে কি বাচ্চা হয় এটি প্রায় সবার মনে একটি কমন প্রশ্ন। তবে অনেক সময় জরায়ুতে টিউমার দেখা দিলেও বাচ্চা কনসেপ্ট করতে পারে। যদি জরায়ুর টিউমার আকারের ছোট হয় এবং জরায়ুতে বাচ্চা হতে কোন বাধার সৃষ্টি না করে। তবে জরায়ুতে টিউমার দেখা দিলে প্রথমে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের শরনাপন্ন হওয়া উচিত।
জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ
অনেক সময় জরায়ুতে টিউমার দেখা দিলে সেটা পরবর্তীতে ক্যান্সারে রূপ নেয়। আর এই ক্যান্সারের রূপ নেওয়ার কারণে শরীরে কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। নিচে লক্ষণ গুলো দেওয়া হলঃ
- অনিয়মিত মাসিক হওয়া।
- মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত হওয়া।
- সহবাসের সময় অতিরিক্ত ব্যথা হওয়া।
- মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত হওয়া।
- অতিরিক্ত সাদা স্রাব যাওয়া।
- যোনিপথে দুর্গন্ধ হওয়া।
- মেনোপজের পরেও রক্তপাত হওয়া।
- প্রসাবের সময় তীব্র জ্বালাপোড়া করা বা ব্যথা হওয়া।
- তলপেটে বা কোমরে অতিরিক্ত ব্যথা হওয়া।
জরায়ু ক্যান্সার হলে কতদিন বাঁচে
জরায়ুতে ক্যান্সার ধরা পড়লে মানুষ কতদিন বাঁচে এ সম্পর্কে অনেকের মনে বিভিন্ন ধরনের ধারণা রয়েছে। তবে জরায়ুতে ক্যান্সার যদি প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে। তাহলে জরায়ু অপারেশন বা চিকিৎসার মাধ্যমে সারিয়া তোলা সম্ভব। আর যদি জরায়ুতে ক্যান্সার লাস্ট পর্যায়ে ধরা পড়ে। তাহলেও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করলে পাঁচ থেকে দশ বছর বা তার বেশি বেঁচে থাকতে পারে।তাই শরীরে জরায়ুতে টিউমার বা জরায়ুর ক্যান্সারের লক্ষণ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে এই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। এছাড়াও অন্তত প্রতি তিন মাস অন্তর জরায়ু ভালো আছে কিনা তার জন্য ভায়া টেস্ট বা প্যাপস স্মিয়ার(Pap's Smear) করা উত্তম।
জরায়ু না থাকলে কি বাচ্চা হয়
নারীদের শরীরে জরায়ু না থাকলে বাচ্চা হয় না বা বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা নাই। কারণ জরায়ু বাচ্চা ধারণ করে। তাই যারা ও না থাকলে বাচ্চা হওয়ার কোন সম্ভাবনা নাই।
জরায়ুর টিউমার অপারেশন খরচ কত
আমাদের সাধারণ মানুষের মনে একটা প্রশ্ন থাকে যে কোন হাসপাতালে জরায়ুর অপারেশন বা জরায়ুর টিউমার অপারেশন করলে ভালো হবে এবং জরায়ুর টিউমার অপারেশন করতে কত টাকা খরচ হতে পারে। যে কোন প্রাইভেট হাসপাতালে জরায়ুর টিউমারসহ জরায়ু কেটে ফেলতে চান তাহলে ৫০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা খরচ হতে পারে এবং জরায়ু অক্ষত রেখে শুধু টিউমার কেটে ফেলতে চাইলে লেজার পদ্ধতিতে অপারেশন করতে হয় এবং এই পদ্ধতিতে অপারেশন করতে ১ লাখ থেকে ১.৫ লাখ টাকার মতো খরচ হতে পারে।
সর্বোপরি জরায়ুতে টিউমার বর্তমানে বাংলাদেশের একটি মরণব্যাধি রোগ। প্রায় অধিকাংশ নারী জরায়ুতে টিউমারের সমস্যায় ভুগছেন। তাই জরায়ুতে টিউমার না হওয়ার প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।