গর্ভাবস্থায় জরায়ু মুখ খোলার লক্ষণ

গর্ভাবস্থায় জরায়ু মুখ খোলার লক্ষণ


বর্তমানে অধিকাংশ নারীরা গর্ভকালীন সময়ে চিন্তা করেন নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে পৃথিবীতে আসুক।এই নরমাল ডেলিভারি হওয়ার জন্য জরায়ের মুখ খোলাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ গর্ভাবস্থায় জরায়ুর মুখ না খুললে নরমাল ডেলিভারি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। তাই আমাদের আজকের এই পোস্টের আলোচ্য বিষয় হলো গর্ভাবস্থায় জরায়ু মুখ খোলার লক্ষণ, জরায়ু মুখ খোলার ঘরোয়া উপায়, জরায়ুর মুখ খুলতে কত সময় লাগে, গর্ভাবস্থায় জরায়ু ব্যথা, গর্ভাবস্থায় তলপেটে ব্যথা হয় কেন, জরায়ুর মুখ ছোট হলে করনীয় এবং জরায়ুর মুখ খোলার দোয়া।


গর্ভাবস্থায় জরায়ু মুখ খোলার লক্ষণ


আমরা আজ এই পোস্টে আলোচনা করব গর্ভাবস্থায় জরায়ু মুখ খোলার লক্ষণ


গর্ভাবস্থায় জরায়ু মুখ খোলার লক্ষণ


গর্ভাবস্থায় নরমাল ডেলিভারির সময় কিছু লক্ষণ দেখলে বোঝা যায় যে জরায়ুর মুখ খুলেছে কি না। নিচে লক্ষণগুলো দেওয়া হলঃ 

১.ঘন ঘন জরায়ুর মুখ সংকুচিত বা প্রসারিত হওয়া।

২.জরায়ুর মুখ স্বাভাবিকের তুলনায় বড় হয়ে যাওয়া।

৩.অতিরিক্ত সাদা স্রাব যাওয়া।

৪.অতিরিক্ত রক্ত মিশ্রিত স্রাব যাওয়া।

৫.গর্বে বাচ্চা উপরে থাকলে তা তলপেটে বা নিচের দিকে নেমে যাওয়া।

৬.তলপেটে বা কোমরে ব্যথা হওয়া।

৭.পানি ভেঙ্গে যাওয়া।


জরায়ু মুখ খোলার ঘরোয়া উপায়


গর্ভাবস্থায় নরমাল ডেলিভারির সময় জরায়ুর মুখ খোলা টা খুবই জরুরী।

 ১.গর্ভাবস্থায় শুরু থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এবং সঠিক নিয়ম কানুন মিলে চললে নরমাল ডেলিভারি সম্ভাবনা থাকে।

 ২.গর্ভাবস্থায় শেষের দিকে খাবার তালিকায় বেশি করে আদা রাখা যেতে পারে।কারণ আদা নরমাল ডেলিভারির সময় জরায়ুর মুখ খুলতে সাহায্য করে।

৩.গর্ভাবস্থায় শেষের দিকে খাবার তালিকায় রসুন রাখা যেতে পারে। রসুন ও জরায়ুর মুখ খুলতে সাহায্য করে। 

৪.গর্ভাবস্থায় শেষের দিকে হালকা ব্যায়াম বা শারীরিক চর্চা করা যেতে পারে। এতে করে নরমাল ডেলিভারি সময় যারা মুখ সহজেই খুলে যেতে পারে।

৫.গর্ভকালীন সময়ে পুষ্টিগুণ সম্পন্ন শাকসবজি বা ফলমূল খেতে হবে। এতে করে নরমাল ডেলিভারির সময় জরায়ুর মুখ সহজেই খুলে যেতে পারে।

৬.গর্ভাবস্থায় ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। কারণ অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পেলে নরমাল ডেলিভারি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।

৭.গর্ভাবস্থায় মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা থেকে দূরে থাকতে হবে।

৮.মনে নরমাল ডেলিভারি হওয়ার আসা জোগাতে হবে।

৯.গর্ভাবস্থায় শুরু থেকে আয়রন বা ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার খেতে হবে।


জরায়ু মুখ না খোলার কারণ


বিভিন্ন কারণে নরমাল ডেলিভারির সময় জরায়ুর মুখ খোলে না।

১.গর্ভে শিশুর ওজন অতিরিক্ত বৃদ্ধি পেলে অনেক সময় জরায়ুর মুখ খোলে না। 

২.জরায়ুর মুখ বা সার্ভিস এর মুখ দুর্বল হলে এটি বারবার সংকুচিত বা প্রসারিত হতে পারে না। যার ফলে জলের মুখ খোলে না। 

৩.গর্ভে শিশুর সঠিক অবস্থানে না থাকলে বা ব্রিজ পজিশনে থাকলে জরায়ুর মুখ খোলার সম্ভাবনা কম থাকে।

৪.গর্ভাবস্থায় জরায়ুর মুখ ছোট থাকলে নরমাল ডেলিভারি সময় জরায়ুর মুখ খোলা সম্ভাবনা কম থাকে।


জরায়ুর মুখ খুলতে কত সময় লাগে


গর্ভাবস্থায় শেষের দিকে ডেলিভারির সময় হলে শরীরের কন্ডিশন সব ঠিক থাকলে বা গর্ভের সন্তান নরমাল ডেলিভারি হওয়ার পজিশনে থাকলে জরায়ুর মুখ খুলতে ৬ থেকে ১২ ঘন্টা সময় লাগে। তবে অনেকের ক্ষেত্রে এ সময় ১৮ ঘন্টা হতে পারে।


গর্ভাবস্থায় জরায়ু ব্যথা


গর্ভাবস্থায় জরায়ুতে ব্যথা হওয়া খুবই স্বাভাবিক লক্ষণ। কারণ এ সময়ে জরায়ু প্রসারিত হয়। যার কারণে জরায়ুতে হালকা ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এ ছাড়াও এ সময় পেশিগুলো প্রসারিত হওয়ার ফলে পেটে চাপ অনুভূত হয়। যার কারণে জরায়ুতে হালকা ব্যথা অনুভূত হতে পারে।এ সময় অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিলে পেটে চাপ অনুভূত হয়। যার ফলে জরায়ুতে ব্যথা হতে পারে। 


গর্ভাবস্থায় তলপেটে ব্যথা হয় কেন


১.গর্ভাবস্থায় গর্ভে শিশুর বড় হওয়ার সাথে সাথে জরায়ু প্রসারিত হয়। ফলে তলপেটে ব্যথা হতে পারে।

২.গর্ভাবস্থায় গর্ভের শিশু বাড়ার সাথে সাথে জরায়ুর হাড়গুলো প্রসারিত হয় যার কারণে ও পেটে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।

৩.গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিলে তলপেট ব্যাথা হতে পারে।

৪.গর্ভাবস্থায় বাচ্চা অতিরিক্ত নড়াচড়া করলে তলপেটে ব্যথা হতে পারে।

৫.গর্ভাবস্থায় ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিলেও তলপেটে ব্যথা হতে পারে।

৬.এট্রপিক প্রেগনেন্সির সমস্যা দেখা দিলে তলপেটে তীব্র ব্যথা অনুভূত হতে পারে ।

৭.গর্ভাবস্থায় প্রসাবে ইনফেকশনের সমস্যা দেখা দিলে তলপেটে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।


জরায়ুর মুখ ছোট হলে করনীয়


১.জরায়ুর মুখ ছোট হলে ব্যায়াম করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

২.জরায়ুর মুখ ছোট হলে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা থেকে বিরত থাকতে হবে।

৩.ধূমপান পরিহার করতে হবে।

৪.পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।

৫.চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।


জরায়ুর মুখ খোলার দোয়া


নরমাল ডেলিভারি হওয়ার জন্য জরায়ুর মুখ খোলা গুরুত্বপূর্ণ।এ সময় কুরআন হাদিসের আলোকে কিছু আমল ও দোয়া পড়লে নরমাল ডেলিভারি সহজ হয়ে যায়।


নরমাল ডেলিভারি সহজ করার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করে বলেন, আল্লাহ তাআলার ৯৯ টি গুণবাচক নাম রয়েছে যে ব্যক্তি এ গুণবাচক নামগুলি জিকির করবে, ”সে জান্নাতে যাবে”। আর এই গুণবাচক নাম গুলোর মধ্যে একটি নাম আছে যে নামটি পড়লে নরমাল ডেলিভারি সহজ হয়ে যেতে পারে।

নামটি হলঃ

উচ্চারণঃ ”(اَلْمُبْدِئُ)”

বাংলা উচ্চারণঃ ”আল-মুবদিয়ু”

অর্থঃ ”প্রথমবার সৃষ্টিকারী”


নরমাল ডেলিভারি সময় প্রসব সহজে প্রসব হওয়ার জন্য আল্লাহর উপরোক্ত গুণবাচক নামটি ৯০ বার পরে স্ত্রীর পেটে স্বামী তার শাহাদাত আঙ্গুল ঘুরালে প্রসব যন্ত্রণা কমে যায় এবং সহজ হয়ে যায়।


বাচ্চার ওজন কত হলে নরমাল ডেলিভারি হয়


গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরের শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক থাকলে এবং গর্ভের শিশুর ওজন ২.৫ কেজি থেকে ৪ কেজির মধ্যে থাকলে নরমাল ডেলিভারি হওয়া সম্ভব। তবে গর্বের শিশুর বা বাচ্চার ওজন ৪ কেজির উপরে গেলে নরমাল ডেলিভারি হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম থাকে।


কত মাসে বাচ্চা ডেলিভারি হয়


সাধারণত ১০ মাস কে ফুল টাইম প্রেগনেন্সি ধরা হয়। তবে চিকিৎসকরা অনেক সময় ৯ মাস কে ফুল টাইম প্রেগন্যান্সি হিসেবে ধরে থাকেন এবং সেই অনুযায়ী ডেলিভারির টাইম বা সময় দিয়ে থাকেন।তাই ৯ মাস থেকে ১০ মাসের ভিতরে যেকোনো সময় নরমাল ডেলিভারি হতে পারে।


প্রসবের ব্যাথা না হলে কি করনীয়


গর্ভাবস্থায় ফুল টাইম প্রেগন্যান্সি বা ৪০ সপ্তাহ হয়ে যাওয়ার পরও যদি প্রসব ব্যথা না ওঠে তাহলে অবশ্যই সাথে সাথে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। গর্বের শিশু নড়াচড়া ঠিক আছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে এবং আল্টাসোনো করার মাধ্যমে দেখতে হবে গর্বের সন্তান সুস্থ আছে কিনা এবং সেই অনুযায়ী চিকিৎসা বা সিজারের পরামর্শ নিতে হবে।



সর্বোপরি নরমাল ডেলিভারির জন্য জরায়ুর মুখ খোলাটা খুবই জরুরী। কারণ জরায়ুর মুখ সঠিকভাবে না খুললে নরমাল ডেলিভারি সম্ভব নয়। তাই গর্ভাবস্থায়  শুরু থেকে নিয়ম-কানুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলা উচিত।

*

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post