গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয়

গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয়


গর্ভাবস্থায় নারীদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা যায়। তার মধ্যে একটি হলো হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার সমস্যা। কারণ এ সময় শিশু শরীরে মায়ের শরীর থেকে রক্ত প্রবাহিত হয়। আর এ কারণেই নারীদের শরীরে হিমোগ্লোবিননের পরিমাণ কমতে থাকে।তাই আমাদের আজকের এই পোষ্টের আলোচ্য বিষয় হলো গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার কারণ, গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার লক্ষণ, গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কমে গেলে করণীয়, গর্ভাবস্থায় রক্তশূন্যতা হলে কি কি খাওয়া উচিত, রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধির ঔষধ, রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধির ইনজেকশন,হিমোগ্লোবিন স্বাভাবিক কত এবং গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয়।


গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয়


আমরা আজ এই পোস্টে আলোচনা করব গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয়



গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার কারণ


১.গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া।গর্ভাবস্থায় আয়রন, ক্যালসিয়াম বা লৌহ জাতীয় খাবার না খেলে রক্তশূন্যতার সমস্যা দেখা দেয়।  

২.জন্মগত থ্যালাসেমিয়ার সমস্যা থাকলে গর্ভাবস্থায় সেটি বেড়ে যেতে পারে এর কারণে শরীরে হিমোগ্লোবিন কমে যেতে পারে।

৩.গর্ভাবস্থায় ভিটামিন বি১২এর অভাব হলে হিমোগ্লোবিন কমে যেতে পারে।

৪.গর্ভাবস্থায় গর্ভধারণের পর শরীরে জলীয় উপাদান বেড়ে যায় । যার কারণে হিমোগ্লোবিন কমে যেতে পারে। কারণ এ সময় রক্তে লোহিত রক্তকণিকার কম পরিমাণে তৈরি হয়।

৫.গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার, কোল্ড ড্রিঙ্কস বা সফট ড্রিঙ্কস খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যেতে পারে। 

৬.গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত বমি হলে হিমোগ্লোবিন কমে যেতে পারে।

৭.গর্ভাবস্থার আগে হিমোগ্লোবিন কম থাকা বা রক্তশূন্যতার সমস্যা থাকলে গর্ভাবস্থায় সেটি বৃদ্ধি পেতে পারে।


গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার লক্ষণ


গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কমে গেলে বা রক্তশূন্যতা দেখা দিলে কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। লক্ষণগুলো নিচে দেওয়া হলঃ

১.হাত-পা ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া।

২.অতিরিক্ত ক্লান্তি বোধ বা দুর্বল অনুভূত হওয়া।

৩.শ্বাস প্রশ্বাস নিতে সমস্যা হওয়া।

৪.অস্বাভাবিকভাবেহৃদস্পন্দন বেড়ে বা কমে যাওয়া।

৫.স্বাভাবিকের তুলনায় হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া।

৬.মাথা ঘোরা।

৭.মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া।

৮.বুকে ব্যাথা হওয়া বা বুক ধরফর করা।

৯.ঠোঁটে বা জিব্বায় ক্ষত বা ঘা হওয়া ।


গর্ভাবস্থায় উপরোক্ত লক্ষণ গুলি দেখা দিলে বুঝতে হবে শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।


গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কমে গেলে করণীয়


গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার সমস্যা খুবই কমন সমস্যা। তাই এই সমস্যা গর্ভাবস্থায় কিছু নিয়মকানুন মেনে চললেই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।


১.গর্ভাবস্থার শুরুতে আয়রন, ক্যালসিয়াম বা লৌহ জাতীয় খাবার বেশি করে খাওয়া।

২.ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খাওয়া।এতে গর্ভাবস্থায় শরীরে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

৩.ভিটামিন বি১২ জাতীয় খাবার খাওয়া।

৪.চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আয়রন বা ক্যালসিয়াম ওষুধ খেতে হবে।

৫.তিন মাস অন্তর হিমোগ্লোবিন টেস্ট করে দেখতে হবে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা স্বাভাবিক আছে কিনা।

৬.আয়রন সমৃদ্ধ ফল বা শাকসবজি খেতে হবে।

৭.মানসিক চাপ বা টেনশন থেকে দূরে থাকতে হবে।

৮.অতিরিক্ত ভাজাপোড়া বা ড্রিংকস জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।


গর্ভাবস্থায় রক্তশূন্যতা হলে কি কি খাওয়া উচিত


গর্ভাবস্থায় কিছু খাবার খাবার মাধ্যমে হিমোগ্লোবিন বা রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করা সম্ভব।নিচে খাবারগুলোর তালিকা দেওয়া হলঃ




১.মাংসঃ গর্ভাবস্থায় খাবার তালিকায় মাংস রাখলে শরীরে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি কম হতে পারে।




২.কলিজাঃ গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন বাড়াতে কলিজা খুবই কার্যকরী একটি খাবার। প্রতিদিনের খাবার তালিকায় কলিজা রাখলে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি কমাতে সাহায্য করে।




৩.ডিমঃ শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য ডিম খুব কার্যকরী। তাই গর্ভাবস্থায় প্রতিদিনের খাবার তালিকায় ডিম রাখলে রক্তশূন্যতার সমস্যা কম হতে পারে।




৪.দুধঃ দুধ শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়াও দুধে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বা প্রোটিন থাকে যা শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে। তাই গর্ভাবস্থায় দুধ খাওয়া উত্তম।




৫.মটরশুঁটিঃ মটরশুটিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। যা গর্ভাবস্থায় আয়রনের ঘাটতি কমাতে সাহায্য করে। 




৬.কলাঃ কলাতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। যা শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে। তাই গর্ভাবস্থায় খাবার তালিকায় প্রতিদিন চার থেকে পাঁচটা কলা রাখা উত্তম।




৭.বেদানাঃবেদনায় প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। তাই গর্ভাবস্থায় বেদানা খেলে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। 




৮.পেয়ারাঃ পেয়ারা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়া এতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। যা শরীরে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে।




৯.সবুজ শাকসবজিঃ সবুজ শাকসবজি যেমন- কচু শাক, কলমি শাক, কাঁচা কলা, শাপলা, কলার মোচা, ডুমুর ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন বা ভিটামিন সি থাকে। যা শরীরে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে । তাই গর্ভাবস্থায় প্রতিদিনের খাবার তালিকায় যে কোন এক প্রকার শাক বা সবজি রাখা উত্তম।



১০.ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফলমূলঃ ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফলমূলযেমন- কমলা, লেবু, স্ট্রবেরি, টমেটো, আপেল ইত্যাদি খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিন বেড়ে যায়।


রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধির ঔষধ


গর্ভাবস্থায় যেকোনো ধরনের ওষুধ খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করা উচিত। গর্ভাবস্থায় রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর জন্য আয়রন সমৃদ্ধ ওষুধ খাওয়া উচিত । রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধির জন্য বাজারে কিছু ওষুধ পাওয়া যায়। নিচে ওষুধগুলার নাম দেওয়া হলঃ

  • Tab. Ferro Plus
  • Cap. Xenifol Plus
  • Cap. Feofl CI
  • .Tab. Autrin XT
  • Cap. Feofal
  • Tab. Ferrigan
  • Tab Hemfer XT
  • Tab. Ferrosun
  • Tab. Ferrospan
  • Cap. Ferrocite TR


রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধির ইনজেকশন



রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলে প্রাথমিক পর্যায়ে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার বা ওষুধের মাধ্যমে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি পূরণ করা যায় কিনা তা দেখা হয়। যদি অতিরিক্ত হিমোগ্লোবিন এর পরিমাণ কমে যায় তাহলে চিকিৎসক ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাই নিচে রাতে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধির ইনজেকশনের নাম দেওয়া হলঃ

  • Ing. Ferrous Gluconate 100 mg
  • Ing. Revofer 500Mg 
  • Ing. Ferinject 100 mg
  • Ing. Iron D Sulphate 100 mg
  • Ing. Repomax 10000 IU


গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয়



সাধারণত মহিলাদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা ১১.৫ - ১৬.৫ পর্যন্ত। যদি গর্ভাবস্থায়  মহিলাদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ ১১এর  নিচে যেমন- ৫ থেকে ৯ এর মধ্যে হিমোগ্লোবিন থাকে তাহলে রক্ত দেওয়া উত্তম।




সর্বোপরি হিমোগ্লোবিন আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই হিমোগ্লোবিনের মাধ্যমে সমস্ত শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়।এছাড়া গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কমে গেলে গর্ভের সন্তান জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করতে পারে। তাই আমাদের সবসময় হিমোগ্লোবিন টেস্ট করতে হবে এবং ঘাটতি থাকলে তা পূরণ করার জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

*

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post