গর্ভাবস্থায় গ্যাস্ট্রিকের ঔষধের নাম
গর্ভাবস্থায় নারীদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। তার মধ্যে অন্যতম হলো গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা। এ সময় অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেয়। তাই আমাদের আজকের এই পোস্টের আলোচ্য বিষয় হলো গর্ভাবস্থায় গ্যাসের সমস্যা কেন হয়, গর্ভাবস্থায় গ্যাসের লক্ষণ,গর্ভাবস্থায় পেটে গ্যাস হলে করণীয়,গর্ভাবস্থায় খালি পেটে থাকলে কি হয়,গর্ভাবস্থায় গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ খাওয়া যাবে কি, গর্ভাবস্থায় পেট শক্ত হয় কেন এবং গর্ভাবস্থায় গ্যাস্ট্রিকের ঔষধের নাম।
আমরা আজ এই পোস্টে আলোচনা করব গর্ভাবস্থায় গ্যাস্ট্রিকের ঔষধের নাম
গর্ভাবস্থায় গ্যাসের সমস্যা কেন হয়
১.গর্ভাবস্থায় শরীরে কিছু পরিবর্তন দেখা যায়। এ সময় প্রোজেস্টেরন নামে একটি হরমোন বেড়ে যায়। যার ফলে পাকস্থলীতে খাবার হজমে সমস্যা হয়। ফলে গ্যাসের সমস্যার সৃষ্টি হয়।
২.গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার খাওয়ার মাধ্যমে গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয়।
৩.গর্ভাবস্থায় খাওয়ার পরে সাথে সাথে শুয়ে পড়লে খাবার হজমে সমস্যা হয় যার ফলে গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয়।
৪.গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত সফট ড্রিংকস বা কোলড্রিংস জাতীয় খাবার খেলে গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৫.গর্ভাবস্থায় খাবার সম্পূর্ণ চিবিয়ে না খেলে পরিপাক বা হজম হতে সময় নেয় যার ফলে গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৬.গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিলে গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৭.গ্যাস যুক্ত খাবার খাওয়ার মাধ্যমেও গর্ভাবস্থায় গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
গর্ভাবস্থায় গ্যাসের লক্ষণ
গর্ভাবস্থায় গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিলে কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। নিচে লক্ষণগুলো দেওয়া হলোঃ
১.পেট ফাঁপা হয়ে থাকা।
২.বুকে জ্বালাপোড়া করা।
৩.অতিরিক্ত ঢেকুর তোলা।
৪.পেটে ব্যথা হওয়া।
৫.অনেক সময় অতিরিক্ত গ্যাসের সমস্যা দেখা দিলে পেট শক্ত হয়ে যাওয়া।
৬.বমি হওয়া বা বমি বমি ভাব হওয়া।
৭.কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দেখা দেওয়া।
গর্ভাবস্থায় পেটে গ্যাস হলে করণীয়
গর্ভাবস্থায় গ্যাসের সমস্যা দেখা দিলে কিছু ঘরোয়া উপায়ে গ্যাসের সমস্যা দূর করা যেতে পারে।
১.গর্ভাবস্থায় প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা।
২.গর্ভাবস্থায় যেন কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা না দেয় তার জন্য আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া।
৩.খাবার খাওয়ার সময় যত সম্ভব চিবিয়ে খাওয়া।
৪.গ্যাসের সৃষ্টি হয় এমন খাবার যেমন- ফুলকপি, বাঁধাকপি, বিভিন্ন ধরনের ডাল, বিভিন্ন ধরনের সিম, আপেল, নাশপাতি, আম, শস্যজাতীয় খাবার, অতিরিক্ত চা বা কফি, অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার ইত্যাদি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৫.অতিরিক্ত ভাজাপোড়া খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৬.অতিরিক্ত সফট ড্রিঙ্কস বা কোল্ড ড্রিংকস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৭.প্রতিবার খাবার খাওয়ার পর ১৫ থেকে ২০ মিনিট হাঁটতে হবে।
৮.একবারে বেশি পরিমাণ খাবার না খেয়ে অল্প অল্প করে অনেকবার খাবার খেতে হবে।
৯.গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত গ্যাসের সমস্যা দেখা দিলে আদা, পুদিনা পাতা বা লেবু পানি খাওয়া যেতে পারে এবং এর সাথে সাথে দই খাওয়া যেতে পারে। এতে খাবার হজম হতে সাহায্য করে।
১০.এছাড়া অতিরিক্ত গ্যাসের সমস্যা দেখা দিলে দ্রুতই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
গর্ভাবস্থায় খালি পেটে থাকলে কি হয়
গর্ভাবস্থায় খালি পেটে থাকলে গর্বের বাচ্চার বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
১.গর্ভাবস্থায় খালি পেটে থাকলে গর্ভের শিশুর বুদ্ধি ও মানসিক বিকাশ কম হতে পারে।
২.গর্ভাবস্থায় খালি পেটে থাকলে গর্ভের শিশু কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করতে পারে।
৩.গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে বেশিক্ষণ খালি পেটে থাকলে অনেক সময় মিসকারেজের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৪.গর্ভাবস্থায় খালি পেটে থাকার আরেকটি অন্যতম কারণ হলো জন্মগত ত্রুটি সম্পন্ন শিশু জন্মগ্রহণ করা।
গর্ভাবস্থায় গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ খাওয়া যাবে কি
হ্যাঁ গর্ভাবস্থায় গ্যাসের ওষুধ বা গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খাওয়া যাবে। তবে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং সেই অনুযায়ী গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেতে হবে। গর্ভাবস্থায় রেনিটিডিন গ্রুপের ওষুধ নিরাপদ বলে মনে করা হয়। এই সময় এই গ্রুপের ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।
গর্ভাবস্থায় পেট শক্ত হয় কেন
গর্ভাবস্থায় প্রথমদিকে জরায়ু প্রসারণের কারণে পেটে শক্ত বা টানটান অনুভূত হতে পারে। এছাড়াও অতিরিক্ত কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিলে গর্ভাবস্থায় পেট শক্ত হতে পারে।গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত গ্যাসের সমস্যা দেখা দিলে অনেক সময় পেট শক্ত হতে পারে। গর্ভাবস্থায় শেষের দিকে পেটে পানি কমে গেলে পেটের বাচ্চা নড়াচড়া কমে যায়। যার ফলে পেট শক্ত হয়ে যেতে পারে।
গর্ভাবস্থায় গ্যাস্ট্রিকের ঔষধের নাম
গর্ভাবস্থায় রেনিটিডিন গ্রুপের ঔষধ নিরাপদ বলে মনে করা হয় । এছাড়াও ওমিপ্রাজল, ইসমিপ্রাজল, রাবিপ্রাজল গ্রুপের ঔষধ গর্ভাবস্থায় খাওয়া যেতে পারে।তবে গর্ভাবস্থায় গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
সর্বোপরি গর্ভাবস্থায় নারীদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা একটি কমন সমস্যা। নারীরা গর্ভধারণ করলে এই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেয়। তাই সব সময় গর্ভাবস্থায় সবসময় চিকিৎসাকে শরণাপন্ন হওয়া উচিত এবং সে অনুযায়ী ওষুধ সেবন করা উচিত।