দৈনন্দিন জীবনে রাসূলের সুন্নত কাজগুলো কি কি
মুসলমানরা রাসূলের সুন্নাত অনুযায়ী প্রতিটি কাজ করলে সওয়াব পাওয়া যায়। প্রতিটি কর্মের বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা উত্তম প্রতিদান দান করবেন। সওয়াব পাওয়ার জন্য সব কাজ আল্লাহর হুকুম ও রাসুল (সা.)-এর সুন্নত অনুযায়ী হওয়া জরুরি। রাসুল (সা.) এর ৬৩ বছরের বর্ণাঢ্য জীবনে উম্মতকে তিনি সর্বোৎকৃষ্ট ও উজ্জ্বলতর পথ নির্দেশনা দিয়েছেন। তার সেই নিদের্শনা কিংবা অভ্যাস আমাদের কাছে সুন্নত নামে সুপরিচিত।তাই আমাদের আজকের এই পোস্টের আলোচ্য বিষয় দৈনন্দিন জীবনে রাসূলের সুন্নত কাজগুলো কি কি।
আমরা আজ এই পোস্টে আলোচনা করব দৈনন্দিন জীবনে রাসূলের সুন্নত কাজগুলো কি কি
সুন্নত কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি
নবীর সুন্নত সমূহ
আল্লাহ তাআলা তার রাসুল (সা.)-কে অনুসরণ করতে বলেছেন। সুন্নতের অনুসরণ মানে রাসুলের অনুকরণ। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘যে রাসুলের আনুগত্য করল, সে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহরই আনুগত্য করল।’ (সুরা আন-নিসা, আয়াত : ৮০)
এখানে নবী করিম (সা.)-এর চমৎকার কিছু সুন্নত নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। যেগুলো পালন করা খুব সহজ । নিম্নে তা আলোচনা করা হলঃ
০১। ভালো কিছু খাওয়া বা পান করার সময়, কোনো কিছু লেখা বা পড়ার সময়, কোনো কাজ শুরু করার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলে শুরু করা সুন্নাত। -সহিহ বুখারি : ৫৩৭৬
০২। ভবিষ্যতে কোনো কিছু করার ইচ্ছা করলে ‘ইনশাআল্লাহ’ বলা সুন্নাত। -সূরা আল কাহাফ : ২৩-২৪
০৩। স্বাভাবিকের মধ্যে কোনো ব্যতিক্রম দেখলে কিংবা আশ্চর্য ধরনের কোনো কথা শুনলে ‘সুবহানাল্লাহ’ বলা সুন্নাত। -সহিহ বুখারি : ৬২১৮
০৪। কষ্ট, দুঃখ ও যন্ত্রণায়- ‘ইয়া- আল্ল-হ’ পাঠ করে আল্লাহ তাআ'লাকে স্মরণ করা।
০৫। ভালো যে কোনো কিছু বেশি বা ব্যতিক্রম দেখলে ‘মাশাআল্লাহ’ বলা সুন্নাত। -সহিহ মুসলিম : ৩৫০৮
০৬। ধন্যবাদ জ্ঞাপনে- ‘জাঝাকাল্ল-হু খাইরান’ বলা।
০৭। ঘুমানোর সময়- ‘বিসমিল্লা-হি আল্ল-হুম্মা বিসমিকা আমূতু ওয়া আ‘হইয়া’ পড়া এবং ডান কাত হয়ে শয়ন করা।
০৮। ঘুমানোর পূর্বে- ‘সুরাহ মূল্ক্’ পড়া।
০৯। ঘুম থেকে জাগ্রত হবার পর- ‘আল হামদু লিল্লা-হিল্লাযী আ‘হইয়া-না- বা‘দা মা- আমা-তানা- ওয়া ইলাইহিন্নুশূর’ পাঠ করা।
১০। খানার পূর্বে- ‘উভয় হাত উত্তম রূপে ধুয়ে নেয়া এবং কুলি করা’।
১১. মাঝে-মধ্যে বৃষ্টিতে ভেজা। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৮৯৮)
১২. বৃষ্টির সময় দোয়া করা। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১০৩২)
১৩. বাসা থেকে বের হওয়ার সময় এবং বাসায় ফিরে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা। (মুসনাদে বাজ্জার, হাদিস : ৮৫৬৭)
১৪. দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে জুতো না পরা। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪১৩৫)
১৫. যতই ভালো খাবার হোক, ভরা পেটে না খাওয়া। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৪৭৮)
১৬. ফজরের নামাজের পর নামাজের স্থানে বসে তাসবিজ পাঠ করা। অতঃপর সূর্য উঠার পর দুই রাকাত নামাজ আদায় করা। (আরশিফু মুলতাকা, হাদিস : ৪৫৬৯)
১৭. দ্বীনের দাওয়াত সহজ করার উদ্দেশে নতুন একটি ভাষা শেখা। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২১৬১৮)
১৮. বাড়িতে অজু করে রুমাল দিয়ে হাত-পা মুছে মসজিদে জামাতে যাওয়া। (তাবারানি, হাদিস : ৬১৩৯)
১৯. মানুষের মাঝে বিবাদ মিটিয়ে দেওয়া। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৭৫০৮)
২০. রাতে অজু অবস্থায় ঘুমানো। (ফাতহুল বারি : ১১/১১০)
২১. মাঝে-মধ্যে খালি পায়ে হাঁটা। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪১৬০)
২২. মৃত্যুর আগেই সম্পদ সন্তান-সন্ততির ব্যাপারে অসিয়ত লিখে যাওয়া। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৭৩৮)
২৩. রাতে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে নির্জনে হাঁটা। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫২১১)
২৪. স্ত্রীর রান্না করা হালাল খাবারের দোষ না ধরা। খেতে মন না চাইলে চুপ থাকা। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২০৬৪)
২৫. কোনো কিছু জানা না থাকলে স্বীকার করা যে, আমি জানি না। (বায়হাকি, হাদিস : ১৭৫৯৫)
২৬. মাঝে-মধ্যে বিপদে আকাশের দিকে মাথা তোলা। আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজের কষ্টগুলো আল্লাহকে বলা। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৫৩১)
২৭. খুব খুশি হলে সিজদায় লুটিয়ে পড়া। (মুখতাসার যাদুল মাআদ : ১/২৭)
২৮. ধোঁয়া ওঠা গরম খাবার ঠাণ্ডা না হওয়া পর্যন্ত না খাওয়া। (বায়হাকি, হাদিস : ৪২৮)
২৯. করজে হাসানা (সুদবিহীন ঋণ) দেওয়া। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৫৮০)
৩০. নফল ও সুন্নত নামাজগুলো ঘরে পড়া। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৩১)
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পুরো জীবন আমাদের জন্য অনুসরণীয়। ইহকালের কল্যাণ ও পরকালের মুক্তির উপায় রাসুল (সা.)-এর প্রতিটি সুন্নত। আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রিয় নবীর একনিষ্ঠ অনুসারী হিসেবে কবুল করুন।