বুকে কফ জমলে কি কি সমস্যা হয়
অনেকের ঠান্ডা সমস্যা থেকে বুকে কফ জমে থাকে বুকে কফ জমে গেলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয় তাই আমাদের আজকের এই পোস্টের আলোচ্য বিষয় হলো ঘন ঘন কফ আসার কারণ কি, বুকে কফ জমলে কি কি সমস্যা হয়, গলায় কফ আটকে থাকার কারণ, বুকে কফ জমে থাকার লক্ষণ, বুকের কফ দূর করার ঘরোয়া উপায়, গলার কফ দূর করার উপায়, বাচ্চাদের বুকের কফ দূর করার ঘরোয়া উপায়, শিশুর বুকের কফ বের করার ঔষধ এবং বুকের কফ বের করার ঔষধ নাম।
আমরা আজ এই পোস্টে আলোচনা করব বুকে কফ জমলে কি কি সমস্যা হয়
ঘন ঘন কফ আসার কারণ কি
অনেক সময় শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার জন্য বুকে কফ জমে থাকে।প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণত ঠান্ডা বা গরমের সর্দি বা কাশি থেকে বুকে কফ জমে যেতে পারে। তবে অনেক সময় শরীরের কিছু মারাত্মক রোগের কারণেও বুকে কফ জমে যেতে পারে। যার কারণে ঘন ঘন কফ আসে।
১.ফুসফুসে সমস্যার জনিত কারণে বুকে কফ জমে যেতে পারে। যার কারণে ঘন ঘন আসতে পারে।
২.অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম লাগার কারণে সর্দি বা কাশি হতে পারে যার। কারণে বুকে কফ জমে যেতে পারে।
৩.নিউমোনিয়ার কারণে বুকে কফ জমে যেতে পারে ।যার জন্য ঘন ঘন কফ আসতে পারে।
৪.বিভিন্ন ধরনের ভাইরাল ফ্লু এর কারণে বুকে কফ জমে যেতে পারে। যার কারণে ঘন ঘন কফ আসতে পারে।
৫.যক্ষা হলে অতিরিক্ত কাশির সমস্যা দেখা দেয়। যার কারণে বুকে কফ জমে যেতে পারে।
৬.এছাড়াও বিভিন্ন সংক্রামক রোগের কারণে বুকে কফ জমে যেতে পারে। যার ফলে ঘন ঘন আসতে পারে।
৭.যাদের অ্যালার্জি সমস্যা আছে তাদের অতিরিক্ত ধুলাবালি কারণে এলার্জি সমস্যা দেখা দিতে পারে। যার ফলে বুকে কফ জমে যেতে পারে। এর জন্য ঘন ঘন কফ আসতে পারে।
৮.অতিরিক্ত শুকনো কাশির কারণে বুকে কফ জমে যেতে পারে।
বুকে কফ জমলে কি কি সমস্যা হয়
বুকে কফ জমে গেলে শরীরের অস্বস্তি কাজ করে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়।যে সমস্যা গুলো দৈনন্দিন জীবনযাপনকে ভোগান্তিতে ফেলে দেয়।
১.বুকে কফ জমে থাকলে শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দেয়।
২.বুকে কফ জমে থাকার কারণে ব্যথা অনুভূত হয়।
৩.বুকের ভিতর ভার ভার লাগা বা ভারী হয়ে যাওয়া।
৪.বুকে কফ জমে যাওয়ার কারণে গলা ব্যথা হয়ে যেতে পারে।
৫.বুকে কফ জমে যাওয়ার কারণে অতিরিক্ত কাশির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৬.বুকে কফ জমে যাওয়ার কারণে ফুসফুসে ইনফেকশন দেখা দিতে পারে।
গলায় কফ আটকে থাকার কারণ
বুকে কফ জমে যাওয়ার কারণে অনেক সময় সেই কফটা গলায় আটকে যায়। নিচে কফ গলায় আটকে যাওয়ার কারণ দেওয়া হলোঃ
১.অতিরিক্ত কাশির হওয়ার কারণে অনেক সময় গলায় কফ আটকে যেতে পারে।
২.অতিরিক্ত সর্দি বা কাশি হওয়ার কারণে বুকে কফ জমে যায় সাথে সাথে গলায় ও কফ আটকে থাকে।
৩.বুকে জমে থাকা কফ আঠালো হওয়ার কারণে গলায় আটকে থাকে।
৪.বুকে কফ জমে যাওয়ার কারণে শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হয়। অনেক সময় দীর্ঘশ্বাস নেওয়ার ফলে বুকের কফ গলায় আটকে যায়।
বুকে কফ জমে থাকার লক্ষণ
বিভিন্ন সমস্যার কারণে বুকে কফ জমে যায়। আর সেই সমস্যার গুলোর জন্য শরীরে কিছু উপসর্গ বা লক্ষণ দেখা দেয়। নিচে লক্ষণ গুলো দেওয়া হলঃ
১.অতিরিক্ত কাশি বা শুষ্ক কাশি হওয়া।
২.শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দেওয়া।
৩.বুকে ব্যাথা হওয়া।
৪.বুকে ভার ভার লাগা।
৫.অতিরিক্ত সর্দি হওয়া।
৬.জ্বর হওয়া।
৭.বুক শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার সময় বুক ধরফর করা।
৮.অতিরিক্ত ক্লান্তি বোধ হওয়া।
৯.বুকের ভিতরে গড়গড় আওয়াজ হওয়া।
১০.মাথা ভার হয়ে থাকা বা ভারি ভারি লাগা।
১১.নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া।
উপরোক্ত লক্ষণ গুলো দেখা দিলে বুঝতে হবে বুকে কফ জমে গেছে। তাই দ্রুত চিকিৎসাকে শরণাপন্ন হতে হবে বা ঘরোয়া উপায়ে বুকের কফ যেন উঠে যায় সেই পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে।
বুকের কফ দূর করার ঘরোয়া উপায়
বুকে কফ জমে থাকলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এছাড়া বুকে কফ জমে থাকার ফলে শ্বাসকষ্টের সমস্যা ও দেখা দেয়। তাই বুকের কফ দূর করার কিছু করার উপায় নিচে দেওয়া হল। যে উপায়গুলো অবলম্বন করলে সহজেই বুকে কফ দূর করা যেতে পারে।
১.বুকের কফ দূর করার জন্য লবণ পানি উষ্ণ গরম পানিতে লবণ দিয়ে গড়গড়া করা যেতে পারে। এতে করে বুকের কফ এবং গলার কফ দূর হতে পারে।
২.গরম পানির ভাব নেওয়া যেতে পারে এতে বুকের কফ আস্তে আস্তে উঠে যেতে পারে।
৩.বুকের কফ দূর করতে আদা খুব কার্যকরী একটি খাবার। আদা পানিতে দিয়ে ফুটিয়ে সেই পানি পান করলে বুকের কফ দূর হয়ে যেতে পারে।
৪.উষ্ণ কুসুম গরম পানি পান করতে হবে। এতে করে সহজেই বুকের কফ উঠে উঠে যায়।
৫.বুকের কফ দূর করার জন্য একটা লেবুর সাথে মধু মিশে পান করা যেতে পারে ।এতে করে বুকের কফ দূর হবে এবং বুকে থাকা ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হবে।
৬.বুকের কফ দূর করার জন্য অ্যাপেল সিডার ভিনেগার খুবই কার্যকরী। প্রতিদিন এক চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার খেলে দ্রুতই বুকের কফ কমে যেতে পারে।
৭.বুকে কফ জমে গেলে কফ দূর করার জন্য পিঁয়াজের রস, লেবুর রস ও মধু একসাথে পানিতে দিয়ে ফুটিয়ে সেটা হালকা কুসুম গরম থাকা অবস্থায় পান করা যেতে পারে। এতে দ্রুতই বুকের কফ দূর হতে পারে।
৮.বুকের কফ দূর করার জন্য হলুদ খুব কার্যকরী। পানিতে হলুদ দিয়ে ফুটিয়ে সেই পানি হালকা কুসুম গরম থাকা অবস্থায় পান করতে হবে। এতে সহজেই বুকের কফ দূর হয়।
৯.অতিরিক্ত ধুলাবালি এড়িয়ে চলতে হবে।
১০.বুকে কফ জমে গেলে কব দূর করার জন্য আদা চা বা তুলসী পাতা চা বা মসলাটা খাওয়া যেতে পারে। এতে করে সহজেই বুকের কফ দূর হতে পারে।
উপরোক্ত ঘরোয়া উপায় গুলো অবলম্বন করলে সহজেই বুকে জমে থাকা কফ দূর করা যেতে পারে।
গলার কফ দূর করার উপায়
১.বুকে কফ জমে যাওয়ার ফলে অনেক সময় সেটি গলায় আটকে যায় এবং এই গলার কফ দূর করার জন্য সর্বপ্রথমে লবণ মিশ্রিত কুসুম গরম পানি দিয়ে গড়গড় সহ কুলি করলে গলায় জমে থাকা কফ নরম হয়ে যায় ফলে সহজেই বের হয়ে যায়।
২.গরম পানির ভাব নেওয়ার ফলেও গলার কফ তরল হয়ে যায়। পরবর্তীতে সেটা কাশির মাধ্যমে বাইরে বেরিয়ে যায়।
৩.আদা চা বা তুলসী পাতার চা খাওয়ার মাধ্যমে গলার কফ দূর হয়ে যেতে পারে।
৪.লেবু এবং মধু ও মিশ্রিত কুসুম গরম পানি খাওয়ার মাধ্যমেও গলার ভিতরে জমে থাকা কফ তরল হয়ে কাশির মাধ্যমে বেরিয়ে যেতে পারে।
বাচ্চাদের বুকের কফ দূর করার ঘরোয়া উপায়
অনেক সময় শিশুদের ঠান্ডা পাওয়া গরম লেগে সর্দি বা কাশির সমস্যা দেখা দেয়। যার ফলে বুকে কফ জমে যেতে পারে বুকে কফ জমে গেলে শিশুদের ক্ষেত্রে কিছু করা উপায় দেয়া হলো। যা অবলম্বন করে সহজেই শিশুদের বুকে কফ দূর করা যায়।
১.উষ্ণ গরম পানিতে এক চামচ মধু এবং এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে। এতে সহজেই শিশুদের বুকে জমে থাকা কফ বাইরে বেরিয়ে যেতে পারে।
২.শিশুদের বুকে কফ জমে যাওয়ার কারণে শ্বাস প্রশ্বাসে বা শ্বাসকষ্টে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তার জন্য শিশুকে শোয়ানোর সময় মাথা উঁচু করে শোয়াতে হবে।
৩.তরল জাতীয় খাবার যেমন- বিভিন্ন ধরনের সুপ খাওয়ানো যেতে পারে। এতে শিশুর বুকে কফ কমে যেতে পারে।
৪.শিশুদের বুকে কফ জমে গেলে শিশুকে উষ্ণ গরম পানিতে গোসল করানো যেতে পারে। এতে বুকে কফ সহজে কমে যেতে পারে।
৫.শিশুদের বুকে কফ জমে যাওয়ার কারণে শিশুরা দুর্বল হয়ে যেতে পারে। তার জন্য শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে হবে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রামের ব্যবস্থা করতে হবে।
৬.শিশুদের বুকে কফ জমে গেলে গরম পানির ভাব দেওয়া যেতে পারে । এতে করে বুকের কফ সহজেই কাজের মাধ্যমে উঠে যেতে পারে।
শিশুর বুকের কফ বের করার ঔষধ
শিশুদের বুকে কফ জমে গেলে সাথে সাথে ঔষধ কফ উঠানোর জন্য ঔষধ না খাওয়ানো উত্তম। প্রাথমিক পর্যায়ে ঘরোয়া কিছু উপায়ে বুকে জমে থাকা দূর করার চেষ্টা করা উচিত। তবে যদি তারপরও শিশুদের বুকে কফ দূর না হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসা শরণাপন্ন হওয়া উচিত এবং সেই অনুযায়ী ঔষধ খাওয়ানো উচিত।শিশুদের বুকে কফ উঠানোর কিছু ঘরোয়া উপায় উপরে আলোচনা করা হয়েছে।
বুকের কফ বের করার ঔষধ নাম
বুকের কফ দূর করার জন্য বাজারে বিভিন্ন ধরনের ঔষধ বা সিরাপ পাওয়া যায়। যা খেলে সহজেই বুকে কফ দূর করা যায়। এছাড়া বুকে কফ জমে গেলে প্রথমে ঘরোয়া কিছু উপায়ে বুকে কফ দূর করার চেষ্টা করা উচিত। তারপরও যদি না কমে তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ বা সিরাপ সেবন করা উচিত।নিচে কিছু ঔষধ এবং সিরাপের নাম দেওয়া হল যেগুলো বুকে জমে থাকা কফ দূর করতে সাহায্য করবে।
১. Tab. Alkof Cofgel(আলকফ কফগেল)
২. Tab. Mucolyt(মুকোলিট)
৩.Syrup. Ambrox(অ্যামব্রক্স)
৪. Syrup. Re-Cof (রি-কফ)
৫. Syrup. Mucospel(মিউকোস্পেল)
৬.Syrup. Tuspel(টুসপেল)
সর্বোপরি বুকে কফ জমে থাকলে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এছাড়াও দীর্ঘদিন যাবত বুকে কফ জমে থাকলে ফুসফুসে বা হার্টে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা বা ইনফেকশন দেখা দিতে পারে। তাই আমাদের সবসময় বুকে যেন কফ জমে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।