টাইফয়েড জ্বরের ইনজেকশন কয়টা দিতে হয়

টাইফয়েড জ্বরের ইনজেকশন কয়টা দিতে হয়


জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে আমরা প্রায় সবাই সাধারণ জ্বর,সর্দি, কাশিতে আক্রান্ত হয়ে থাকি। তবে অনেক সময় ব্যাকটেরিয়া সংক্রমনের পরে জ্বর হয়ে থাকে। এই জ্বরকে টাইফয়েড জ্বর বলা হয়। তাই আমাদের আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন টাইফয়েড জ্বর কেন হয়, টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ, টাইফয়েড জ্বর কতদিন থাকে, টাইফয়েড জ্বর ভালো করার উপায়, টাইফয়েড জ্বর হলে কি গোসল করা যায়, টাইফয়েড জ্বর হলে কি কি খাওয়া উচিত, টাইফয়েড জ্বরের টেস্টের নাম, টাইফয়েড জ্বরের ইনজেকশনের নাম এবং টাইফয়েড জ্বরের ইনজেকশন কয়টা দিতে হয় সম্পর্কে।


টাইফয়েড জ্বরের ইনজেকশন কয়টা দিতে হয়


আমরা আজ এই পোস্টে আলোচনা করব টাইফয়েড জ্বরের ইনজেকশন কয়টা দিতে হয়


টাইফয়েড জ্বর কেন হয়


টাইফয়েড জ্বর একটি পানিবাহিত রোগ তাই এটি সব থেকে বেশি দূষিত পানির মাধ্যমে ছড়ায়।দূষিত খাবার খাওয়ার মাধ্যমেও টাইফয়েড জ্বরের ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করতে পারে। এছাড়াও এই ব্যাকটেরিয়া বহনকারী ব্যক্তি মাধ্যমেও অন্য ব্যক্তি আক্রান্ত হতে পারে।



টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ


১.শরীরে সবসময় জ্বর থাকা এবং জ্বর ১০৪ বা তার উপরে থাকা।


২.প্রচন্ড মাথা ব্যথা হওয়া।


৩.সমস্ত শরীর ব্যথা হওয়া।


৪.জ্বরের সাথে কাশি বা সর্দি হওয়া।


৫.শারীরিক দুর্বলতা দেখা দেওয়া।


৬.ক্ষুধামন্দা হাওয়া।


৭.ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দেওয়া।


৮.শরীরের বিভিন্ন জায়গায় লালচে ছোপ ছোপ দাগ দেখা দেওয়া।


৯.বমি হওয়া।


১০.শরীরে অলসতা দেখা দেওয়া।


১১.এক সপ্তাহের বেশি জ্বর শরীরে স্থায়ী হওয়া।


উপরোক্ত লক্ষণ গুলি টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ হতে পারে। তাই উপরোক্ত লক্ষণগুলো দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।



টাইফয়েড জ্বর কতদিন থাকে


টাইফয়েড জ্বর সাধারণত ৪ -৬ দিন পরে ধরা পড়ে এবং এটি ১৫ -২০ দিন স্থায়ী হতে পারে।


টাইফয়েড জ্বর ভালো করার উপায়


১.টাইফয়েড জ্বর হলে প্রথমে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে এবং চিকিৎসকের চিকিৎসা অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে।


২.এ সময় তরল জাতীয় খাবার যেমন ডাবের পানি, ফলের জুস, সুপ খাওয়া যেতে পারে এতে শরীরে দুর্বলতা কাটে এবং দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করে।


৩.এ সময় প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে।


টাইফয়েড জ্বর হলে কি গোসল করা যায়


টাইফয়েড জ্বর হলে গোসল করা যায়। তবে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করা উচিত নয়। এ সময়ে হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করা উত্তম। এছাড়াও হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে মাথায় জলপট্টি দেওয়া এবং ঘাড় থেকে শুরু করে সমস্ত শরীর মুছে দেওয়া যেতে পারে।


টাইফয়েড জ্বর হলে কি কি খাওয়া উচিত


১.টাইফয়েড জ্বর দেখা দিলে শরীরে পানি শূন্যতার অভাব দেখা সমস্যা দেখা দেয় তাই এ সময় প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। এছাড়াও এর সাথে ডাবের পানি, বিভিন্ন ধরনের ফলের শরবত, সুপ , বাটার মিল্ক, ঘোল, দই ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।


২.কম মসলাযুক্ত খাবার খেতে হবে।


৩.ভিটামিন সি সমৃদ্ধ শাকসবজি খেতে হবে।


৪.এ সময় ভিটামিন সি যুক্ত ফল বা কিসমিস খেতে হবে। এতে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।


৫.এ সময় শরীরে শক্তি যোগানোর জন্য কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার যেমন- ভাত, সেদ্ধ আলু খাওয়া যেতে পারে।


টাইফয়েড জ্বরের টেস্টের নাম


টাইফয়েড জ্বরের জন্য চিকিৎসক  ওয়াইডাল টেস্ট (Widal Test) বা ট্রিপল অ্যান্টিজেন (Triple Antigen) টেস্ট করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন ।


টাইফয়েড জ্বরের ইনজেকশনের নাম


টাইফয়েড জ্বর হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এন্টিবায়োটিক বা ইনজেকশন দেওয়ার মাধ্যমে সারিয়ে তোলা সম্ভব। নিচে এন্টিবায়োটিক বা ইনজেকশনের নাম দেওয়া হলঃ


১.টাইফয়েড জ্বর দেখা দিলে চিকিৎসা প্রথম পর্যায়ে এজিথ্রোমাইসিন বা সিপ্রোফ্লাক্সিন এন্টিবায়োটিক ৫ দিন বা ৭ দিনের ডোজ দিয়ে থাকেন।


২.টাইফয়েড জ্বরের পরিমাণের ওপরে নির্ভর করে চিকিৎসাক টাইপিম ভি ( Typhim V) বা ভ্যাক্সফয়েড (Vaxfoyed) ইনজেকশন দেয়ার পরামর্শ দেন।


৩.এছাড়াও টাইফয়েড জ্বরের ধরেনের উপর নির্ভর করে চিকিৎসক সেফট্রিয়াক্সোন (Ceftriaxone)  ইনজেকশন দেওয়ার পরামর্শ দেন।


টাইফয়েড জ্বরের ইনজেকশন কয়টা দিতে হয়


টাইফয়েড জ্বরের ধরণের উপর নির্ভর করে চিকিৎসক ৭দিন বা ১৪ দিনের ডোজে ইনজেকশন দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এটাকে ৭ টা বা ১৪ টি ইনজেকশন দেওয়া লাগতে পারে।এছাড়াও একটি শিশুকে জন্মের ৬ - ৯ মাসের মধ্যে টাইফয়েড জ্বরের একটি টিকার ডোজ দেওয়া উচিত। 


টাইফয়েড জ্বর প্রতিরোধের উপায়


১.সব সময় বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে বা পানি ফুটিয়ে পান করতে হবে।


২.বাইরের পানি পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।


৩.খাবার পুরোপুরি সেদ্ধ করে খেতে হবে।


৪.খাবার আগে দুই হাত ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।


৫.রান্না বা খাবার আগে শাকসবজি বা ফল ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।


৬.ঘরের আসবাবপত্র সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।


৭.বাথরুমে সবসময় জুতা বা টয়লেট টিস্যু ব্যবহার করতে হবে।


৮.বাথরুম থেকে বের হয়ে ভালোভাবে হাত পা ধুয়ে নিতে হবে।


উপরোক্ত কাজ গুলি সঠিকভাবে করলে টাইফয়েড জ্বর প্রতিরোধ করা সম্ভব।



সর্বোপরি টাইফয়েড জ্বর আমাদের শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। কারণ টাইফয়েড জ্বরের জীবাণু শরীরে থাকলে শরীরের যেকোনো একটি অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে । তাই যত দ্রুত সম্ভব আমাদের চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ থাকতে হবে।

*

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post