আজানের জবাব দেওয়া কি ওয়াজিব না সুন্নত

আজানের জবাব দেওয়া কি ওয়াজিব না সুন্নত 


আল্লাহ আমাদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন।আমরা যাতে ফরজ নামাজ আদায় করতে ভুলে না যায় তার জন্য পাঁচবার আজান দেয়ার মাধ্যমে আল্লাহ নামাজের কথা স্মরণ করিয়ে দেন।

মসজিদের মাইকে মোয়াজ্জিনের সুমধুর কন্ঠে আযানের ধ্বনি ভেসে ওঠে যার মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহ নামাজের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারে।তাই আমরা আজ এই পোষ্টের মাধ্যমে জানব আজানের জবাব দেওয়া ওয়াজিব না সুন্নত, আজানের জবাব দেওয়ার নিয়ম, আজানের পরের দোয়া,যে অবস্থায় আজানের জবাব দেওয়া উচিত নয় এবং আজানের জবাব দেওয়ার ফজিলত সম্পর্কে।


আজানের জবাব দেওয়া কি ওয়াজিব না সুন্নত


আমরা আজ এই আর্টিকেলে আলোচনা করব আজানের জবাব দেওয়া কি ওয়াজিব না সুন্নত 



আজানের জবাব দেওয়া কি ওয়াজিব না সুন্নত 



আজানের জবাব দেওয়া সুন্নত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আজান হলে আজানের সাথে সাথে জবাব দিতেন । এবং সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে আজান হলে আজানের সাথে সাথে আজানের জবাব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।



আজানের জবাব দেওয়ার নিয়ম



সহীহ বুখারি হাদিসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ”যখন তোমরা আযান শুনবে, এর জবাবে মোয়াজ্জিনের অনুরূপ তোমরাও বলবে”। (বুখারী হাদিস নং- ৬১১)



সহিহ মুসলিম হাদিসে এসেছে, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বর্ণনা করেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করে বলেছেন তোমাদের কেউ যদি মোয়াজ্জিন প্রত্যেকটি বাক্য বলে থামার পর শ্রোতা ওই বাক্যটি শুনে নিজেও অনুরূপ বলবে। কিন্তু মুয়াজ্জিন যখন বলবে ”হাইয়্যা আলাস সালাহ” বলার সময় শ্রোতা ”লা হাওলা ওয়া লা কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” ও ”হাইয়্যা আলাল ফালাহ” বলার সময় শ্রোতা ”লা হাওলা ওয়া লা কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” বলবে।(সহিহ মুসলিম হাদিস নং - ৩৮৫)



এছাড়াও কিতাবুত দোয়া ও তারাবানি হাদীসে এসেছে, কিছু কিছু বর্ণনায় ”হাইয়্যা আলাস সালাহ” ও ”হাইয়্যা আলাল ফালাহ” বলার সময়ও মুয়াজ্জিনের অনুরূপ বলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। (কিতাবুত দোয়া ও তারাবানি হাদিস নং-৪৫৮)


সহীহ মুসলিম ও আবু দাউদ হাদিসে এসেছে, ”যে ব্যক্তি মোয়াজ্জিনের সাথে সাথে আযানের শব্দগুলো বলবে সে জান্নাতে যাবে ”।



আজানের পরের দোয়া



আজান শেষ হওয়ার পরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর উপরে দুরুদ ও আজানের দোয়া পড়া সুন্নত।রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আযানের আজান শেষ হওয়ার পরে নিন্মুক্ত দোয়াটি পাঠ করতেন।



দোয়াটি হলঃ


 ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺭَﺏَّ ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻟﺪَّﻋْﻮَﺓِ ﺍﻟﺘَّﺎﻣَّﺔِ، ﻭَﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ ﺍﻟْﻘَﺎﺋِﻤَﺔِ، ﺁﺕِ ﻣُﺤَﻤَّﺪﺍً ﺍﻟْﻮَﺳِﻴﻠَﺔَ ﻭَﺍﻟْﻔَﻀِﻴﻠَﺔَ، ﻭَﺍﺑْﻌَﺜْﻪُ ﻣَﻘَﺎﻣَﺎً ﻣَﺤﻤُﻮﺩﺍً ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻭَﻋَﺪْﺗَﻪ



বাংলা উচ্চারণঃ ”আল্লা-হুম্মা রাব্বা হা-জিহিদ দা‘ওয়াতিত তা-ম্মাতি ওয়াস সালা-তিল ক্বা-য়িমাতি, আ-তি মুহাম্মাদান আল ওয়াসীলাতা ওয়াল ফাদীলাতা, ওয়াব‘আসহু মাকা-মাম মাহমূদানিল্লাযী ওয়াআদতাহ”।


অর্থঃ ”হে আল্লাহ! এই পরিপূর্ণ আহ্বান এবং প্রতিষ্ঠিত সালাতের তুমিই প্রভু! মুহাম্মদ (স.)-কে অসিলা তথা জান্নাতের একটি স্তর এবং ফজিলত তথা সকল সৃষ্টির উপর অতিরিক্ত মর্যাদা দান করুন। আর তাঁকে মাকামে মাহমূদে (প্রশংসিত স্থানে) পৌঁছে দিন, যার প্রতিশ্রুতি আপনি তাঁকে দিয়েছেন।” (বুখারি হাদিস নং-৬১৪)


সহীহ বুখারি হাদিসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ”যে ব্যক্তি আযানের পর উপরোক্ত দোয়াটি পাঠ করবে তার জন্য আখিরাতে আমার সুপারিশ অবধারিত থাকবে।”



অন্য এক হাদিসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,  যে ব্যক্তি আযান শুনে নিন্মুক্ত দোয়াটি পাঠ করবে তার জন্য কিয়ামতের দিন আমার (জান্নাত) ওয়াজিব হয়ে যাবে ।


দোয়াটি হলঃ


”আল্লাহুম্মা রাব্বানা ইন্নাকা লাতুখলিফুন মি’আদ”।



যে অবস্থায় আজানের জবাব দেওয়া উচিত নয়




নিম্নক্ত পাঁচটি অবস্থায় থাকলে আজানের জবাব দেওয়া উচিত নয়।আযানের সময় চুপ থেকে আযানের জবাব দেওয়া সুন্নত।



১.নামাজরত অবস্থায় 

২.খাবার খাওয়া অবস্থায় 

৩.ইস্তেঞ্জারত অবস্থায় 

৪.স্ত্রী সাথে সহবাসরত অবস্থায়

৫.মহিলাদের মাসিক বা ঋতুকালীন অবস্থায় 




আদ্দুররুল মুখতার হাদিসে এসেছে, আজানের পরক্ষণে যদি উল্লেখিত কাজ থেকে অবসর হয়, তবে সঙ্গে সঙ্গে আজানের জবাব দেওয়া উত্তাম। এছাড়াও কুরআন তেলাওয়াতকারী তেলাওয়াত সাময়িক বন্ধ রেখে আযানের জবাব দেওয়া উত্তম। (আদ্দুররুল মুখতার হাদিস নং- ৩৯৭)।



আজানের জবাব দেওয়ার ফজিলত



আজানের জবাব দেওয়া এবং আযানের পরে দোয়া পড়ার অনেক ফজিলত রয়েছে। দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে আযানের জবাব দিলে জান্নাতে প্রবেশ করা যায় । 


এ সম্পর্কে সুনানে আন নাসাঈ হাদিসে এসেছে, হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে মোয়াজ্জিন যা বলে তাই বলে ”সে জান্নাতে প্রবেশ করবে”।


এছাড়াও সহিহ বুখারি হাদিসে এসেছে, হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আযান শুনে আযানের দোয়া পড়বে ”কেয়ামতের দিন তার জন্য আমার সুপারিশ থাকবে”।




সর্বোপরি আজান শোনা বা আযানের জবাব দেওয়া সমগ্র মুসলিম উম্মার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।কারণ এই আজান সোনার মাধ্যমেই আমরা নামাজের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারি এবং আল্লাহর দেওয়া ফরজ নামাজ আদায় করতে পারি।তাই আমাদের এই আর্টিকেলে আজানের গুরুত্ব বা আযানের জবাব দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

*

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post