ইস্তেঞ্জার সুন্নত ও আদব সমূহ কয়টি ও কি কি
ইসলামের বিধিবিধান মানব জীবনের সব ক্ষেত্রে পরিব্যাপ্ত। ইসলামে মানব জীবনের খুঁটিনাটি থেকে বৃহৎ প্রত্যেকটি বিষয়ের বর্ণনা ও সমাধান রয়েছে। কারন আল্লাহ কর্তৃক একমাত্র জীবন ব্যবস্থা হলো ইসলাম। ইসলামের প্রতিটি বিষয় জীবনের সাথে জড়িত বলে পেশাব-পায়খানার মতো বিষয়টিও বাদ যায়নি। ইস্তেঞ্জার সুন্নত ও আদব হাদিসে আলোচনা আছে কিন্তু এই সম্পর্কে মানুষ খুব কমই জানে। তাই নিম্নে ইস্তেঞ্জার সুন্নত ও আদব সমূহ কয়টি ও কি কি আলোচনা করা হলো।
আমরা আজ এই পোস্টে আলোচনা করব ইস্তেঞ্জার সুন্নত ও আদব সমূহ কয়টি ও কি কি
ইস্তেঞ্জা কি
ইস্তেঞ্জা : ইস্তেঞ্জা হলো পেশাব ও পায়খানার রাস্তা থেকে নির্গত অপবিত্রতা পানি দ্বারা দূর করা।
ইস্তেজমার: আর ইস্তেজমার হলো পেশাব ও পায়খানার রাস্তা থেকে নির্গত অপবিত্রতা পাথর বা কাগজ বা অনুরূপ জিনিস দ্বারা দূর করা।
আল্লাহর রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আমি তোমাদের জন্য পিতার মতো। আমি তোমাদের সব কিছু শিক্ষা দিয়ে থাকি। তোমরা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গেলে কেবলাকে সামনে বা পেছনে দিয়ে বসবে না। ডান হাত দিয়ে শৌচকার্য সম্পাদন করবে না।’ তিনি তিনটি ঢিলা ব্যবহারের নির্দেশ দিতেন এবং গোবর ও হাড্ডি দ্বারা ঢিলা করা থেকে বারণ করতেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ০৭ )
ইস্তেঞ্জার সুন্নত ও আদব সমূহ কয়টি ও কি কি
১। আন্টি, টুপি ইত্যাদিতে আল্লাহ তা‘আলা, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর নাম, কুরআনের আয়াত ইত্যাদি লেখা থাকলে তা খুলে রেখে যাওয়া। - (আবু দাউদ-১ঃ২, ইবনে মাজা ২৬, ফাতাহুল কাদীর ১ঃ৩৭,ত্বাহতাবী ৩৭)
২। ইস্তেঞ্জাখানায় জুতা স্যান্ডেল কিছু পায়ে দিয়ে যাওয়া। - (উসওয়ে রাসুলে আকরাম ১৭৯)
৩। ইস্তেঞ্জাখানায় মাথা ঢেকে দেওয়া। - (মালাকিল ফালাহ ৩১, উসওয়ে রাসুলে আকরাম ১৭৯)
৪। ইস্তেঞ্জাখানায় প্রবেশের পূর্বে (দুর্গন্ধময় স্থান থেকে দূরে থাকা অবস্থায়) বিসমিল্লাহ পড়া। - (ইবনে মাজা ২৬,মারাকিল ফালাহ ৩১)
এবং এই দোয়া পড়া-
اَللهُمَّ إِنّيْ أَعًوْذُ بِكَ مِنَ الْخُبْثِ وَ الْخَبَائِثِ
বুখারী ১ঃ২৬,তিরমীযী ১ঃ৭,আবু দাউদ ১ঃ২,ইবনে মাজা ২৬।
ফায়েদাঃ
(ক) বিসমিল্লাহ সহ দোয়াটি এভাবে পড়া-
بِسْمِ اللهِ اَللهُمَّ إِنّيْ أَعًوْذُ بِكَ مِنَ الْخُبْثِ وَ الْخَبَائِثِ
উচ্চারণ : ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল খুবুছি ওয়াল খাবায়িছ।’
অর্থ : ‘আল্লাহর নামে (শুরু করছি); হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার কাছে পুরুষ ও স্ত্রী শয়তানের অনিষ্ট তথা ক্ষতি থেকে আশ্রয় চাই।’ (বুখারি, মুসলিম, ইবনে মাজাহ)
(খ) ফাঁকা জায়গায় ইস্তেঞ্জা করতে হলে সতর খোলার আগে দোয়াটি পড়া। - (তাহত্বাবী ২৮,তাকরীর তিরমিযী ৪)
(গ) ইস্তেঞ্জাখানায় প্রবেশের সময় দোয়া পড়ার কথা ভুলে গেলে প্রবেশের পর মুখে তা উচ্চারণ না করা। মনে মনে পড়ার অবকাশ আছে। - (মারাকিল ফালাহ ২৮,তাকরীরে তিরমিযী ৪)
৫। খোলা স্থানে ইস্তেঞ্জা করতে হলে রাস্তা থেকে দূরে জনসাধারণের দৃষ্টি আড়ালে চলে যাওয়া। - (ইবনে মাজা ২৮, তিরমিযী ১ঃ২, নাসায়ী ১ঃ৪)
৬। প্রথমে বাম পা দিয়ে ইস্তেঞ্জাখানায় প্রবেশ করা । - (মারাকিল ফালাহ ২৮ )
৭। পেশাব-পায়খানা করার সময় কিবলার দিকে মুখ বা পিঠ করে না বসা। - (তিরমিযী ১ঃ৮, নাসায়ী ১ঃ৫)
ফায়েদাঃ
বাম পায়ের উপর ভর করে বসা আদব, কারণ ইহা মল-মূত্র বের হওয়ার জন্য অধিক সহজতর। - (মাজমাউয যাওয়ায়েদ ১ঃ২১১,নূরুল ইযাহ ২৮)
৮। যথা সম্ভব জমিনের নিকটবর্তী হয়ে সতর খোলা দাঁড়িয়ে সতর না খোলা। - (তিরমিযী ১ঃ১০,উসওয়ে রাসূলে আকরাম ১৭৯)
৯। যেখানে পেশাব পায়খানার নির্ধারিত জায়গা নাই, সেখানে এমনভাবে আড়াল করে বসা, যাতে সতর কারো নজরে না পড়ে। - (নাসাঈ ১ঃ৬, ইবনে মাজা ২৯, আবু দাউদ ১ঃ৬)
ফায়েদাঃ
লজ্জাস্থান বা মলমূত্রের দিকে না তাকানো। - (মারাকিল ফালাহ ৩১)
১০। ইস্তেঞ্জা খানা ছাড়া অন্যত্রে পেশাব করার সময় নরম ও ঢালু জায়গা তালাশ করা,স্থান শক্ত হলে একটু খুঁড়ে নেয়। - (তিরমিজি ১ঃ১২ ও তার হাশিয়া, আবু দাউদ ১ঃ২)
১১। গোসলখানা ও আবদ্ধ পানিতে ইস্তেঞ্জা না করা। - (তীরমিজি ১ঃ১২, নাসাঈ ১ঃ৭, ইবনে মাজা ২৬ ও ২৯)
১২। দাঁড়িয়ে পেশাব না করা। - (তিরমিজি ১ঃ৯, ইবনে মাজা ২৬)
১৩। পেশাবের ফোঁটা এবং নাপাক পানির ছিটা থেকে যথাসম্ভব বেঁচে থাকা। - (নাসাঈ ১ঃ৬, মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ১ঃ১২১)
১৪। পায়খানা করার পর পানি ব্যবহারের পূর্বে তিনবার ঢিলা কুলুখ (বা টয়লেট পেপার) ব্যবহার করা। -( তিরমিজি ১ঃ১০, নাসাঈ ১ঃ৭)
ফায়েদাঃ
হাড়, গোবর, কাগজ, কষ্টদায়ক বা সম্মানিত বস্তু দ্বারা ঢিলা না করা।
১৫। পেশাবের পর কিছুক্ষণ ঢিলা কুলুখ (বামহাতে) নিয়ে আড়ালে হাঁটা-চলা করে, কাশি বা নড়াচড়া দিয়ে বা অন্য কোন পন্তায় পেশাবের ফোঁটা বন্ধ হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া। - ইবনে মাজা ২৮
১৬। ঢিলা কুলুখ ব্যবহারের পর তিনবার পানি ব্যবহার করা। - তিরমিজি ১ঃ১ ও ১৮, ইবনে মাজা ২৯
১৭। শৌচ কার্য করার সময় বাম হাত ব্যবহার করা। - তিরমিযী ১ঃ১০, নাসাঈ ১ঃ৫, আবু দাউদ ১ঃ৫
১৮। পুরুষাঙ্গ ডান হাত দ্বারা স্পর্শ না করা। - বুখারী ১ঃ২৭, দারা কুতনী ১ঃ৫১, ইবনে মাজা ২৬
১৯। অত্যাধিক প্রয়োজন না হলে ইস্তেঞ্জাখানায় কথা না বলা। - আবু দাউদ ১ঃ৩
২০। ডান পা দিয়ে বের হওয়া। - মারাকিল ফালাহ ২৯
২১। ইস্তেঞ্জা খানা থেকে বের হয়ে (দুর্গন্ধময় স্থান ত্যাগ করে) এ দোয়া পড়া-
> ﻏُﻔْﺮَﺍﻧَﻚَ
উচ্চারণ : ‘গোফরানাকা।’
অর্থ : (হে আল্লাহ!) আপনার কাছে ক্ষমা চাই।’ (বুখারি, আদাবুল মুফরাদ)
এভাবেও দোয়া করা যেতে পারে-
> غُفْرَانَكَ الْحَمْدُ لِلهِ الَّذِيْ اَذْهَبَ عَنِّيْ الْاَذَى وَعَافَانِيْ
উচ্চারণ : ‘গোফরানাকা আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি আজহাবা আন্নিল আজা ওয়া আফানি।’
অর্থ : ‘(হে আল্লাহ!) আপনার কাছে ক্ষমা চাই। সব প্রশংসা ওই আল্লাহর জন্য; যিনি ক্ষতি ও কষ্টকর জিনিস থেকে আমাকে মুক্তি দিয়েছেন।’ - ইবনে মাজা ২৬, মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ১ঃ২
২২। মাটি, সাবান বা অন্য কিছু দিয়ে দুই হাত ভালোভাবে ধুয়ে ফেলা। - নাসাঈ ১ঃ৯, ইবনে মাজা ৩০
পরিশেষে আমরা জানতে পারলাম ইস্তেঞ্জার সুন্নত কয়টি ও কি কি? আমরা এই সুন্নতগুলো মানার মাধ্যমে আল্লাহর কাছ থেকে নেকি পেতে পারি এবং সুস্থভাবে জীবন যাপন করতে পারব।