মোনাজাত মূলক তিনটি হাদিস বাংলা উচ্চারণ
আল্লাহর কাছে দোয়া বা সাহায্য প্রার্থনা করার অন্যতম পন্থা হলো মোনাজাত।অর্থাৎ মোনাজাতের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহ আল্লাহর কাছে সকল বিষয়ে দোয়া বা সাহায্য প্রার্থনা করে।কিন্তু আমরা অনেকেই মোনাজাত সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানিনা। তাই আমাদের আজ এই পোস্টের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন মোনাজাত মূলক তিনটি হাদিস বাংলা উচ্চারণ সহ, মোনাজাত করার নিয়ম, মোনাজাতের দোয়া এবং মোনাজাত করার ফজিলত।
আমরা আজ এই আর্টিকেলে আলোচনা করব মোনাজাত মূলক তিনটি হাদিস বাংলা উচ্চারণ
মোনাজাত মূলক তিনটি হাদিস বাংলা উচ্চারণ
মোনাজাত সম্পর্কে বহু হাদিস নাযিল হয়েছে। এর ভিতরে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি হাদিস সহ আরো কিছু হাদিস নিচে আলোচনা করা হলো।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা মোনাজাতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, রিজিক বৃদ্ধির জন্য দোয়া কর এবং আল্লাহর পথে হেদায়েতের জন্য দোয়া করো।
এ সম্পর্কে সহীহ মুসলিম ও আবু দাউদ হাদিসে এসেছে,
اَللّهُمَّ اغْفِرْلِيْ وَارْحَمْنِي وَاهْدِنِيْ وَعَافِنِيْ وَارْزُقْنِيْ
বাংলা উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মাগফিরলি, ওয়ারহামনি, ওয়াহদিনি, ওয়া আফিনি, ওয়ারযুকনি। (মুসলিম, মিশকাত, আবূ দাউদ: ৮৫০)
অর্থঃ ”হে আল্লাহ আপনি আমাকে মাফ করুন, আমাকে রহম করুন, আমাকে হেদায়েত দান করুন, আমাকে শান্তি দান করুন এবং আমাকে রিজিক দান করুন।”
আবু মুসা আনসারি (রহঃ)ও সাহস এবং (রহঃ)বর্ণনা করেন, আমি উম্মুল সালমা (রাঃ) কে বললাম, হে উম্মুল মুমিনিন! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম যখন আপনার কাছে অবস্থান করতেন, তখন তিনি অধিকাংশ সময়ে কি দোয়া করতেন। তখন তিনি বললেন, তিনি অধিকাংশ সময়ে নিন্মক্ত দোয়াটি পাঠ করতেন।
এ সম্পর্কে তিরমিজি হাদিসে এসেছে,
يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلَى دِينِكَ
বাংলা উচ্চারণঃ “ইয়া মুকাল্লিবাল কুলূব ছাব্বিত কালবী আলা দীনিকা।”
অর্থঃ ”হে অন্তর পরিবর্তনকারি! আমার অন্তর তুমি তোমার দীনে সুদৃঢ় রাখ।”
উপরোক্ত হাদিস সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উম্মে সালমা (রাঃ) কে বললেন, এমন কোন মানুষ নেই যার অন্তর আল্লাহ তাআলার অংগুলিসমূহের দুই আঙ্গুলের মাঝে নেই। যাকে তিনি ইচ্ছা তাকে তিনি দিনের পথে কায়েম রাখেন এবং যাকে ইচ্ছা তিনি সরিয়ে দেন।
মিশকাত হাদিসে এসেছে, হযরত উম্মু মা’বাদ (রাঃ) বর্ণনা করেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিমক্ত দোয়াটি বলতে শুনেছি। এবং তিনি নিজেও নিমক্ত দোয়াটি পাঠ করতেন।
দোয়াটি হলোঃ
اللَّهُمَّ طَهِّرْ قَلْبِي مِنَ النِّفَاقِ وَعَمَلِي مِنَ الرِّيَاءِ وَلِسَانِي مِنَ الْكَذِبِ وَعَيْنِي مِنَ الْخِيَانَةِ فَإِنَّكَ تَعْلَمُ خَائِنَةَ الْأَعْيُنِ وَمَا تُخْفِي الصُّدُورُ» . رَوَاهُمَا الْبَيْهَقِيُّ فِي الدَّعَوَاتِ الْكَبِيرِ
বাংলা উচ্চারণঃ ”আল্ল-হুম্মা ত্বহ্হির কলবী মিনান্ নিফা-কি ওয়া ’আমলী মিনার্ রিয়া-য়ি ওয়া লিসা-নী মিনাল কাযিবি ওয়া ’আয়নী মিনাল খিয়া-নাতি ফাইন্নাকা তা’লামু খ-য়িনাতাল আ’ইউনি ওয়ামা- তুখফিস্ সুদূর”
অর্থঃ “অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমার অন্তরকে মুনাফিক্বী হতে, আমার কাজকে লোক দেখানো হতে, আমার জবানকে মিথ্যা বলা হতে এবং (আমার) চোখকে খিয়ানাত করা হতে পাক-পবিত্র করো। তুমি অবশ্যই জানো চোখ যা খিয়ানাত করে এবং অন্তরসমূহ যা গোপন করে”। (বায়হাক্বী)
উপরোক্ত দোয়াটি মোনাজাতের মাধ্যমে পাঠ করার ফলে অন্তরকে কলস মুক্ত করা যায়।
মোনাজাতের দোয়া
মোনাজাত একটি আদি শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে ”চাওয়া” বা ”প্রার্থনা” করা। মোনাজাতের মাধ্যমেই আল্লাহর কাছ থেকে কোন কিছু চেয়ে নেওয়া যায়। এই মোনাজাতের মাধ্যমে আবার আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা যায়। যেকোনো সময় মোনাজাতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা যায়।নিম্নে মোনাজাতের কয়েকটি দোয়া দেওয়া হলঃ
১.সুরা বাকারা ২০১ নম্বর আয়াতে এসেছে,
رَبَّنَاۤ اٰتِنَا فِی الدُّنۡیَا حَسَنَۃً وَّفِی الۡاٰخِرَۃِ حَسَنَۃً وَّقِنَا عَذَابَ النَّارِ
বাংলা উচ্চারণঃ ”রাব্বানা আতিনা ফিদদুনয়া হাসনাতাও অফিল আখিরতি হাসনাতাও অকিনা আজাবান নার”।
অর্থঃ ”আমাদের প্রভু! আমাদের দুনিয়াতে যা কল্যাণকর, পরকালে যা কল্যাণকর তা দান করুন, আমাদেরকে আগুনের আজাব থেকে রক্ষা করুন”।
২.সুরা বাকারা ১২৭ নম্বর আয়াতে এসেছে,
رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا إِنَّكَ أَنْتَ السَّمِيعُ العَلِيمُ
বাংলা উচ্চারণঃ ”রব্বানা তাকব্বাল মিন্না ইন্নাকা আনতাস সামিউল আলিম।”
অর্থঃ ”আমাদের প্রভু! আমাদের কাছ থেকে (এই সেবা) গ্রহণ করুন, কেননা আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।”
৩.সুরা বাকারা ১২৮ নম্বর আয়াতে এসেছে,
رَبَّنَا وَاجْعَلْنَا مُسْلِمَيْنِ لَكَ وَمِن ذُرِّيَّتِنَا أُمَّةً مُّسْلِمَةً لَّكَ وَأَرِنَا مَنَاسِكَنَا وَتُبْ عَلَيْنَآ إِنَّكَ أَنتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ
বাংলা উচ্চারণঃ ”রব্বানা অজ-আলনা মুসলিমাইনি লাকা অমিন যুররিয়য়াতিনা 'উম্মাতাম মুসলিমাতাল লাকা অআরিনা মানাসিকানা অতুব 'আলায়না 'ইন্নাকা' আনতাত-তাওওয়াবুরহিম।”
অর্থঃ ”হে আমাদের পালনকর্তা, এবং আমাদেরকে আপনার অনুগত করুন এবং আমাদের বংশধরদের থেকে এমন একটি জাতি তৈরি করুন যারা আপনার অনুগত, এবং আমাদের আচার-অনুষ্ঠান দেখান এবং আপনার কাছে তওবা করান।”
৪.সূরা সাফফাত ১৮০-১৮২ নম্বর আয়াতে এসেছে,
سُبۡحٰنَ رَبِّكَ رَبِّ الۡعِزَّةِ عَمَّا يَصِفُوۡنَۚ
وَسَلٰمٌ عَلَى الۡمُرۡسَلِيۡنَۚ وَالۡحَمۡدُ لِلّٰهِ رَبِّ الۡعٰلَمِيۡنَ
বাংলাউচ্চারণঃ “সুবহানা রাব্বিকা রাব্বিল ইযযাতি আম্মা ইয়াসিফুন; ওয়া সালামুন আলাল মুরসালিন ; ওয়াল হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন ।”
অর্থঃ ”পবিত্রতা আপনার রবের, মহাসম্মান রবের জন্য , তারা (রবের উপর) যা আরোপ করে তাহা হইতে । এবং শান্তি(আনুগত্য/সমর্পণ) প্রেরিতগণের(নবী,রাসুল,ওলি) উপর । এবং প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি সমস্ত জগতের রব ।”
৫.সূরা বাকারা ২৫০ নম্বর আয়াতে এসেছে,
رَبَّنَا أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْراً وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانصُرْنَا عَلَى القَوْمِ الكَافِرِينَ
বাংলাউচ্চারণঃ “রব্বানা আফরিগ আলায়না সবরও অছাব্বিত আকদামানা অনছুরনা আলাল-কওমিল-কাফিরিন।”
অর্থঃ “আমাদের প্রভু! আমাদেরকে ধৈর্য্য দান করুন, আমাদের পা মজবুত করুন এবং কাফের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদের সাহায্য করুন।”
৬.সূরা আল-ইমরান ০৮ নম্বর আয়াতে এসেছে,
رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوْبَنَا بَعْدَ اِذْ ھَدَيْتَنَا وَھَبْ لَنَا مِنْ لَّدُنْكَ رَحْمَةً ۚ اِنَّكَ اَنْتَ الْوَھَّابُ
বাংলাউচ্চারণঃ “রব্বানা লা-তুঝীগ কুলূবানা বা-আদা ইয-হাদায়তানা অ-হাব লানা মিল-লাদুনকা রহ’মাতান ইন্নাকা আনতাল অহহাব।”
অর্থঃ “আমাদের প্রভু! আপনি আমাদেরকে হেদায়েত করার পর আমাদের অন্তর যেন (সত্য থেকে) বিচ্যুত না হয় এবং আপনার পক্ষ থেকে আমাদের রহমত দান করুন। নিশ্চয়ই তুমি দাতা।”
৭.সূরা আল-ইমরান ১৬ নম্বর আয়াতে এসেছে,
رَبَّنَآ اِنَّنَآ اٰمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
বাংলাআচ্চরণঃ ”রব্বানা ইন্নানা আমান্না ফাগফির লানা যুনুবানা অকিনা আযাবান-নার।”
অর্থঃ “আমাদের প্রভু! আমরা অবশ্যই ঈমান এনেছি, কাজেই আমাদের পাপ ক্ষমা করুন এবং আমাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন।”
৮.সূরা আরাফ ২৩ নম্বর আয়াতে এসেছে,
رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنفُسَنَا وَإِن لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ
বাংলাউচ্চারণঃ “রব্বানা জলামনা আনফুসিনা অ-ইল লাম তাগফির লানা অতারহামনা লানা কুনাননা মিনাল-খসিরীন।”
অর্থঃ “আমাদের প্রভু! আমরা আমাদের নিজেদের আত্মার প্রতি জুলুম করেছি। আপনি যদি আমাদের ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি দয়া না করেন তবে আমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হব।”
৯.সূরা সুরা বাকারা ২৮৬ নম্বর আয়াতে এসেছে,
رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَآ اِنْ نَّسِيْنَآ اَوْ اَخْطَاْنَا ۚ رَبَّنَا وَلَا تَحْمِلْ عَلَيْنَآ اِصْرًا كَمَا حَمَلْتَهٗ عَلَي الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِنَا ۚ رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلْنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهٖ ۚ وَاعْفُ عَنَّا ۪ وَاغْفِرْ لَنَا ۪ وَارْحَمْنَا ۪ اَنْتَ مَوْلٰىنَا فَانْــصُرْنَا عَلَي الْقَوْمِ الْكٰفِرِيْنَ
বাংলা উচ্চারণঃ ”রব্বানা লা তু-আখিযনা ইন-নাসীনা আউ আখতনা রব্বানা অলা তাহমিল আ'লায়না ইস'রন কামা হা'মালতাহু আ'লাল লাযিনা মিন কবলিনা রব্বানা অলা তুহাম্মিলনা মা লা ত-কত লানা বিহ, অয়াফু আ'ন্না অগফিরলানা অরহামনা আনতা মাওলানা ফানসুরনা আ'লাল কওমিল কাফিরিন।”
অর্থঃ ”আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যের বাইরে ভার দেন না। সে যা অর্জন করেছে তার (ভাল) প্রতিদান পায় এবং সে যা অর্জন করেছে তার (মন্দ) জন্য তাকে শাস্তি দেওয়া হয়। "হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা ভুলে গেলে বা ভুল করলে আমাদেরকে শাস্তি দিও না, হে আমাদের প্রভু! আমাদের উপর এমন বোঝা অর্পণ করবেন না যেটা আপনি আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর অর্পণ করেছিলেন, হে আমাদের প্রভু! আমাদের উপর এমন বোঝা চাপিয়ে দিও না, যার শক্তি আমাদের আছে। সহ্য করুন। আমাদের ক্ষমা করুন এবং আমাদের ক্ষমা করুন। আমাদের প্রতি রহম করুন। আপনি আমাদের মওলা (অভিভাবক, সাহায্যকারী এবং রক্ষাকর্তা ইত্যাদি) এবং আমাদের কাফের সম্প্রদায়ের উপর বিজয় দান করুন।”
১০.সূরা আল-মাইদাহ ৮৩নম্বর আয়াতে এসেছে,
بَّنَا آمَنَّا فَاكْتُبْنَا مَعَ الشَّاهِدِينَ
বাংলাউচ্চারণঃ ”রব্বানা আমাননা ফাকতুবনা মা আশ-শাহিদীন।”
অর্থঃ “আমাদের প্রভু! আমরা বিশ্বাস করি; আমাদেরকে সাক্ষীদের মধ্যে লিখুন।”
মোনাজাত করার নিয়ম
১.মোনাজাত করার আগে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর দরুদ শরীফ পাঠ করা।
২.দুই হাত আকাশের দিকে তুলে মোনাজাত করা।
৩.দৃঢ়তার সহিত মোনাজাত করা।
৪.আমিন বলে মোনাজাত শেষ করা।
৫.মোনাজাতের শেষে দুরুদ শরীফ পড়া।
মোনাজাত করার ফজিলত
১.মোনাজাত করার মাধ্যমে বেশি আল্লাহর কাছ থেকে সবথেকে বেশি সাহায্য প্রার্থনা করা যায়।
এ সম্পর্কে তিরমিজি হাদিসে এসেছে, হযরত আব্দুল্লাহ (রাঃ)বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা আল্লাহর কাছে অনুগ্রহ প্রার্থনা করো। কেননা আল্লাহ তাআলা এটা পছন্দ করেন যে, তার কাছে দোয়া ও প্রার্থনা করা হোক।
২.মোনাজাতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা যায়।
সর্বোপরি মোনাজাত এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। যার মাধ্যমে আল্লাহর কাছ থেকে সর্ববিষয়ে সাহায্য চাওয়া যায় এবং জীবনের চলার পথ সহজ হয়ে যায়। তাই আমাদের বেশি বেশি করে মোনাজাতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে দোয়া চাইতে হবে।