গর্ভাবস্থায় জরায়ুর মুখ খোলার দোয়া
বর্তমানে বাংলাদেশের অধিকাংশ মহিলারা গর্ভ অবস্থায় বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় ভুগে থাকেন। এর অন্যতম কারণ হলো সঠিকভাবে জীবন যাপন না করা। এ সময় বেশি বেশি আল্লাহর ইবাদত এবং দোয়া পড়লে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা থেকে মুক্তি লাভ করা যায়।
এছাড়া ডেলিভারির সময় জরায় মুখ খোলার জন্য কিছু দোয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিখিয়ে দিয়েছেন। তাই আমাদের আজকের এই পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন গর্ভবতী মায়ের কোন মাসে কোন সূরা পড়তে হয়, পেটে বাচ্চা সুস্থ রাখার দোয়া, গর্ভাবস্থায় জরায়ুর মুখ খোলার দোয়া এবং গর্ভাবস্থায় জরায়ুর মুখ খোলার লক্ষণ সম্পর্কে।
আমরা আজ এই আর্টিকেলে আলোচনা করব গর্ভাবস্থায় জরায়ুর মুখ খোলার দোয়া
গর্ভবতী মায়ের কোন মাসে কোন সূরা পড়তে হয়
গর্ভকালীন সময়ে মায়েরা যে কাজগুলো করে থাকেন সেই কাজের প্রভাব বাচ্চার উপর পড়তে থাকে। তাই যদি গর্ভকালীন সময়ে মায়েরা কোরআন তেলাওয়াত ও জিকির বা কোরআন এর আমল নিয়ে চর্চা করে। তাহলে বাচ্চার উপর কোরআনের প্রভাব পড়বে। এর জন্য গর্ভাবস্থায় কোন মাসে কোন সূরা পড়তে হবে তা নিচে দেওয়া হল:
১.গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসে সূরা আল- ইমরান পড়া উত্তম। কারণ প্রথম মাসে সূরা আল- ইমরান পড়লে সন্তান দামী হয়।
২.গর্ভাবস্থায় দ্বিতীয় মাসে সূরা ইউসুফ পাঠ করা উত্তম। কারণ এ সময় আল্লাহ তা'আলা বাচ্চার আকৃতি গঠন করেন । তাই এই সময় এ সূরা পাঠ করার মাধ্যমে পেটের বাচ্চা সুন্দর হয়।
৩.গর্ভাবস্থায় তৃতীয় মাসে সূরা মারিয়াম পাঠ করা উত্তম। কারণ সূরা মারিয়াম পাঠ করার ফলে পেটের বাচ্চা সহিষ্ণু বা ধৈর্যশীল হয়।
৪.গর্ভাবস্থায় চতুর্থ মাসে সূরা লোকমান পাঠ করা উত্তম। কারণ এছাড়া করার মাধ্যমে পেটের সন্তান বুদ্ধিমান হয়।
৫.গর্ভাবস্থায় পঞ্চম মাসে সূরা মুহাম্মদ পাঠ করা উত্তম। কারণ এ সূরা পাঠ করলে পেটের বাচ্চা চরিত্রবান হয় ।
৬.গর্ভাবস্থায় ষষ্ঠ মাসে সুরা ইয়াসিন পড়া উত্তম। কারণ ষষ্ঠ মাসে সুরা ইয়াসিন পাঠ করলে পেটের বাচ্চা জ্ঞানী হয়।
৭.এবং সপ্তম, অষ্টম, নবম এবং দশম মাসে সূরা ইউসুফ, সূরা মুহাম্মদ ও সূরা ইব্রাহীমের কিছু কিছু অংশ পড়া উত্তম।
উপরোক্ত সূরাগুলি গর্ভাবস্থায় পাঠ করলে গর্ভের সন্তান সুস্থ সুন্দর চরিত্র নিয়ে জন্মগ্রহণ করবে।
পেটে বাচ্চা সুস্থ রাখার দোয়া
গর্ভাবস্থায় গর্ভের সন্তান সুস্থ রাখার জন্য বিভিন্ন দোয়া পাঠ করা যায়। নিচে দোয়া গুলো দেওয়া হল:
১.আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, গর্ভাবস্থায় বেশি বেশি নিম্নক্ত দোয়াটি পাঠ করবে।
দোয়াটি হলো:
বাংলা উচ্চারণ: ”ওয়া ইন্নি উয়িজুহা বিকা ওয়া যুররিইয়াতাহা মিনাশ শাইতনির রজীম”
অর্থ: “আমি তার এবং তার সন্তান-সন্তুতির জন্য অভিশপ্ত শয়তানের আক্রমণ থেকে তোমার(আল্লাহর) কাছে আশ্রয় চাচ্ছি।”
উপরোক্ত দোয়াটি পাঠ করলে গর্ভের সন্তান শয়তানের আক্রমণ এবং বদ নজর থেকে রক্ষা পায় এবং সুস্থ থাকে।
এছাড়াও গর্ভকালীন সময়ে গর্বের সন্তান সুস্থ রাখার জন্য নির্মত্ত দোয়াটি বেশি বেশি পাঠ করা উচিত।
দোয়াটি হলো:
বাংলা উচ্চারণ : ”রব্বি হাবলি মিনাস সলিহিন”
অর্থ : ”হে আমার রব! আমাকে সৎ, কর্মপরায়ণ সন্তান দান করুন।”
গর্ভের সন্তান সুস্থ রাখার জন্য প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে ”সূরা ইখলাস”, ”সূরা নাস”, ”সূরা ফালাক” পড়ে সারা শরীরে তিনবার ফু দেওয়া উচিত। তাহলে গর্ভের সন্তান নিরাপদে থাকে।
এছাড়াও গর্ভের সন্তান গর্ভকালীন সময়ে সুস্থ রাখার জন্য বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করা এবং নামাজ পড়া এবং কোরআন তেলাওয়াত করা।
গর্ভাবস্থায় জরায়ুর মুখ খোলার দোয়া
গর্ভাবস্থায় ডেলিভারি পেইন উঠলে নরমাল ডেলিভারি করানোর জন্য অবশ্যই জরায়ুর মুখ খুলতে হবে। আর এই জরায়ুর মুখ খোলার জন্য ডেলিভারি পেইন ওঠার সময় কিছু দোয়া পাঠ করলে সহজে জরায়ুর মুখ ফুলে যায় এবং সন্তান প্রসব সহজ হয়।
জরায়ুর মুখ খোলার জন্য আল্লাহর ৯৯ টি গুণবাচক নামের মধ্যে একটি গুণবাচক নাম পাঠ করলে প্রসব বেদনা সহজ হয় এবং গর্বের সন্তান হেফাজতে থাকে।
দোয়াটি হলো:
اَلْمُبْدِئُ
বাংলা উচ্চারণঃ “আল-মুবদিয়ু”
অর্থঃ ”প্রথমবার সৃষ্টিকারী”
আল্লাহর এই গুণবাচক নামটি ৯০বার পাঠ করে পেটের উপর শাহাদাত আঙ্গুল দিয়ে ঘুরাতে হবে। তাহলে গর্ভের সন্তান নিরাপদে থাকবে এবং নরমাল ডেলিভারি সহজ হয়ে যাবে।
এছাড়াও এ সময় সুরা ফাতির ১১ নম্বর আয়াত, সূরার আয়াত ৮ নম্বর আয়াত, সূরা নাহাল ৮৭ নম্বর আয়াত এবং সূরা যিলযাল পাঠ করা উত্তম। এতে জরায়ুর মুখ সহজে খুলে যায় এবং ডেলিভারি সহজ হয়ে যায়।
গর্ভাবস্থায় জরায়ুর মুখ খোলার লক্ষণ
১.তলপেটে ব্যথা হওয়া।
২.জরায়ু প্রসারিত হওয়া।
৩.সাদা স্রাব যাওয়া।
৪.সাদা স্রাবের সাথে রক্ত যাওয়া।
৫.পানি ভাঙ্গা।
৬.পেটের বাচ্চা নিচের দিকে নেমে যাওয়া।
৭.পিঠে এবং কোমরে ব্যথা হওয়া।
৮.শরীরে অস্বস্তি কাজ করা।
সর্বোপরি গর্ভাবস্থায় মায়েদের সব সময় আল্লাহর ইবাদত, নামাজ পড়া ও কুরআন তেলাওয়াতের মধ্যে থাকা উচিত। কারণ কুরআনি আমল গুলো করার মাধ্যমে সন্তানকে সুস্থ ও সুন্দর এবং চরিত্রবান করে গড়ে তোলা সম্ভব।