ফজরের নামাজের পর কোন সূরা পড়তে হয়

ফজরের নামাজের পর কোন সূরা পড়তে হয়


নামাজ সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদাত। আল্লাহ সমগ্র মুসলিম জাতির ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার উম্মতকে নামাজ কায়েম করার কথা বলেছেন।আর এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার পর নফল হিসেবে আমরা কিছু সূরা বা তাসবিহ পাঠ করতে পারি। তাই আমরা আজ এই পোষ্টের মাধ্যমে ফজরের নামাজের পর কোন সূরা পড়তে হয়, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর কোন সূরা পড়তে হয় বা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর কোন তাসবিহ কতবার পড়তে হয় সে সম্পর্কে জানব।




আমরা আজ এই আর্টিকেলে আলোচনা করব ফজরের নামাজের পর কোন সূরা পড়তে হয়



ফজরের নামাজের পর কোন সূরা পড়তে হয়


ফজরের নামাজ পড়ার পর নির্দিষ্ট কোন সূরা তেলাওয়াত করার কোন হাদিস পাওয়া যায়নি। তবে ফজর নামাজ জামাতে পড়ার পর সূর্যোদায় পর্যন্ত জিকির করার হাদিস পাওয়া গেছে। এই জিকির করা নফল ইবাদতের মধ্যে পড়ে। আর এই নফল ইবাদতের ভিতর সবথেকে শ্রেষ্ঠ ইবাদত হল কুরআন তেলাওয়াত করা।

এ সম্পর্কে ফাজায়েল আমাল হাদীসে এসেছে, আতা বিন আবি রাবাহ (রাঃ) বর্ণনা করে বলেন, আমি শুনেছি যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ”যে ব্যক্তি দিনের শুরুতে সুরা ইয়াসিন তেলাওয়াত করবে তার সব প্রয়োজন পূর্ণ করা হবে”।



পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর কোন সূরা পড়তে হয়




১.ফজরের নামাজঃ ফজরের নামাজ পড়ার পর নির্দিষ্ট কোন সূরা তেলাওয়াত করার কোন হাদিস পাওয়া যায়নি। তবে ফজর নামাজ জামাতে পড়ার পর সূর্যোদায় পর্যন্ত জিকির করার হাদিস পাওয়া গেছে। এই জিকির করা নফল ইবাদতের মধ্যে পড়ে। আর এই নফল ইবাদতের ভিতর সবথেকে শ্রেষ্ঠ ইবাদত হল কুরআন তেলাওয়াত করা।

এ সম্পর্কে ফাজায়েল আমাল হাদীসে এসেছে, আতা বিন আবি রাবাহ (রা.) বর্ণনা করে বলেন, আমি শুনেছি যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ”যে ব্যক্তি দিনের শুরুতে সুরা ইয়াসিন তেলাওয়াত করবে তার সব প্রয়োজন পূর্ণ করা হবে”।


২.যোহরের নামাজঃ জোহরের নামাজের পর নির্দিষ্ট কোন সূরা তেলাওয়াত করার হাদিস পাওয়া যায়নি।তবে জোহরের নামাজ আদায় করার পর সূরা ফাতাহ তেলাওয়াত করা যেতে পারে।

এ সম্পর্কে সহিহ বুখারী হাদিসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কে বলেন, ”আজ রাতে আমার উপর এমন একটি সূরা নাযিল হয়েছে যা আমার কাছে সূর্যালোকিত সব স্থান থেকে উত্তম” তখন তিনি সুরা ফাতহের প্রথম আয়াত তেলাওয়াত করেন।


৩.আসরের নামাজঃ আসরের নামাজ আদায় করার পরও কোন নির্দিষ্ট সূরা তেলাওয়াত করার সুনির্দিষ্ট কোন হাদিস পাওয়া যায়নি। তবে আসরের নামাজ আদায় করার পর সূরা নাবা তেলাওয়াত করা যেতে পারে।

এ সম্পর্কে তাফসীরে কাশশাফ হাদীসে এসেছে, ”যে ব্যক্তি আসরের নামাজ আদায় করার পর সূরা নাবা পাঠ করবে আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন ঠান্ডা পানীয় দ্বারা তৃপ্ত করবেন”।এই হাদিসটি খুবই দুর্বল হাদিস। তবে নফল এবাদত করতে কোন ক্ষতি নেই বরং সাওয়াব পাওয়া যায়। তাই সূরা নাবা তেলাওয়াত করা যেতে পারে।


৪.মাগরিবের নামাজঃ মাগরিবের নামাজ আদায় করার পর সূরা ওয়াকিয়া পড়া যেতে পারে।

এ সম্পর্কে এক হাদিসে এসেছে, হযরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, ”ব্যক্তি প্রতি রাতে সূরা ওয়াকিয়া পাঠ করবে সে কখনো উপবাস থাকবে না”।


৫.এশার নামাজঃ এশার নামাজ আদায় করার পর সূরা মুলক ও সূরা সাজদাহ পাঠ করার কথা হাদিসে এসেছে।তাই এশার নামাজ আদায় করে সূরা মুলক ও সূরা সাজদাহ পাঠ করা যেতে পারে।

এ সম্পর্কে তিরমিজি হাদিসে এসেছে, হযরত জাবের রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ”সূরা মূলক ও সূরা সাজদাহ তেলাওয়াত করা ছাড়া ঘুমাতেন না”।

এছাড়াও তিরমিজি হাদীসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোরআনে এমন একটি সূরা আছে। যার মধ্যে ৩০ আয়াত আছে। আর এই আয়াত গুলো পাঠকারীর জন্য সুপারিশ করবে এবং তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে।



পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর কোন তাসবিহ কতবার পড়তে হয় 



১.প্রত্যেক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ফরজ নামাজের পর ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার আল্লাহু আকবার ও একবার‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির পড়তে হয়।

এ সম্পর্কে সহিহ মুসলিম হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি প্রতি ফরজ নামাজের পর ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার আল্লাহপাক পড়ার পর শততম পূর্ণ করতে নিন্মক্ত দোয়াটি পাঠ করবে,”তার গুনাগুলো যদি সাগরের ফেনারাশির মত অসংখ্য হয় তাহলে তা ক্ষমা করে দেওয়া হয়।”(সহিহ মুসলিম হাদিস নং- ৪৯০৬)


দোয়াটি হলঃ

لَا اِلَهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكَ وَ لَهُ الْحَمْدُ وَ هُوَ عَلَى كُلِّ شَيْئٍ قَدِيْر

বাংলা উচ্চারণঃ ”লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহু হামদ, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির।”

অর্থঃ “আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনি একক, তার কোনো শরিক নেই। রাজত্বও তার। প্রশংসা শুধু তারই। তিনিই সব কিছুর সর্বশক্তিমান।”


২.এছাড়া যদি প্রত্যেক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ ও ৩৩ বার আল্লাহু আকবার পাঠ করবে। তাহলে সে জিহাদ করার সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করবে। 


এ সম্পর্কে সহীহ বুখারী হাদীসে এসেছে, হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বর্ণনা করেন,  দারিদ্র লোকেরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  এর কাছে এসে বলল, সম্পদশালী ও ধনী ব্যক্তিরা তাদের সম্পদের দ্বারা উচ্চ মর্যাদা ও চিরস্থায়ী নিয়ামত নিয়ে আমাদের থেকে এগিয়ে গেলেন। তারা আমাদের মতো সালাত আদায় করছেন, আমাদের মত সিয়াম পালন করছেন,  এবং তাঁরা তাঁদের অর্থ-সম্পদের মাধ্যমে হজ, ওমরাহ, জিহাদ ও সদকা করার মর্যাদাও লাভ করছেন, এ কথা শুনে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি কি তোমাদের এমন কিছু কাজের কথা বলব, যা তোমরা করলে, যারা নেক কাজে তোমাদের চেয়ে অগ্রগামী হয়ে গেছে, তাদের পর্যায়ে পৌঁছতে পারবে। কেউ তোমাদের সমপর্যায়ে উপনীত হতে পারবে না। আর লোকদের মধ্যে তোমরাই হবে উত্তম আমলকারী, তবে যে ব্যক্তি এ ধরনের আমল করবে তার কথা ভিন্ন। 

তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক নামাজের পর ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ এবং ৩৩ বার আল্লাহু আকবার পাঠ করতে বলেন।(সহিহ বুখারি হাদিস নং- ৮৪৩)


৩.সহিহ মুসলিম ও আত-তারগিব হাদিসে এসেছে, প্রত্যেক নামাজের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ এবং শততম পূর্ণ করার জন্য ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পড়াতে পারে।(সহিহ মুসলিম হাদিস নং- ৫৯৬, সহিহ আত-তারগিব হাদিস নং- ১৫৯৩)


৪.প্রত্যেক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর ১০ বার সুবহানাল্লাহ ১০ বার আলহামদুলিল্লাহ ১০ বার আল্লাহু আকবার পড়া যেতে পারে। 


 এ সম্পর্কে তিরমিজি হাদিসে এসেছে, কোন মুসলিম যদি দুটি অভ্যাস আয়ত্ত করতে পারে, তাহলে সে জান্নাতে যাবে। এই দুটি অভ্যাস আয়ত্ত করা খুব সহজ। কিন্তু এই দুটি অভ্যাস অনুশীলনকারীর সংখ্যা কম। তার একটি হলো পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পর ১০ বার সুবহানাল্লাহ ১০ বার আলহামদুলিল্লাহ এবং ১০ বার আল্লাহু আকবার বলা। (সহিহ তিরমিজি হাদিস নং- ৩৪১০)


 ৫.এছাড়াও নাসাই হাদিসে এসেছে, প্রত্যেক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর ২৫ বার সুবহানাল্লাহ ২৫ বার আলহামদুলিল্লাহ ২৫ বার আল্লাহু আকবার এবং একশ পূরণ করার জন্য ২৫ বার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু পাঠ করবে।(সহিহ নাসাঈ হাদিস নং- ১৩৫০)


৬.এছাড়াও প্রতি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ফরজ নামাজের সালাম ফিরানোর পর একবার ”আল্লাহু আকবার” ও তিনবার ”আস্তাগফিরুল্লাহ” পাঠ করার পর একবার ”আয়াতুল কুরসি” পাঠ করবে।


এ সম্পর্কে নাসাই, ইবনে হিব্বান, বুলুগুল মারাম হাদিসে এসেছে, হযরত আবু উমামা (রাঃ) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে কেউ যদি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর ”আয়তুল কুরসি” তেলাওয়াত করে, তার মৃত্যুই তার জন্য জানাতে প্রবেশ করার জন্য বাধা হয়ে থাকে।




সর্বোপরি বেশি বেশি নফল ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়। আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়া যায় এবং পরকালে জান্নাত লাভের পথ সুগম হয়। তাই আমাদের ফরজ নামাজের সাথে সাথে বেশি বেশি নফল ইবাদত করতে হবে।

*

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post