দরুদ শরীফ না পড়লে কি নামাজ হবে
নামাজ ইসলামের পাঁচটি স্তম্বের মধ্যে অন্যতম ইবাদাত। আল্লাহ মুসলিম উম্মার ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। এই নামাজ পড়ার সময় কিছু ফরজ, সুন্নত এবং ওয়াজিব নিয়ম মানতে হয়। কিন্তু আমরা অনেকেই এই সম্পর্কে জানিনা।
এছাড়াও নামাজের ভিতরে দরুদ শরীফ না পড়লে কি নামাজ হবে এ সম্পর্কে অনেকেরই অনেক মতবাদ রয়েছে। তাই আমাদের আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন দরুদ শরীফ না পড়লে কি নামাজ হবে এবংদোয়া মাসুরা পড়া কি ওয়াজিব, তাশাহুদ না পড়লে কি নামাজ হবে, দুরুদ শরীফ পড়ার ফজিলত এবং ছোট দুরুদ শরীফ সমূহ।
আমরা আজ এই আর্টিকেলে আলোচনা করব দরুদ শরীফ না পড়লে কি নামাজ হবে
দরুদ শরীফ না পড়লে কি নামাজ হবে
যেহেতু নামাজের শেষ বৈঠকে দুরুদ শরীফ পড়া সুন্নত। সেহেতু নামাজের শেষ বৈঠকে দুরুদ শরীফ না পড়লেও নামাজ হয়ে যাবে। এর জন্য অতিরিক্ত সাহু সিজদাহ দেওয়ার প্রয়োজন নেই।তবে যদি নিয়মিত সুন্নাত আদায় করা না হয় তাহলে গুনাহ হবে।সুন্নাত হল রাসুল (সাঃ) এর জীবনব্যবস্থা। রাসূল (সাঃ) এর জীবনী অনুসরণ করে প্রত্যেক মুসলিমের চলা উচিত।তাই নামাজের ভিতরে দুরুদ শরীফ পড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত।
এ সম্পর্কে সুনানে দারাকুতনি হাদিসে এসেছে, আবু মাসুদ উকবা ইবনে আমির আনসারী (রাঃ) বর্ণনা করেন, একদিন এক ব্যক্তি রাসুল (সাঃ) এর সামনে এসে বসলেন। তখন তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল আমরা নামাজে সালাত কিভাবে পাঠ করব। তখন রাসূল (সাঃ) কিছুক্ষন নিরবে বসে থাকলেন। তারপর বললেন, তোমরা নামাজের ভিতরে দুরুদ শরীফ পাঠ করো।নিচে দুরুদ শরীফ বাংলা উচ্চারণ সহ অর্থ দেওয়া হলোঃ
اَللّهُمَّ صَلِّ عَلى مُحَمَّدٍ وَّعَلى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدُ، اَللّهُمَّ بَارِكْ عَلى مُحَمَّدٍ وَّعَلى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ।
বাংলা উচ্চারণঃ “আল্লা-হুম্মা ছাল্লি আলা মুহাম্মাদিউঁ ওয়া আলা-আ-লি মুহাম্মাদিন কামা ছাল্লাইতা আলা ইবরা-হিমা ওয়া আলা আ-লি ইবরাহিমা ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ। আল্লা-হুম্মা বা-রিক আলা মুহাম্মাদিউঁ ওয়া আলা-আ-লি মুহাম্মাদিন কামা বা-রাকতা আলা ইবরা-হিমা ওয়া আলা আ-লি ইবরাহিমা ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ।”
অর্থঃ “হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর শান্তি বর্ষণ কর, যেভাবে ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর শান্তি বর্ষণ করেছিলে। নিশ্চয়ই তুমি অতি প্রশংসিত মহিমান্বিত। হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর বরকত দান কর, যেভাবে ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর বরকত দান করেছিলে। নিশ্চয়ই তুমি অতি প্রশংসিত মহিমান্বিত।”
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর উপর সব সময় দুরুদ শরীফ পাঠ করা উচিত।
এ সম্পর্কে সুরা হাশর ৭ নম্বর আয়াতে এসেছে,
وَ مَاۤ اٰتٰىکُمُ الرَّسُوۡلُ فَخُذُوۡهُ ٭ وَ مَا نَهٰىکُمۡ عَنۡهُ فَانۡتَهُوۡا ۚ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ شَدِیۡدُ الۡعِقَابِ ۘ
অর্থঃ “রাসূল তোমাদের যা দেয় তা গ্রহণ কর, আর যা থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও এবং আল্লাহকেই ভয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি প্রদানে কঠোর।”
দোয়া মাসুরা পড়া কি ওয়াজিব
নামাজের শেষ বৈঠকে দোয়া মাসুরা পড়া সুন্নাত অর্থাৎ ওয়াজিব নয়। নামাজের শেষ বৈঠকে দোয়া মাসুরা না পড়লেও নামাজ হয়ে যাবে। এর জন্য অতিরিক্ত সাহু সিজদাহ দেওয়া ওয়াজিব নয়।
তাশাহুদ না পড়লে কি নামাজ হবে
নামাজের দ্বিতীয় রাকাতের বৈঠকে এবং শেষ বৈঠকে তাশাহুদ পড়া ওয়াজিব। কোন কারনে দ্বিতীয় বৈঠকে বা শেষ বৈঠকে তাশাহুদ পড়তে ভুলে গেলে নামাজ শেষে সাহু সিজদাহ দিতে হবে। এই সাহু সিজদাহ দেয়া ওয়াজিব।এছাড়াও যদি তাশাহুদ পড়তে ভুলে যায় এবং সাহু সিজদাহ দেওয়া না হয়। তাহলে পুনরায় নামাজ পড়তে হবে।
দুরুদ শরীফ পড়ার ফজিলত
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর উপর দরুদ পাঠ করার অনেক ফজিলত রয়েছে।
১.যে ব্যক্তি রাসূল (সাঃ) এর উপর একবার দরুদ পাঠ করবে আল্লাহ তা'আলা তার উপর ১০ টি রহমত নাযিল করবেন।
এ সম্পর্কে তিরমিজি হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম বলেছেন, ”যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ পাঠ করে আল্লাহ তা'আলা তার প্রতি ১০ টি রহমত বর্ষণ করে।”
২.রাসূল (সাঃ) এর উপর দরুদ পাঠ করার মাধ্যমে গুনাহ মাফ করানো যায়।
এ সম্পর্কে সুনানে নাসাই হাদীসে এসেছে, আনাস ইবন মালিক (রাঃ)বর্ণনা করেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দুরুদ পাঠ করবে আল্লাহ তা'আলা তার উপর ১০ টি রহমত নাযিল করবেন,১০ টি গুনাহ মিটিয়ে দেবেন এবং তার জন্য ১০ টি মর্যাদা উন্নীত করবেন।
৩.যে ব্যক্তি রাসূল (সাঃ) এর উপর সবসময় দুরুদ পাঠ করে তার জন্য ফেরেশতারা সবসময় দোয়া করতে থাকে।
এ সম্পর্কে ইবনে মাজাহ হাদিসে এসেছে, আমির বিন রাবিআহ(রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূল (সাঃ) বলেন, যখন কোন মুসলিম আমার প্রতি দরুদ পাঠ করে এবং যতক্ষণ সে আমার প্রতি দরুদ পাঠরত থাকে ততক্ষণ ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করতে থাকে। তার পরিমান কমাতেও পারে বা বাড়াতেও পারে।
৪.বেশি বেশি রাসূল (সাঃ) এর উপর দরুদ পাঠ করার মাধ্যমে কেয়ামতের দিন রাসূল (সাঃ) এর নিকটবর্তী হওয়া যায়।
এ সম্পর্কে তিরমিজি হাদিসে এসেছে, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, কিয়ামতের দিন সেই ব্যক্তি আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে যে ব্যক্তি আমার উপর সবথেকে বেশি দুরুদ পড়ে।এজন্য বেশি বেশি রাসূল (সাঃ) এর উপর দুরুদ শরীফ পাঠ করতে হবে। তাই নিম্নে কিছু ছোট দুরুদ শরীফ দেওয়া হল।
ছোট দুরুদ শরীফ সমূহ
صلى الله عليه وسلم
বাংলা উচ্চারণঃ”সল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম।”
অর্থঃ “আল্লাহ তাঁর (মুহা’ম্মদের) প্রতি সালাত (দয়া) ও সালাম (শান্তি) বর্ষণ করুন।”
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ
বাংলা উচ্চারণঃ”আল্লাহুম্মা সল্লি আ’লা মুহা’ম্মাদিওঁ-ওয়া আ’লা আলি মু’হাম্মাদ।”
অর্থঃ “হে আল্লাহ! আপনি মুহা’ম্মদ এবং তাঁর পরিবার-পরিজনদের উপর রহমত বর্ষণ কর।”
اللَّهُمَّ صَلِّ وَسَلِّمْ عَلَى نَبَيِّنَا مُحَمَّدٍ
বাংলা উচ্চারণঃ”আল্লা-হুম্মা সল্লি ওয়া সাল্লিম আ’লা নাবিয়্যিনা মুহা’ম্মাদ।”
অর্থঃ “হে আল্লাহ! আপনি আমাদের নবী মুহাম্মাদের উপর সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন।”
সর্বোপরি রাসূল (সাঃ) এর উপরে উপর দুরুদ না পড়লে আল্লাহর দরবারে কোন দোয়া কবুল হয় না। তাই আমাদের বেশি বেশি রাসূল (সাঃ) এর উপর দরুদ পাঠ করতে হবে।