বৃষ্টির সময় কোন দোয়া পড়লে মনের ইচ্ছা পূরণ হয়

বৃষ্টির সময় কোন দোয়া পড়লে মনের ইচ্ছা পূরণ হয়


বৃষ্টি হলো আল্লাহ তা'আলা এক বিস্ময়কর সৃষ্টি। যা চোখ, শরীর এবং মনকে শীতলতা দান করে।বৃষ্টি জমিকে উর্বর করে। জমিতে নতুন চারা গজাতে সাহায্য করে। পৃথিবীকে সবুজ করে তোলে।     



       اللهم شيبان نافع (আল্লাহুম্মা ছায়্যিবান নাফিয়া)


পবিত্র কোরআনে সুরা বাকারা ২৬৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ তা'আলা বলেছেন, আর যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য ও নিজেদের আত্মা বলিষ্ঠ করার জন্য ধন-সম্পদ ব্যয় করে তাদের উপমা কোনো উচ্চভূমিতে অবস্থিত একটি উদ্যান, যেখানে মুষলধারে বৃষ্টি হয়, ফলে সেথায় ফলমূল জন্মে দ্বিগুণ।



অন্য এক হাদিসে এসেছে, নবী করিম (সা.) বৃষ্টিতে একবার বের হয়েছিলেন এবং শরীরে পানি লাগিয়ে ছিলেন। তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, কেন তিনি এমনটি করেছেন? তখন তিনি বললেন, বৃষ্টিকে আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে বরকত হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সুতরাং বৃষ্টির পানি শরীরে লাগানোর জন্য বৃষ্টির মধ্যে নেমে যাওয়ার দরকার নেই। যদি ঠাণ্ডা লাগার ভয় থাকে। অন্তত দুই এক ফোঁটা পানি শরীরে লাগালে পূর্ণ হয়ে যাবে।


আল্লাহর অফুরন্ত নিদর্শনের মধ্যে বৃষ্টি হলো একটি অন্যতম নিদর্শন। বৃষ্টির মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতে কল্যাণ ও রিযিক এর ব্যবস্থা করেন। বৃষ্টি এলে মানুষের মন প্রফুল্ল হয়ে যায়। আল্লাহর রহমতে প্রকৃতিতে প্রকাশ পায় স্বস্তির ছাপ।


বৃষ্টির মাধ্যমে আল্লাহ তার বান্দাদের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করেন। 

পবিত্র কোরআনে সূরা ওয়াকিয়াহ ৬০ -৭০ নম্বর  আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, তোমরা যে পানি পান করো তা সম্পর্কে তোমরা কি জান, তোমরা কি সেটা মেঘ হতে নামিয়ে আনো, না আমি সেটা বর্ষণ করি? আমি ইচ্ছা করলে তা লবণাক্ত করে দিতে পারি। তবু কেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো না।


উপরোক্ত এই কোরআনের আয়াতগুলোর মাধ্যমে বোঝা যায় বৃষ্টি মানুষের জন্য কত বড় নিযামত ও রহমত। আমাদের উচিত বৃষ্টির জন্য মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া ও দোয়া করা। রাসুল (সা.) তাঁর উম্মতদের বৃষ্টির সময় করণীয় কিছু আমল শিক্ষা দিয়েছেন, সেগুলো পালন করা উচিত। নিচে বৃষ্টির দিনে রাসুল (সা.)-এর কিছু আমল তুলে ধরা হলো—



আল্লাহর রহমত কামনা করা ও বৃষ্টির দোয়া করা


বৃষ্টির সময় আল্লাহর রহমত কামনা করা উচিত। বৃষ্টি এক দিকে যেমন আল্লাহর রহমত অন্যদিকে এর গজবের দিকেও আছে। এই কারণে আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বৃষ্টি দেখলে উপকারী বৃষ্টির জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করতেন। বৃষ্টি আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিনের এক নেয়ামত এবং রহমত। 


নবী করিম (সা.) বৃষ্টির পানি গায়ে লাগাতেন। বর্ষাকালে যখন বৃষ্টি হবে তখন আমরা যেন বৃষ্টিতে ভিজে আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর সুন্নত পালন করি। অন্তত দুই এক ফোঁটা পানি হাতে নিয়ে শরীরে লাগানোর চেষ্টা করবো। ইনশাআল্লাহ! নবী করিম (সা.) এর সুন্নত পালন হয়ে যাবে। আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত রহমতের বৃষ্টির আমলটিও হয়ে যাবে। বৃষ্টির সময় যে বিশেষ দোয়া আল্লাহ তায়ালা কখনোই ফিরিয়ে দেন না। সুতরাং বৃষ্টি বা অতিবৃষ্টিকে ভয় না পেয়ে প্রত্যেক মুসলিমের উচিত এই দোয়া পড়া।


 হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) যখন বৃষ্টি হতো তখন বলতেন, 


اللهم شيبان نافع


উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ছায়্যিবান নাফিয়া। 


অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি এ বৃষ্টিকে প্রবহমান এবং উপকারী করে দাও)। (নাসায়ি, হাদিস : ১৫২৩)



বৃষ্টির সময় উপরোক্ত দোয়াটি পাঠ করে আল্লাহর দরবারে দোয়া করলে আল্লাহ সেই দোয়া ফিরিয়ে দেন না কবুল করে নেন । তাই আমাদের বৃষ্টির সময় বেশি বেশি উপরোক্ত দোয়াটি পড়তে হবে এবং আল্লাহর কাছে দোয়া চাইতে হবে। কারণ এই দোয়া চাওয়ার মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলা তার মনের ইচ্ছা পূরণ করেন।



ঝোড়ো হাওয়া বইলে আল্লাহকে ভয় করা 



হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) আকাশের প্রান্তে মেঘ উঠতে দেখলে যাবতীয় (নফল) ইবাদত ছেড়ে দিতেন, এমনকি তিনি নামাজে থাকলেও।


অতঃপর তিনি বলতেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট এর অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাইছি। ’ যদি বর্ষা হতো তাহলে বলতেন, ‘হে আল্লাহ! বরকতপূর্ণ ও সুমিষ্ট পানি দান করুন। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫১৯৯)


অতিবৃষ্টি থেকে বাঁচতে দোয়া 


বৃষ্টি মানুষের জন্য প্রয়োজন। বৃষ্টি না হলে ফসল ভালোভাবে হয় না তেমনি অতিবৃষ্টি মানুষের জন্য খারাপ অতিবৃষ্টি হলে ফসল নষ্ট হয়ে যায়। মানুষের আরো ক্ষয়ক্ষতি হয়। তাই  অতিবৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য নবীজি আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন। দোয়াটি হল-


‘আল্লাহুম্মা হাওয়ালাইনা ওয়ালা আলাইনা’। 


অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি বৃষ্টি আমাদের আশপাশে (জনবসতিহীন এলাকায়) বর্ষণ করো, আমাদের ওপরে নয়। (নাসায়ি, হাদিস : ১৫২৭)


বৃষ্টির পানি স্পর্শ করা 


হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম, এমন সময় বৃষ্টি নামল। তখন রাসুল (সা.) তাঁর কাপড় খুলে দিলেন। এতে বৃষ্টির পানি (তাঁর শরীরে) পৌঁছল। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! এরূপ কেন করলেন? রাসূল (সা.) বললেন, কারণ এটা তার রবের কাছ থেকে মাত্রই এসেছে। (মুসলিম: ৮৯৮)


বৃষ্টি চলাকালীন সময়ে দোয়া কবুল হয়


যখনই বৃষ্টি শুরু হয় তখনই দোয়া করা উচিত। কারণ বৃষ্টি চলাকালীন সময়ে দোয়া কবুল হয়। এই সময় দোয়া করাও সুন্নত। বিখ্যাত হাদিস গ্রন্থ আবু দাউদ শরিফের ২৫৪০ নম্বর হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত সাহল বিন সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, দুই সময়ের দোয়া কখনো ফেরত দেয়া হয় না। কিংবা তিনি এভাবে বলেছেন যে, দু’টি সময় রয়েছে, যখন দোয়া করলে তা খুব কমই ফেরত দেয়া হয়- 


  • আজানের সময় যে দোয়া করা হয়। 


  • বৃষ্টি চলাকালীন সময়ে যে দোয়া করা হয়।


অন্য বর্ণনায় এসেছে, রণাঙ্গণে শত্রুর মুখোমুখি হওয়া কালের দোয়া। (আবু দাউদ: ২৫৪০)।


সুতরাং একজন খাঁটি মুসলিম হিসেবে আমাদের উচিত যখনই বৃষ্টি নামবে তখন কোনো প্রকারের হা-হুতাশ না করে দোয়া করা। আশা করা যায় মহান আল্লাহ এই দোয়া কবুল করবেন।



বৃষ্টি শেষে দোয়া পড়া 


সহীহ বুখারী ১০৩৮ নম্বর হাদিসে এসেছে, বৃষ্টি শেষে রাসুল (সা.) সাহাবায়ে কেরামদের একটি বিশেষ দোয়া পড়ার প্রতি তাগিদ দিয়েছেন, 

দোয়াটি হলো—

‘মুতিরনা বিফাদলিল্লাহি ওয়া রহমাতিহ’। 

অর্থঃ ‘আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতে আমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছে।  

কারণ মক্কার কাফিররা ভাবত আকাশের বিভিন্ন নক্ষত্র আমাদের বৃষ্টি দেয়। অথচ এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। রাসুল (সা.) বৃষ্টি শেষে এই দোয়া পড়ে এ কথার সাক্ষ্য দিতেন যে মহান আল্লাহই আমাদের বৃষ্টি দেন।


সর্বোপরি আল্লাহ তায়ালা যে ব্যক্তি বা জাতির প্রতি রহমত বর্ষণ করে। তাদের জন্য আল্লাহ বৃষ্টি বর্ষণ করেন। বৃষ্টি হলো আল্লাহর রহমত। তাই আমাদের বৃষ্টির সময় বেশি বেশি দোয়া করতে হবে। আর এই দোয়া করার মাধ্যমেই আল্লাহতালা মনে ইচ্ছা পূরণ করে দেন।

*

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post